ডান হাতের কালি তুলে ফেলা না কি বাঁ হাতের খেল!
ভুতুড়ে ভোটের মতো ভুতুড়ে নোট জমা বন্ধ করতে আঙুলে কালি লাগানো হচ্ছে শুনে হাসতে হাসতে এমনই দাবি করছেন একাধিক নেতা। ভোট-করানোর জন্য রাজনীতির ময়দানে যাঁদের বিলক্ষণ ‘সুনাম’ ছিল! হাসতে হাসতে সিপিএমের তেমনই এক নেতা বললেন, ‘‘ওই কালি তুলে ফেলা এমন কিছু কঠিন নয়।’’
কী ভাবে? দীর্ঘদিন মাঠে-ময়দানে দাঁড়িয়ে ‘ভোট করানো’-র অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের ক্যাডাররা নিজেদের ভোট দিয়ে তার পর অন্যের হয়ে ভোট দিতে যেত। বলতাম, প্রথম বার কালি লাগানোর আগে আঙুলে গ্লিসারিন লাগিয়ে নিবি। তা হলে চামড়ায় কালি বসতে পারবে না। দাগ তোলা সহজ হবে। বেরিয়ে এসে আঙুলে টুথপেস্ট ঘষে দিতাম। কালির দাগ হালকা হয়ে যেত।’’
ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন ছোট হচ্ছে না কেন, জানতে গোয়েন্দা লাগিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। গোয়েন্দারা জানান, পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার বাতিল নোট জমা করতে কালো টাকার মালিকরা লোক ভাড়া করছেন। সেই ভাড়া করা লোকেরাই এসে ব্যাঙ্কে ভিড় করছেন। একই লোক সারা দিন ধরে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঘুরে ঘুরে নোট বদল করে যাচ্ছেন। তাই ব্যাঙ্কের সামনে সারা দিনই লম্বা লাইন লেগে থাকছে। গোয়েন্দাদের থেকে এমন রিপোর্ট পাওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদী তাঁর দফতর ও অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে
ভূত তাড়ানোর ওঝা খুঁজতে বসেন। ঠিক হয়, ভুতুড়ে নোট জমা বন্ধ করতে ডান হাতের আঙুলে কালি লাগিয়ে দেওয়া হবে।
দাওয়াইয়ে কাজও হয়েছে। নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই দিল্লির রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা সংসদ মার্গে স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে সাপের মতো আঁকাবাঁকা লম্বা লাইন পড়ছিল। বুধবার থেকে নোট বদলে কালি লাগানো শুরু হয়। বৃহস্পতিবার থেকে ভিড় কমতে শুরু করে। শুক্রবার লাইন পুরোপুরি উধাও। এখন কেউ একবারই ২০০০ টাকার অচল নোট বদলাতে পারবেন। আঙুলে কালি থাকলে আর নোট বদলানো যাবে না। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ চাইছেন, সেটাও বন্ধ করে দিতে। বাতিল ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট থাকলে তার সবটাই অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে।
কারণ? আঙুলের কালি তুলেও বারবার একই লোক নোট জমা করতে আসতে পারে বলে আশঙ্কা?
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পাশাপাশি স্টেট ব্যাঙ্কের যে সব শাখায় বুধবার থেকেই কালি লাগানো শুরু হয়, সেখানে ভিড় সামলানোর দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা বলছেন, নোট বদলের পরে অনেককেই দেখা গিয়েছে, আঙুলে গ্লিসারিন বা নানা রকম রাসায়নিক ঘষছেন। কোনও কোনও মহিলা নেলপালিশ রিমুভার ঘষেও কালি তোলার চেষ্টা করেছেন। পুলিশের ধমক খেয়ে কেউ দাবি করেছেন, সংসারের প্রয়োজনে এখনই নগদ দরকার। তাই ফের টাকা বদলাতে হবে।
কালি তোলার উপায় যে অনেকেই খুঁজছেন, তার প্রমাণ যথেষ্ট। গুগলে এখন ‘হাউ টু রিমুভ’ লিখলেই তার পরে ‘ইনডেলিয়েবল ইঙ্ক’ আপনা-আপনি চলে আসছে! গুগলের পরিসংখ্যান বলছে, কী ভাবে আঙুলের কালি তোলা যায়, তার উপায় বের করতে গত কয়েক দিনে খোঁজখবর হু হু করে বেড়েছে। সিপিএমের সেই নেতা বলছেন, ‘‘গুগল কী জানে! যে কোনও পার্টির ক্যাডাররা তার থেকে বেশি জানে! প্রথম কথা হল, কালি শুকোনোর আগেই জামাকাপড়ে মুছে ফেলা। তার পর টুথপেস্ট, দেশলাইয়ের বারুদ— কত রকমের টোটকা রয়েছে!’’
আর কী দিয়ে দাগ তোলা যায়? দাগ কি শুধুই হালকা হবে না কি পুরোপুরি উঠে যাবে?
সিপিএমের ওই নেতার সহাস্য জবাব, ‘‘অনেক কিছুই তো বলে দিলাম। বাকিটা তৃণমূলের মুকুল রায়ের থেকে জেনে নিন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy