Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জাত-ধর্মের ধুয়ো তুলে ভোট চাওয়া যাবে না: সুপ্রিম কোর্ট

ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া বা ভোট না দিতে প্ররোচিত করাকে দুর্নীতিপূর্ণ আচরণ বলেই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চে চার জন বিচারপতি এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৭
Share: Save:

ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া বা ভোট না দিতে প্ররোচিত করাকে দুর্নীতিপূর্ণ আচরণ বলেই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চে চার জন বিচারপতি এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কেবল প্রার্থী নয়, ভোটারদের ধর্ম-বর্ণের ধুয়ো তুলেও প্রচার করা যাবে না। তবে এই রায় রাজনীতির ময়দানে সত্যিই কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিভিন্ন শিবির।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩(৩) ধারায় ধর্ম, জাতি, ভাষা, সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া অবশ্য এমনিতেই নিষিদ্ধ। কিন্তু এর আগে একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ওই ধারায় কেবল প্রার্থীর ধর্ম, জাতি, ভাষা বা সম্প্রদায়ের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু আজ শীর্ষ আদালত বলেছে— কেবল প্রার্থী নয়, প্রচারে আনা যাবে না ভোটারদের ধর্ম, জাতি, ভাষার কথাও। এমনকী প্রার্থীর এজেন্টের সামাজিক পরিচয়ের জোরেও ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা যাবে না। ১৯৯০ সালে মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে জেতেন বিজেপি নেতা অভিরাম সিংহ। কিন্তু তাঁর হয়ে প্রচারে নেমে প্রমোদ মহাজন, বালসাহেব ঠাকরের মতো নেতারা ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে তাঁর নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দেয় বম্বে হাইকোর্ট। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন অভিরাম। ওই বিজেপি নেতার আর্জি ও এই ধরনের আরও কয়েকটি আবেদনের একই সঙ্গে শুনানি চলছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে।

তবে বেঞ্চের সদস্যরা সকলে কিন্তু ১২৩(৩) ধারার ব্যাখ্যা নিয়ে একমত নন। বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, বিচারপতি এ কে গয়াল ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এখনও মনে করেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ওই ধারায় কেবল প্রার্থীর ধর্ম, জাতি, ভাষা বা সম্প্রদায়ের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাগুরু বিচারপতিরা যেহেতু অন্য মত পোষণ করেছেন, ফলে সেই মতটাই এখন আদালতের মত।

সামনেই উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোট। ওই রাজ্যগুলিতে বরাবরই ধর্ম, জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট হয়। সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই তৈরি হয় প্রার্থী তালিকা। আজ এই রায় শোনার পরে কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, এনসিপি-র মজিদ মেমনের মতো বিরোধী নেতারা নিশানা করছেন বিজেপিকে। তাঁদের দাবি, কিছু দল ধর্ম-জাতকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করছে। এ বার তাতে রাশ টানা যাবে। সিপিআই নেতা ডি রাজার মতে, ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় যথার্থ। তবে ভাষা ও জাতির বিষয়ে কিছুটা সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ, আদিবাসী, দলিত-সহ সমাজের বেশ কিছু অংশ বঞ্চনা ও হিংসার শিকার। এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হয়নি তৃণমূল। বিজেপির মুখপাত্র ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমর সিনহার বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নতুন কথা কিছু বলেনি। এই বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলিকে এখনই মাথায় রেখে চলতে হয়।’’

কিন্তু রায় কার্যকর করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দিহান প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তির মতো অনেকেই। তাঁর কথায়, ‘‘ধর্ম, জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট চাইলে প্রার্থিপদ বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। তারা বড়জোর আদালতে যেতে পারে।’’ প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মতে, এই বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে হলে আইন করে কমিশনকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে। কিন্তু তা করতে ভয় পায় সব দলই। কারণ ধর্ম, জাতপাতের অঙ্ককে অস্বীকার করার ক্ষমতা তাদের নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Religion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE