Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

৩২ সপ্তাহে নাবালিকার গর্ভপাতে সায় কোর্টের

মুম্বইয়ের ১৩ বছরের ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল তার বাবার বন্ধু। আতঙ্কে গোটা বিষয়টি লুকিয়ে যায় কিশোরী। মেয়ে হঠাৎ মোটা হয়ে যাচ্ছে দেখে অগস্ট মাসে তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যান বাবা-মা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

বত্রিশ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক নাবালিকাকে আজ গর্ভপাতের অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনকারীর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে, এই প্রথম ভ্রূণের এত পরিণত অবস্থায় গর্ভপাতের রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত।

মুম্বইয়ের ১৩ বছরের ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল তার বাবার বন্ধু। আতঙ্কে গোটা বিষয়টি লুকিয়ে যায় কিশোরী। মেয়ে হঠাৎ মোটা হয়ে যাচ্ছে দেখে অগস্ট মাসে তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যান বাবা-মা। তাদের মনে হয়েছিল, মেয়ের হয়তো থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর পর সোনোগ্রাফি করাতে গিয়ে ধরা পড়ে, কিশোরী ২৭ সপ্তাহের গর্ভবতী। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩(২)বি ধারা অনুযায়ী ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ হয়ে গেলে আর গর্ভপাত করানো যায় না। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কিশোরীর পরিবার।

এর পর থানা-পুলিশ করতে গিয়েও বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যায়। বাইকুল্লার একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেয়েটিকে। মুম্বইয়ে টানা বৃষ্টি-বন্যায় মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরিতে দেরি হয়ে যায়। বেশ কিছু ছুটি পড়ে যাওয়ায় আরও পিছিয়ে যায় শুনানির দিনক্ষণ। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে মুম্বইয়ের জে জে হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড সব দিক বিচার করে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়। কিন্তু তত দিনে ৩২ সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে ভ্রূণের। আজ প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে গর্ভপাতের প্রক্রিয়া শেষ করা হোক। সম্ভব হলে, শুক্রবারই। অন্য দুই বিচারপতি অমিতাভ রায় ও এ এম খান্ডিলকর বলেন, ‘‘আবেদনকারীর বয়স বিচার করে এবং যৌন হেনস্থার দরুন সে যে রকম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সে কথা ভেবে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়াই যথার্থ মনে করে আদালত।’’

আরও পড়ুন: গোরক্ষা-হিংসা বন্ধে নির্দেশ

আবেদনকারীর আইনজীবী স্নেহা মুখোপাধ্যায় জানান, আগামিকালই হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুক্রবার হয়তো গর্ভপাত করানো হবে। স্নেহা বলেন, ‘‘এই সন্তানের জন্ম দিলে মেয়েটি যে মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, তা ভয়ঙ্কর। তার গর্ভপাতের ইচ্ছেকেই তাই সমর্থন জানিয়েছে কোর্ট।’’

সম্প্রতি চণ্ডীগড়ের ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীর গর্ভপাতের আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দশ বছরের মেয়েটির শারীরিক অবস্থা বিচার করে সুপ্রিম কোর্ট সে বার জানিয়েছিল, গর্ভপাত ওই নাবালিকা ও ভ্রূণ, দু’জনের পক্ষেই বিপজ্জনক। সম্প্রতি সে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।

আদালতের এ দিনের রায়ে খুশি চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘দারুণ খবর। এ বার গর্ভপাতের আইন বদলের কথাও ভেবে দেখুক সুপ্রিম কোর্ট।’’ যদিও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘৩২ সপ্তাহ খুবই দেরি হয়ে গিয়েছে। আট মাসের ভ্রূণ পরিপূর্ণ। আমি হলে হয়তো অনুমিত দিতে পারতাম না। বিদেশেও ২৪ সপ্তাহের পরে অনুমতি দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে মায়েরও ঝুঁকি থাকে। মা তো নিজেই শিশু।’’

আর এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিপদ কিন্তু দু’দিকেই। ৩২ সপ্তাহ হয়ে যাওয়ার পর একটি ১৩ বছরের মেয়ের প্রসব এবং গর্ভপাত দু’টোই সমান ঝুঁকির।’’ এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকেরাই প্রশ্ন তুলছেন, ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন খেয়াল করল না মেয়েটির পরিবার। কেন তাদের বুঝতে-বুঝতে ২৭ সপ্তাহ হয়ে গেল?

ধর্ষণে অভিযুক্ত ২৩ বছর বয়সি যুবক মেয়েটির বাবার ব্যবসার অংশীদার ছিল। তাদেরই বাড়িতে থাকত। মেডিক্যাল রিপোর্টে সন্দেহ করা হয়েছে, মেয়েটিকে বহু বার ধর্ষণ করেছিল ওই যুবক। আপাতত মুম্বই পুলিশের হেফাজতে রয়েছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE