ফাইল চিত্র।
সাড়ে ন’বছর আগে নয়ডার এক জোড়া খুনের ঘটনা তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল গোটা দেশে। সেই আরুষি-হেমরাজ হত্যাকাণ্ডে সিবিআই আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত তলোয়ার দম্পতিকে আজ মুক্তি দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। বিচারপতি বি কে নারায়ণ এবং এ কে মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, সিবিআইয়ের পেশ করা তথ্যপ্রমাণ গোটা ঘটনাপ্রবাহের একটা অংশ মাত্র। আরুষির বাবা-মা রাজেশ এবং নূপুর তলোয়ারকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যা যথেষ্ট নয়। আগামিকাল গাজিয়াবাদের দাসনা জেল থেকে মুক্তি পাবেন তলোয়ার দম্পতি।
২০০৮-এর ১৬ মে-র রাত। উত্তরপ্রদেশের নয়ডার জলবায়ু বিহারে নিজের ফ্ল্যাটের নিজের ঘরে খুন হয় আরুষি তলোয়ার। বছর চোদ্দোর কিশোরীর গলা কাটা ছিল। আরুষির চিকিৎসক বাবা রাজেশ তলোয়ার এবং মা নূপুর দাবি করেছিলেন, সকালে উঠে মেয়ের ঘরে ঢুকে তাঁরা আরুষির মৃতদেহ আবিষ্কার করেন। প্রথমেই তলোয়ার দম্পতি খুনের দায় চাপিয়েছিলেন বাড়ির পরিচারক হেমরাজের উপর। ঘটনার পর থেকেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ প্রথমে হেমরাজকেই অপরাধী মনে করে তাঁর খোঁজ শুরু করে। কিন্তু দু’দিনের মাথায় ওই ফ্ল্যাটেরই ছাদ থেকে মেলে হেমরাজের মৃতদেহ।
তলোয়ার-কাণ্ড এক নজরে
১৬ মে, ২০০৮: বেডরুমে ১৪ বছরের আরুষির মৃতদেহ। পুলিশের সন্দেহ নিখোঁজ পরিচারক হেমরাজকে।
২২ মে, ২০০৮: দিল্লি পুলিশের ধারণা, সম্মানরক্ষায় খুন, জড়িত পরিবার।
২৩ মে, ২০০৮: মুখ্য অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার আরুষির বাবা, রাজেশ তলোয়ার।
২৩ মে, ২০০৮: মুখ্য অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার আরুষির বাবা, রাজেশ তলোয়ার।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন তদন্তভার। ২০০৮-এর ১ জুন জোড়া খুনের অভিযোগে রাজেশকেই গ্রেফতার করে সিবিআই। তাদের দাবি ছিল, হেমরাজকে আরুষির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলার পরে রাজেশই সম্মানরক্ষার্থে খুন করেছেন দু’জনকে। গোয়েন্দারা যুক্তি দেন, রাজেশের ব্যবহার করা ১২টি গলফ ক্লাব-এর মধ্যে দু’টিকে তাঁরা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিষ্কার অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন। যা থেকে প্রমাণ হয় যে, ওই দু’টি গলফ ক্লাব দিয়েই মারা হয়েছে আরুষি-হেমরাজকে। এবং খুনের পরে সেগুলিকে পরিষ্কার করা হয়েছে। গোয়েন্দারা আরও বলেন, স্বামীকে জোড়া খুনে ‘যোগ্য মদত’ দিয়েছেন নূপুরও। কিছু দিন পরে নূপুরও গ্রেফতার হন।
আরও পড়ুন:খালি পেটের যন্ত্রণা বাড়ছে ভারতে
শুধু তলোয়ার দম্পতিই নন। সিবিআইয়ের নজরে ছিলেন আরও ৩ সন্দেহভাজন। রাজেশের ক্লিনিকের সহকারী কৃষ্ণ ও হেমরাজের আরও দুই নেপালি সঙ্গী রাজ এবং বিজয়। কৃষ্ণকে গ্রেফতারও করা হয়। পরে তদন্তকারীরা দাবি করেন, ওই তিন জনের বিরুদ্ধে নার্কো পরীক্ষাতেও এমন কিছু মেলেনি, যা থেকে তাঁদের অপরাধী বলে সাব্যস্ত করা যায়। ২০১৩-র নভেম্বরে মেয়ে আর পরিচারককে জোড়া খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন তলোয়ার দম্পতি। গাজিয়াবাদের বিশেষ সিবিআই আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হয় দু’জনের।
আজ হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সিবিআই সর্বোচ্চ আদালতে যাবে কি না, জানা যায়নি। তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, তারা রায়ের প্রতিলিপি পুরোটা পড়ে তবেই আগামী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু হত্যাকারী কে, হাইকোর্টের রায়ের পরে আঁধারেই রয়ে গেল সেই রহস্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy