Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জুজু কাটবে, সিভি নেওয়া হবে তো!

ছ’মাস পরে নামী সংস্থার মোটা মাস মাইনের চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করতে বাধ্য হয়েছিলেন বছর চব্বিশের এই যুবক।

উল্লাস। ছবি: পিটিআই

উল্লাস। ছবি: পিটিআই

গার্গী গুহঠাকুরতা
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩২
Share: Save:

স্কুল, কলেজেও সহ্য করতে হয়েছে টিকা-টিপ্পনি। তবুও সেখানে গুটিকয়েক বন্ধুকে আঁকড়ে নিজের মতো করেই দিন কাটিয়েছেন শৌভিক। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরিতে ঢুকে সব গুলিয়ে গেল। হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গি থেকে পোশাকের রং- কিছুই এড়াত না সহকর্মীদের চোখ। ক্যান্টিনে খাওয়ার সময়ে শৌভিকের কানে উড়ে আসত নানান মন্তব্য। অনেকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতেন, একেবারে ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্ন। ছ’মাস পরে নামী সংস্থার মোটা মাস মাইনের চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করতে বাধ্য হয়েছিলেন বছর চব্বিশের এই যুবক।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে কর্পোরেট জগতের এই চেনা ছবি বদলাবে কি?

না এবং হ্যাঁ— দুই উত্তর দিলেন নরেন কৃষ্ণা। যাঁর চাকরির পোর্টালে গত ছ’মাস ধরে মাসে দশ থেকে পনেরোটি ‘সিভি’ জমা পড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘রায়ের কারণে আইনি জুজুর ভয় কাটবে ঠিকই, তাই হয়তো চেনা ছবি বদলাতে পারে। কিন্তু মনের জড়তা দূর না হলে শৌভিকের মতো আরও অনেকেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হবেন।’’ সে ক্ষেত্রে এই মানসিক বাধা কাটানোর দায় সংস্থার কর্তৃপক্ষের উপরেই বর্তায় বলে দাবি তাঁর। শুধু সমকামী-রূপান্তরকামীদের চাকরি দিলেই হবে না বলে মনে করেন নরেন। তাঁদের প্রতি অন্য কর্মীদের স্বাভাবিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়ও সংস্থার।

সে দায়ের কথা মেনে নিয়েছে রয়্যাল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ড (আরবিএস), গোদরেজ, আইবিএম, এএনজেড, গুগল ইন্ডিয়া, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, গোল্ডম্যান স্যাক্স, অ্যাকসেঞ্চার-সহ বেশ কিছু সংস্থা। তৈরি হয়েছে সকলকে নিয়ে চলার জন্য ‘ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইনক্লুসিভিটি’ কর্মসূচি। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পরে আরবিএস-এর মানবসম্পদ প্রধান (ইন্টারন্যাশনাল হাব) অনুরঞ্জিতা কুমার বলেন, ‘‘নিজের শর্তে বাঁচার অধিকার সকলের আছে। কাজের জায়গায় যৌন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সংস্থাদেরই। কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকারের দাবি ওঁদেরও আছে।’’

আরও পড়ুন: সমাজের চোখরাঙানি থামবে কবে

যেমন এই অধিকারের মধ্যেই পড়ে কর্মী ও তাঁর সমকামী সঙ্গীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধাও। আরবিএস ও গোদরেজ আগেই এই সুবিধা চালু করেছে। গোদরেজের এক মুখপাত্র জানান, কর্মীর স্ত্রী বা স্বামীর যা যা সুবিধা সংস্থা দেয়, একই সুযোগ-সুবিধা যৌন সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজ্য। তার মধ্যে রয়েছে জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমাও।

শুধুই ওঁদের ভালর জন্য নয়। সংস্থার নিজস্ব প্রয়োজনেও যৌন সংখ্যালঘুদের মূলস্রোতে ধরে রাখা জরুরি বলে মনে করেন ময়ঙ্ক ভরদ্বাজ। তিনি সদ্য যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য নির্দিষ্ট চাকরির পোর্টাল চালু করেছেন। ময়ঙ্কের মন্তব্য,‘‘ দক্ষতায় ওঁরা কারও চেয়ে কম নন। এঁদের কাজে লাগালে আখেরে সংস্থারই লাভ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Homosexuality Article 377 Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE