হায়দর আলি খান।
গত বছর স্বাধীনতা দিবসে দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠা অসমের দক্ষিণ শালমারা নসকরা স্কুলের ছাত্র হায়দর আলি খানের নাম নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায় ওঠেনি। আপাতত তাই অসম তথা ভারতের নাগরিক হিসেবে তার নামটাই নেই। কিন্তু সেই হায়দরের সৌজন্যেই গোটা স্কুলের ছাত্ররা শিক্ষামূলক ভ্রমণে যেতে চলেছে।
হায়দর ও তার বন্ধু জিয়ারুলের গলা জলে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে স্যালুট ঠোকার ছবি দেশে ভাইরাল হয়েছিল। শিক্ষক মিজানুর রহমানের তোলা সেই ছবির সূত্র ধরেই নসকরা নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আজও সকাল থেকে বিভিন্ন উৎসবের মাধ্যমে ওই স্কুলের মাঠে তোলা হয় জাতীয় পতাকা। পতাকা তোলেন স্কুল পরিদর্শক আমির হামজা এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নৃপেন রাভা। চতুর্থ শ্রেণির হায়দর, জিয়ারুলরাও সেখানে হাজির ছিল। হায়দরও সকলের সঙ্গে ভাগ করে খেয়েছে চকলেট, মিষ্টি। গলা মিলিয়েছে জাতীয় সঙ্গীতে।
দেশপ্রেম: নসকরা স্কুলের মাঠে তোলা হচ্ছে জাতীয় পতাকা। ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে হায়দর আলি খানও (সাদা বৃত্তে)। ছবি: মিজানুর রহমান
আনন্দের মধ্যেও নাগরিক পঞ্জিতে নাম না থাকায় হায়দর কিছুটা যেন মনমরা। এনআরসি সেবা কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছিল, তার জন্মের শংসাপত্রে সম্ভবত গোলমাল আছে। গ্রামে বহু ক্ষেত্রেই হাসপাতালে প্রসব হয় না। পরে জন্মের শংসাপত্র সংগ্রহ করেন। তাতেই কোনও সমস্যা হয়ে থাকবে। এ সব জেনে হায়দরকে শিক্ষকেরা ভরসা দিয়েছেন, ২০ অগস্ট থেকে নাম তোলার ফর্ম বিলি হবে। এ বার তাকে ও তার মাকে আবেদনপত্র পূরণ করার কাজে তাঁরাই সাহায্য করবেন।
আরও পড়ুন: পরের ১৫ অগস্ট এ দেশ তার থাকবে তো? দুরুদুরু বুকেই পতাকা তুলল সেই হায়দর
মিজানুরবাবু জানাচ্ছেন, ঝাড়খণ্ড থেকে বিশ্ববিজয় সিংহ নামে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি নসকরা স্কুলের দেশপ্রেমে মুগ্ধ। তাই স্কুলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে চান। কিন্তু এই বছরই নিম্ন প্রাথমিক স্কুলটি মিশে যাচ্ছে পাশের মধ্য ইংরেজি স্কুলে। তাই আলাদা করে নসকরা নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের অস্তিত্ব থাকছে না। মিজানুরবাবু তাই প্রস্তাব দেন, স্কুল না থাকলেও ছাত্র ও শিক্ষকেরা তো থাকছেনই। ওই টাকায় সকলকে নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণ করা যেতে পারে। এই এলাকার মানুষকে দু’ঘণ্টা নদী পার করে ধুবুরি আসতে হয়। গরিব ছাত্রদের অনেকেই বেড়ানো দূরের কথা, ধুবুরির বাইরে অন্য কোথাও যায়নি। তাই ওই টাকা
পেলে সকলকে নিয়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া যাবে।
রাজি হয়েছেন বিশ্ববিজয়বাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy