Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বোম্মাই রায় ফিরে এল মহারাষ্ট্র-রায়ে

কী হয়েছিল এস আর বোম্মাই মামলায়?

এস আর বোম্মাই।—ফাইল চিত্র।

এস আর বোম্মাই।—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

মহারাষ্ট্রের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ হাতিয়ার করল আড়াই দশক আগের ‘এস আর বোম্মাই বনাম ভারত সরকার’ মামলার রায়কেই।

১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ওই মামলায় পরিষদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছিল বিধানসভার সদস্যদেরই। বিচারপতিরা বলেছিলেন, সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে কি না, তা রাজ্যপালের ‘ভাবনা’-র উপরে নির্ভর করে না। তার চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষেই। ‘ফ্লোর টেস্ট’-ই বুঝিয়ে দেবে, সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ না কি সংখ্যালঘু। ওই সাংবিধানিক বেঞ্চের বক্তব্য ছিল, দ্রুত ‘ফ্লোর টেস্ট’-এ গেলে ঘোড়া কেনাবেচার সুযোগও নির্মূল হবে, জয় হবে গণতন্ত্রের।

কী হয়েছিল এস আর বোম্মাই মামলায়? ১৯৮৮ সালের এক রাতে জনতা দলের এক বিধায়ক রাজ্যপালের সঙ্গে হঠাৎ দেখা করে ১৯ জন বিধায়কের সই করা চিঠি তুলে দেন। তার ভিত্তিতেই রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নেন, বোম্মাইয়ের নেতৃত্বাধীন জনতা দল সরকার সংখ্যালঘু। তার ভিত্তিতে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট দেন।

কোর্টের আরও পর্যবেক্ষণ

• এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আদালতের এক্তিয়ার এবং সংসদের স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘদিন দ্বন্দ্ব চলেছে।
• এটা সেই ধরনের মামলা, যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নাগরিকের সুশাসন পাওয়ার অধিকারকে রক্ষা করতে আদালত বসেছে।
• এই অন্তর্বর্তী সময়ে আদালতের দায়িত্ব হল, সব পক্ষের দাবি বিবেচনা করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সাংবিধানিক নৈতিকতাকে রক্ষা করা।
• প্রাতিষ্ঠানিক শালীনতা এবং ক্ষমতার বিভাজনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়
বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ শেষ ধাপ।

জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই রাষ্ট্রপতি শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে কর্নাটক হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয়। ১৯৮৯ সালে বোম্মাই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। গঠিত হয় নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। ১৯৯৪ সালে সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়। সংসদীয় রাজনীতি ও সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসেও এই রায় চিহ্নিত হয় ‘মাইলফলক’ হিসেবে।

মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাইয়ের ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল, এ বার মহারাষ্ট্রেও কার্যত তার পুনরাবৃত্তি হয়। বিজেপিকে সমর্থনের নমুনা হিসেবে এনসিপি বিধায়কদের সই করা যে কাগজ অজিত পওয়ার দিয়েছিলেন, তা খারিজ করে বিধায়কেরাই জানান, অন্য কারণে আগেই সই করানো হয়েছিল ওই কাগজে। কাকভোরে দেবেন্দ্র ফডণবীসের শপথগ্রহণের পরে তাঁকে বিধানসভায় আস্থা ভোট নেওয়ার ব্যাপারে সময়সীমাও দেননি রাজ্যপাল কোশিয়ারী। এর ফলে বিধায়ক কেনাবেচার বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয় বলে চর্চা শুরু হয়। আজ সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ জানায়, এই পরিস্থিতিতে ‘ফ্লোর টেস্ট’ যত দেরি হবে, বিধায়ক কেনাবেচার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা জরুরি। যে কারণে বোম্মাই মামলার রায় বার বার ফিরে এসেছে মহারাষ্ট্র মামলার বিচারপতি এন ভি রামানা, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার ১৯ পাতার রায়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE