অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতি ও বিজয় মাল্যের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠন করার সিদ্ধান্ত নিল সিবিআই।
সম্প্রতি ভিভিআইপি কপ্টার ঘুষ কাণ্ডে ইতালির আদালতের রায়ে ভারতের এক পরিবারের নাম উঠে আসে। বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, নাম না করে দেশের গাঁধী পরিবারকেই বোঝাতে চেয়েছে ইতালির আদালত। বিষয়টি নিয়ে সংসদের শেষ অধিবেশনে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি ও কংগ্রেস। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতে চাইছে দাবি করে পথে নামেন সনিয়া গাঁধী। এই মামলায় জড়িত কাউকেই রেয়াত করা হবে না বলে জানিয়ে দেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার।
ভিভিআইপিদের জন্য ১২টি হেলিকপ্টার কিনতে ভারতের সঙ্গে ইতালীয় সংস্থা ফিনমেকানিকা-র ব্রিটিশ শাখা সংস্থা অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডের ৩৬০০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। অভিযোগ ওঠে, বিদেশি ওই সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিতে অর্থের বিনিময়ে সক্রিয় ছিল কয়েকটি ভারতীয় সংস্থা। ২০১৩ সালে ওই দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে খোদ প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগী ও তাঁর তিন পিসতুতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে। তদন্তে নামে সিবিআই ও ইডি। পরে ওই মামলায় গ্রেফতার হন প্রাক্তন বায়ুসেনা এস পি ত্যাগী।
ইতালির আদালত ওই মামলায় ভারতীয় পরিবারের নাম নেওয়ার পরেই রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তৎপর হন বিজেপি নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, এই মামলায় এখন রাঘববোয়ালকেই ধরতে চাইছে সরকার। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বফর্সে যা করা যায়নি, তা এ বারে হবে বলেই আশা করছে দল। সূত্রের বক্তব্য, সেই লক্ষ্যেই তদন্তের কাজে অগ্রগতি আনতে এসআইটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
এই পদক্ষেপ করে কেন্দ্র গাঁধী পরিবারকেই চাপে ফেলতে চাইছে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিশেষ দলের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস অফিসার রাকেশ আস্থানাকে। ১৯৮৪ ব্যাচের ওই অফিসার মোদীর আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত। এর আগে ২০০২ সালে গোধরায় সাবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লাগার ঘটনায় গুজরাত সরকারের নিয়োগ করা বিশেষ দলের প্রধান ছিলেন তিনি। মোদীর আস্থাভাজন ওই অফিসারকে নিয়োগ করার অর্থ হল তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত থাকবে সরকার। দ্বিতীয়ত, ২০০৪ সালে এই কপ্টার কেনা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে সে সময়ে বর্তমান সিবিআই প্রধান অনিল সিন্হা সরকারের স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি-র সদস্য ছিলেন। ফলে তদন্তের ক্ষেত্রে তাঁর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিশেষ দল গঠন করে সেই প্রশ্ন এড়ানোর চেষ্টা করল কেন্দ্র।
আবার বিজয় মাল্যের ক্ষেত্রে নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই সরকার বিশেষ দল গড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, বিজয় মাল্যের দেশ ছাড়়ার পিছনে শাসক দলের হাত ছিল বলে দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে নেওয়া প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ ইচ্ছাকৃত ভাবে শোধ না করার মামলা ঝুলছে মাল্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সিবিআই বা ইডি এখন জোরকদমে তদন্ত করলেও এক সময়ে বিজেপির চাপেই তদন্ত শ্লথ গতিতে চলছিল। গত ২ মার্চ মাল্য দেশ ছাড়েন। বিরোধীদের অভিযোগ, মাল্য দেশ ছাড়ার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন সেই তথ্য সরকারের কাছে থাকা সত্ত্বেও তাঁর পাসপোর্ট বাতিল হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy