Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সব রোহিঙ্গাকে সন্ত্রাসবাদী বলা হয়নি, সুর বদলেও আপত্তি বহাল রাখল কেন্দ্র

আজ রোহিঙ্গাদের তরফে প্রবীণ আইনজীবী ফালি নরিম্যান যুক্তি দেন, ভারত সরকার চিরকাল আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বাস্তু, শরণার্থীদের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছে। অগস্ট মাসের ওই চিঠি তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

ছবি: এপি ও ফাইলচিত্র।

ছবি: এপি ও ফাইলচিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫২
Share: Save:

পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন বা বৌদ্ধদের ভারতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেই রোহিঙ্গারা এ দেশে আশ্রয় চাইতে পারেন না— মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদী সরকার এমন যুক্তি দিয়ে বলেছে, এমন বিষয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়। একটির সঙ্গে আর একটির তুলনা চলে না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত অগস্ট মাসে রাজ্য সরকারগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তার বিরোধিতা করে রোহিঙ্গাদের তরফে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। আজ রোহিঙ্গাদের তরফে প্রবীণ আইনজীবী ফালি নরিম্যান যুক্তি দেন, ভারত সরকার চিরকাল আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বাস্তু, শরণার্থীদের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছে। অগস্ট মাসের ওই চিঠি তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

আরও পড়ুন: দিলীপের সফর নিয়ে কি নতুন চাপে গুরুঙ্গরা

প্রধান বিচারপতির এজলাসে দাঁড়িয়ে নরিম্যান নিজেকে ব্রিটিশ অধীনস্থ বর্মা থেকে আসা উদ্বাস্তু পরিচয় দিয়ে বলেন, এ’টি সংবিধানে প্রদত্ত জীবনের মৌলিক অধিকার। যাঁরা নিজের দেশ থেকে প্রাণহানির ভয়ে পালিয়ে এসে শরণ চাইছেন, সেই উদ্বাস্তুদেরও এই অধিকার প্রাপ্য।

২০১৫-তে মোদী সরকারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মীয় হানাহানির ভয়ে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈন ও শিখদের কথা স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল বিজ্ঞপ্তিতে।

নরিম্যানের যুক্তি শুনে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র কেন্দ্রের কাছে জানতে চান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে থাকা মহিলা-শিশু-বৃদ্ধ-অসুস্থ মানুষের বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা সত্যিই যন্ত্রণা ভোগ করছে, তাদের রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কি ভারত পূরণ করতে পারবে?

উত্তরে কেন্দ্র পাল্টা হলফনামা পেশ করে জানায়, আগে কোনও গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে এখন রোহিঙ্গারা বঞ্চনার অভিযোগ তুলতে পারে না। অনুপ্রবেশকারীদের ‘শরণার্থীর’ তকমা দেওয়ার আগে অনেক বিষয় খতিয়ে দেখতে হয়। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক বিষয়, ভৌগোলিক অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নও জড়িয়ে রয়েছে। কেন্দ্রের আইনজীবী তুষার মেটা আদালতে যুক্তি দেন, রোহিঙ্গারা যেখানে আশ্রয় চাইছেন, সেখানে তাঁদের থাকতে দেওয়া হলে এলাকার শ্রমিকদের মজুরি কমে যাবে। স্থানীয়রা সমস্যায় পড়বেন। এর আগে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগাযোগ মিলেছে বলেও তাঁদের আশ্রয় না দেওয়ার যুক্তি দিয়েছিল কেন্দ্র। নরিম্যান বলেন, সবাইকে এক তকমা দেওয়া যায় না। চাপের মুখে আজ কেন্দ্রের যুক্তি, সব রোহিঙ্গাকে সন্ত্রাসবাদী বলা হয়নি।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি আদালতের বিচার্য নয় বলে প্রথমেই আপত্তি তুলেছিল মোদী সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা সরাসরি খারিজ করে দেয়। প্রধান বিচারপতি মিশ্র বলেন, ‘‘গত ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এই ধরনের আর্জি এলে আদালত ধীরেসুস্থেই নিজের বিচারের পরিধি ঠিক করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE