Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কেন্দ্রের কাছে রাফাল-তথ্য চাইল সুপ্রিম কোর্ট

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চের নির্দেশ, রাফাল যুদ্ধবিমানের দাম নিয়ে কিছু জানানোর দরকার নেই। বায়ুসেনার জন্য রাফাল কতখানি উপযোগী, তা-ও ব্যাখ্যা করতে হবে না। কিন্তু ফ্রান্সের দাসো সংস্থা থেকে রাফাল কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে সবিস্তার জানাতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share: Save:

মোদী সরকারের আপত্তি অগ্রাহ্য করে, কেন্দ্রের কাছে রাফাল-চুক্তির সবিস্তার তথ্য চাইল সুপ্রিম কোর্ট।

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চের নির্দেশ, রাফাল যুদ্ধবিমানের দাম নিয়ে কিছু জানানোর দরকার নেই। বায়ুসেনার জন্য রাফাল কতখানি উপযোগী, তা-ও ব্যাখ্যা করতে হবে না। কিন্তু ফ্রান্সের দাসো সংস্থা থেকে রাফাল কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে সবিস্তার জানাতে হবে। তবে বন্ধ খামে।

শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের পরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে টুইট করেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট রাফাল নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছে। এ তো খুবই সহজ। প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে তাঁর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। তবে কাজ শুরু হয়েছে। পুনশ্চ: প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ জন্যই আজ রাতে ফ্রান্স রওনা হচ্ছেন।’’

রাফাল চুক্তি নিয়ে কংগ্রেস দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পরে, এর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ এবং শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চারটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। আজ প্রধান বিচারপতির কাছে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল প্রথমেই দাবি তোলেন, এ সব মামলা শোনারই দরকার নেই। তাঁর যুক্তি, ‘‘এগুলি রাজনৈতিক মামলা। শাসক ও বিরোধী দলের বিবাদের মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মামলা করা হয়েছে। এগুলি আদালতের বিচারাধীন বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক চুক্তিতে আদালতের নাক গলানো ঠিক হবে না।’’

প্রধান বিচারপতি অবশ্য তাতে কান দেননি। বরং তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যদি আমরা শুধু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া জানতে চাই, তা-ও বন্ধ খামে, তা হলে কী বলবেন?’’ বেণুগোপাল যুক্তি দেন, এর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। তাঁকেও সরকার ওই নথি দেখাবে না। বিচারপতিরা জানান, নথি শুধু তাঁরাই দেখবেন। আদালতের সন্তুষ্টির জন্য।

রাহুলের অভিযোগ, ২০১৫-য় ফ্রান্সে গিয়ে মোদী নিজেই রাফাল চুক্তি চূড়ান্ত করেন। তিনিই অনিল অম্বানীর সংস্থাকে রাফাল নির্মাতা দাসো-র বরাত পাইয়ে দেন। তার ফলে বিমান পিছু দামও অনেক বেশি পড়ছে। রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর মেলে, চুক্তি সইয়ের মাসখানেক আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের যুগ্মসচিব তথা অ্যাকুইজিশন ম্যানেজার (এয়ার) যুদ্ধবিমানের দাম নিয়ে লিখিত আপত্তি তুলেছিলেন। তবে প্রতিরক্ষা বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনার জন্য আজ রাতে ফ্রান্সে রওনা হওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করেন, আলোচনায় সময়ে এক জন ভিন্ন মত জানালেও, শেষে সর্বসম্মতিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বস্তুত, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া জানানোরই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

সরকারের জন্য একমাত্র স্বস্তির দিক হল, তথ্য জানানোর নির্দেশ দিলেও শীর্ষ আদালত নোটিস জারি করেনি। চারটি মামলার মধ্যে আজ শুধুমাত্র আইনজীবী এম এল শর্মা ও আইনজীবী বিনীত ধান্ডার আবেদনের শুনানি হয়। শর্মা নরেন্দ্র মোদীর নামেই মামলা ঠুকেছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘এখানে নোটিস জারি হলে প্রধানমন্ত্রীর নামে নোটিস জারি করতে হয়।’’ প্রধান বিচারপতি সেই যুক্তি মেনে নেন।

রবার্ট বঢরার ভগ্নিপতি, কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ তেহসিন পুণাওয়ালাও রাফাল নিয়ে মামলা করেছিলেন। তিনি আজ মামলা তুলে নেন। কংগ্রেস জানিয়েছিল, এই সব মামলার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপিই এর পিছনে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট মামলা খারিজ করে দিলে বিজেপি তা নিয়েই প্রচার করবে। আপ-নেতা সঞ্জয় সিংহও একটি মামলা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Information Rafale Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE