একই দিনে সুপ্রিম কোর্টে জোড়া রায়ে স্বস্তি পেলেন রাজনীতিকেরা। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের ‘ক্যানসার’ রুখতে সংসদকেই আইন তৈরি করতে হবে বলে জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। অন্য এক মামলার রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, সাংসদ-বিধায়কদের আদালতে আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করতে কোনও বাধা নেই।
জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী, বর্তমানে কোনও জনপ্রতিনিধির ২ বছর বা তার চেয়ে বেশি সাজা পেলে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ৬ বছর নির্বাচনে লড়তে পারেন না। আইনসভার সদস্যপদও খোয়াতে হয় তাঁকে। কিন্তু ফৌজদারি মামলায় চার্জগঠন হলেই ভোটে লড়া নিষিদ্ধ করা যায়, সে জন্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়-সহ কয়েক জন আবেদনকারী। আজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতি। এই ক্যানসার রোধের জন্য সংসদে আইন তৈরি করা প্রয়োজন। বিচারপতিদের কথায়, ‘‘এমন আইনের জন্য দেশ উদগ্রীব হয়ে আছে। কারণ, রাজনীতির এমন অবস্থা কোনও সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড হিম করে দিতে পারে। কোনও গণতন্ত্রে নাগরিকদের দুর্নীতি নিয়ে মূক-বধির দর্শকে পরিণত করা যায় না।’’ সুপ্রিম কোর্টের মতে, সংসদে এমন আইন পাশ করা উচিত যাতে যে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের চার্জগঠন হয়েছে তাঁদের দলীয় সদস্যপদই খারিজ হয়ে যায়। ওই ব্যক্তিদের সংসদ-বিধানসভায় প্রার্থী করাও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘আমরা নিশ্চিত, গণতন্ত্রের যে শাখার উপরে আইন তৈরির ভার সেই শাখার সদস্যেরা দুর্বৃত্তায়নের ক্যানসার রোধে উদ্যোগী হবেন।’’
আইন বদলের ভার সংসদের উপরে ছা়ড়লেও রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন রুখতে কিছু নির্দেশিকা দিয়েছে বেঞ্চ। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে নির্বাচন কমিশনের ফর্মে তা মোটা হরফে জানাতে হবে। যদি তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের টিকিটে ভোটে লড়েন, তবে ওই মামলার কথা দলকে অবশ্যই জানাতে হবে। মনোনয়ন পেশের পরে জনপ্রিয় সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে প্রার্থী সংক্রান্ত তথ্য অন্তত তিন বার প্রকাশ করতে হবে। প্রার্থীর পাশাপাশি দলকেও এই তথ্য প্রকাশের কাজ করতে হবে। কারণ, প্রার্থীর অপরাধ-যোগ সম্পর্কে তথ্য জানলে তবেই ভোটারেরা সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে পারবেন। বেঞ্চের কথায়, ‘‘ভোটারদের একমাত্র আর্তি সাংবিধানিক ব্যবস্থা অটুট থাক। অর্থ ও পেশীশক্তি যখন সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে তখন গোটা দেশে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।’’
বেঞ্চের মতে, রাজনীতির দূষিত ধারাকে মুক্ত করতে এমন উদ্যোগ নিতে হবে যাতে অপরাধীরা রাজনীতিতে আসার কথা ভাবতে না পারে। বেঞ্চের কথায়, ‘‘দেশের আইন তৈরির ভার যাঁদের উপরে তাঁদের যে কোনও গুরুতর অভিযোগের ঊর্ধ্বে থাকা প্রয়োজন।’’ মামলায় নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন রুখতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। আজ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তবে তাদেরও সংসদে তৈরি আইন মেনে চলতে হবে। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কেন্দ্র ও বিজেপি। এক শীর্ষ সরকারি কর্তার মতে, ‘‘অনেক সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়। সেই বিষয়গুলিও বিবেচনা করতে হবে।’’ বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আমরা সম্মান করি।’’ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের বক্তব্য, ‘‘দুর্বৃত্তায়ন রুখতে সরকার আইন আনলে আমরা সমর্থন করব। কিন্তু এই সরকার তা করবে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ, তাহলে সরকারের পক্ষের সাংসদের সংখ্যা ২৮২ জন থেকে কমে ১৮২ জন হয়ে যাবে।’’
এ দিনই সাংসদ-বিধায়কদের আইনজীবী হিসেবে আদালতে সওয়াল করার বিরুদ্ধে আর্জি খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সংসদ-বিধানসভায় আইনজীবীদের সংখ্যা অনেক। কপিল সিব্বল, পি চিদম্বরম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেক প্রবীণ আইনজীবীই জনপ্রতিনিধি। আবেদনকারী অশ্বিনী উপাধ্যায় জানান, সাংসদ-বিধায়কদের উপরেই রয়েছে আইন তৈরির ভার। সাংসদদের হাতে বিচারপতিদের ইমপিচমেন্টে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। ফলে তাঁদের আদালতে সওয়াল করার ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন রয়েছে। বেঞ্চ জানিয়েছে, সাংসদ-বিধায়কদের আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy