Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Triple Talaq

তিন তালাক সংবিধান বিরোধী, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

তাঁরা ওই প্রথার উপর ছ’মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পক্ষেই ছিলেন। পাশাপাশি তাঁদের মত ছিল, এই বিষয়ে কেন্দ্র নতুন কোনও আইন আনুক। তত দিন স্থগিতাদেশ বহাল থাকুক। কিন্তু, শেষমেশ খেহর এবং নাজিরের মত ৩:২-এ হেরে যায়।

ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট।— ফাইল চিত্র।

ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট।— ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ১০:৫৬
Share: Save:

ভারতীয় মুসলিম সমাজে প্রচলিত তাত্ক্ষণিক তিন তালাক (তালাক-এ-বিদাত) প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেয়। বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতি যদিও এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি। তিন জন বিচারপতি এই রায়ের সপক্ষে মত দিয়েছিলেন। বাকি দুই বিচারপতি ছ’মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে কেন্দ্রকে আইন তৈরির কথা বলেছিলেন। কিন্তু, শেষমেষ সংখ্যাগরিষ্ঠের বিচারেই তালাক-এ-বিদাত অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়।

আরও পড়ুন: ডোকলামের সীমান্ত সমস্যা মিটবে, আশা রাজনাথের

বেশ কিছু দিন ধরেই শীর্ষ আদালতে এই তিন তালাক প্রথা নিয়ে শুনানি চলছে। এ দিন বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, আর এফ নরিম্যান এবং কুরিয়েন জোসেফ তালাক-এ-বিদাতকে ‘অসাংবিধানিক’, ‘ইসলামবিরোধী’ এবং ‘কোরান বিরুদ্ধ’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁদের মতে, এই প্রথা ইসলামে নেই, কোরানেও এর কোনও উল্লেখ নেই। কিন্তু, শরিয়ত্ আইনে এর উল্লেখ রয়েছে। কাজেই দেশের সংবিধানের দাঁড়িপাল্লায় এই আইনকে নিরীক্ষণ করা প্রয়োজন। সে দিক থেকে বিচার করে দেখা গিয়েছে, এই প্রথা সম্পূর্ণ ভাবেই সংবিধান বিরোধী।


যে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ ঐতিহাসিক রায় দিল।

যদিও ওই বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজির তিন তালাক প্রথাকে সংবিধান বিরোধী তকমা দেওয়ার বিরোধী ছিলেন। তাঁদের মতে, ইসলামে যার উল্লেখ রয়েছে, তাকে অসাংবিধানিক দাগিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। তাঁরা ওই প্রথার উপর ছ’মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পক্ষেই ছিলেন। পাশাপাশি তাঁদের মত ছিল, এই বিষয়ে কেন্দ্র নতুন কোনও আইন আনুক। তত দিন স্থগিতাদেশ বহাল থাকুক। কিন্তু, শেষমেশ খেহর এবং নাজিরের মত ৩:২-এ হেরে যায়।

আরও পড়ুন: বিলাসবহুল গাড়িতে চেপে চুরি করতে যেত এই ‘সুপার’ সিঁধেল চোর!

ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত এই প্রথার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছিল শীর্ষ আদালতে। তার প্রেক্ষিতেই বিষয়টির বিচার শুরু করে প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট মামলাকারী এবং বিরোধী অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের বক্তব্য শুনেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্যও শোনেন বিচারপতিরা। গত মে মাসের ১১ তারিখ থেকে শুরু হয় শুনানি পর্ব। টানা ছ’দিন ধরে চলে শুনানি। তার পর গত ১৮ মে এ বিষয়ে রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত।

আরও পড়ুন: মালেগাঁও কাণ্ডে জামিন পুরোহিতের

তিন তালাক ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের বিষয় নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে তিন তালাক প্রথায় আদালতের হস্তক্ষেপ ঠেকানোর শেষ চেষ্টা করেছিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি)। তিন তালাক প্রথার প্রয়োগ মুসলিমদের মধ্যে এমনিতেই কমে এসেছে বলে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে দাবি করেছিলেন। আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে সিব্বল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও সে সব আশঙ্কা উড়িয়ে আজ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। রায় ঘোষণার পর এআইএমপিএলবি জানিয়েছে, পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করতে ১০ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE