Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রামমন্দির তৈরির বাধা সরাল কোর্ট

গত ৯ নভেম্বর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি রামলালার হাতে যাবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

আরও একবার অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির তৈরির পথে বাধা সরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

অযোধ্যা নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যালোচনা চেয়ে যাবতীয় আর্জি আজ সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। শীর্ষ আদালতের মতে, কোনও আর্জিতেই সারবত্তা নেই। যার অর্থ, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি নিয়ে শীর্ষ আদালতের আগের রায়ই বহাল রইল।

গত ৯ নভেম্বর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি রামলালার হাতে যাবে। সেখানে মন্দির তৈরি হবে। মসজিদ তৈরির জন্য বিকল্প হিসেবে ৫ একর জমি বরাদ্দ করার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।

এই রায়ের পর্যালোচনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে ১৮টি পিটিশন জমা পড়ে। তার মধ্যে ৯টি পিটিশন ছিল মূল মামলায় অংশগ্রহণকারীদের তরফ থেকে। বাকিগুলি তৃতীয় পক্ষের। এর মধ্যে ৪০ জন শিক্ষাবিদ, মানবাধিকার কর্মীর আর্জিও ছিল। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রে ধাক্কা দিচ্ছে। আজ প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদের চেম্বারে আর্জির শুনানি হয়। গগৈ অবসর নেওয়ায় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দেন বিচারপতি সঞ্জীব খন্না।

আদালতের বিচার্য বিষয় ছিল, রায় পর্যালোচনার আর্জিগুলি বিবেচনা করা হবে কি না। বিবেচনা করা হলে প্রকাশ্য আদালতে তার শুনানি হবে কি না। আজ বিচারপতিরা শুধুমাত্র মূল মামলার শরিকদের আর্জিই খতিয়ে দেখেছেন। বাকিদের আর্জি খারিজ করে দিয়ে জানান, তাঁরা এ বিষয়ে আর কোনও মামলা করতে পারবেন না।

সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের জাফরায়েব জিলানি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা প্রবীণ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করব।’’ জমিয়তের প্রধান আর্শাদ মাদানি বলেন, ‘‘আমরা ব্যথিত। আদালত মেনে নিয়েছিল, বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ কাজে জড়িতদের দোষীও বলেছে। তা সত্ত্বেও তাদের পক্ষেই রায় দিয়েছে।’’

স্বাভাবিক ভাবেই এই রায়ে খুশি রামজন্মভূমি ন্যাসের প্রধান নৃত্যগোপাল দাস। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব বাধা সরে গেল। রামমন্দির সব আইনি জটিলতা থেকে মুক্তি পেল।’’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র শরদ শর্মার মন্তব্য, ‘‘রায় পর্যালোচনার আর্জি জানিয়ে ল’ বোর্ড নিজেরাই নিজেদের মুখোশ খুলে ফেলেছে। রায়ের আগে ওরাই বলেছিল, আদালত যা নির্দেশ দেবে, তা মেনে নেওয়া হবে।’’

রায় পর্যালোচনার আর্জি জানিয়ে জমিয়তে-উলেমা-ই-হিন্দ বলেছিল, যদি বাবরি মসজিদ ধ্বংস না হতো, তা হলে এখন আদালতের মন্দির তৈরির নির্দেশ পালনের জন্য মসজিদ ভাঙতে হত। আদালত মসজিদ ভাঙার অপরাধীদেরই পুরস্কৃত করেছে। ফের ওই জমিতে বাবরি মসজিদ তৈরির নির্দেশ দিলেই ন্যায় হতে পারে। সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের যুক্তি ছিল, হিন্দুদের দখলে জমি ছিল বলেই তাদের হাতে জমি তুলে দেওয়া যায় না। কারণ আদালতের রায়েই বলা হয়েছে, ওই মসজিদে ১৯৪৯ পর্যন্ত মুসলিমরা প্রার্থনা করেছেন। উল্টো দিকে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার দাবি ছিল, মসজিদ তৈরির জন্য জমি দেওয়ার নির্দেশ খারিজ করা হোক। রায় থেকে বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যও মুছে দেওয়ার আর্জি জানায় মহাসভা। যুক্তি ছিল, এই সব মন্তব্য বাবরি মসজিদ ভাঙায় অভিযুক্তদের বিচারে প্রভাব ফেলবে।

আজই ঝাড়খণ্ডে ভোটের প্রচারে গিয়ে রামমন্দির প্রসঙ্গ টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘ইচ্ছে করে রামজন্মভূমি বিতর্ক বহু যুগ ধরে ঝুলিয়ে রেখেছিল কংগ্রেস। জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলি তাদের কাছে গৌণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE