Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

কেন খুন হতে হল এই ‘মিসেস ইন্ডিয়া আর্থ’-এর ফাইনালিস্ট শৈলজাকে?

দ্বিতীয় মোবাইলটি থেকেই শৈলজা-সহ এক ডজন মহিলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন নিখিল। চালাতেন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং। করতেন ভিডিও কল, চ্যাট।

শৈলজা দ্বিবেদী। -ফাইল চিত্র।

শৈলজা দ্বিবেদী। -ফাইল চিত্র।

সিজার মন্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ১৬:১২
Share: Save:

শুধুই শৈলজা নন। অন্তত এক ডজন মহিলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন সহকর্মীকে খুনের ঘটনায় ধৃত সেনা মেজর নিখিল হান্ডা। তাঁদের মধ্যে অন্তত চার জনের সঙ্গে শৈলজার মতোই ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল নিখিলের। আর তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন কোনও না কোনও সেনাকর্তার স্ত্রী। যাঁদের স্বামীরা নিখিলের ঊর্ধ্বতন অফিসার। আর তাঁরা প্রত্যেকেই ডিমাপুরেই কর্মরত। নিখিলের ছিল দু’টি মোবাইল। তার একটির অস্তিত্ব নিখিলের স্ত্রী জ্যোতিরও জানা ছিল না।

তদন্তে নেমে দিল্লির পুলিশ কর্তারা জানতে পেরেছেন, ওই দ্বিতীয় মোবাইলটি থেকেই শৈলজা-সহ এক ডজন মহিলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন নিখিল। চালাতেন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং। করতেন ভিডিও কল, চ্যাট। নিখিলের সঙ্গে আলাপ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই স্ত্রী ডিমাপুর থেকে দিল্লিতে বদলি হয়ে যান মেজর অমিত দ্বিবেদী। স্ত্রী শৈলজাও চলে যান দিল্লিতে। কিন্তু তার পরেও হোয়াটসঅ্যাপে শৈলজার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন নিখিল।

পুলিশি জেরায় নিখিল জানিয়েছেন, খুব অদ্ভুত ভাবেই নাকি শৈলজার সঙ্গে আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতা হয় নিখিলের। ২০১৫ সালে ডিমাপুরে সেনাশিবিরে অফিসার এবং তাঁর পরিবারদের বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান হয়। ফি বছর সেই অনুষ্ঠানে একটি রীতি মেনে চলা হয়। তা হল, অফিসারদের স্ত্রীরা নিজেদের জুতো সুইমিং পুলে ছুড়ে দেবেন। তার পর অফিসাররা পুলে ঝাঁপ মেরে যাঁর জুতো পাবেন, সেই মহিলার সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানের রাতে নাচের সুযোগ পাবেন। সেই অনুষ্ঠানে শৈলজার সঙ্গে নাচের সুযোগ পেয়েছিলেন নিখিল। সেই থেকেই আলাপ, তার পর ঘনিষ্ঠতা। ২০১৭ সালে ‘মিসেস ইন্ডিয়া আর্থ’ প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন দু’টি বিষয়ে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়া শৈলজা। অমৃতসরের মেয়ে শৈলজা পাঁচ বছর পড়িয়েছিলেন পঞ্জাবের গুরু নানক দেব বিশ্ববিদ্যালয়েও। অমিতের সঙ্গে শৈলজার বিয়ে হয় নয় বছর আগে।

নিখিলের মোবাইল থেকে শৈলজার পাঠানো কয়েক হাজার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ। নিখিলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলার ক্ষেত্রে শৈলজারও যে যথেষ্টই আগ্রহ ছিল, মেজর-পত্নীর পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজগুলি থেকে তারও প্রমাণ মিলেছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই খুন মেজর-পত্নী, দাবি পুলিশের​

আরও পড়ুন- হিটলিস্টে ২১ জঙ্গি, নয়া অভিযানের প্রস্তুতি কাশ্মীরে​

তদন্তে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে এক বার নিখিলের সঙ্গে ভিডিও কল করতে গিয়ে স্বামী মেজর অমিত দ্বিবেদীর হাতে ধরা পড়ে যান শৈলজা। তার পর থেকেই নিখিলের সঙ্গে একটু দুরত্ব রাখার চেষ্টা করছিলেন শৈলজা। আর তা নিয়েই চলছিল অমিতের সঙ্গে চলছিল শৈলজার অশান্তি। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিবাহিনীর হয়ে কাজ করার জন্য ক’দিন পরেই শৈলজার স্বামী অমিতের সুদান যাওয়ার কথা ছিল। প্রথমে শৈলজাকে দিল্লিতে রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সুদান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অমিত।

জেরায় নিখিল তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, শৈলজার সুদান যাওয়া মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। তাই তড়িঘড়ি মাইগ্রেনের চিকিৎসা করানোর নাম করে ছুটি নিয়ে ডিমাপুর থেকে শনিবার দিল্লি চলে আসেন তিনি। দিল্লি ক্যান্টনমেন্টে সেনা বেস হাসপাতালে চিকিৎসা করানো শুরু করেন নিখিল। যেখানে শৈলজাও প্রায় নিয়মিতই যেতেন ফিজিওথেরাপি করাতে। সেখান থেকেই শৈলজাকে ফোন করেছিলেন নিখিল। কিন্তু প্রথমে শৈলজা দেখা করতে রাজি হচ্ছিলেন না। তখন নিখিল তাঁকে বার বার বলেন, সুদান চলে যাচ্ছেন শৈলজা। তার আগে শেষ বার শৈলজার সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। তার পরেই নিখিলের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হন শৈলজা। পুলিশ কল-রেকর্ড ঘেঁটে জানাচ্ছে, ওই সময় শৈলজাকে তিন হাজার বার ফোন করেছিলেন নিখিল। তবে ঘটনার দিন শৈলজা ফিজিওথেরাপি করাতে যাননি বলে ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শৈলজাকে খুন করার পরিকল্পনা নিয়েই গাড়িতে উঠেছিলেন নিখিল। কারণ, নিখিলকে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না শৈলজা। গাড়িতেই রাখা ছিল ধারালো ছুরি। শৈলজাকে খুন করে অমিতকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন নিখিল। আর তাই শৈলজার গলা ধারালো ছুরি দিয়ে কাটার পর সেই দেহ নারেলার রাস্তায় ফেলে গাড়িচাপা দিয়েছিলেন তিনি।

দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পশ্চিম) বিজয় কুমার বলেছেন, “গাড়িচাপা দিয়ে এক দিকে শৈলজার মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন নিখিল। একই সঙ্গে নিখিল চেয়েছিলেন খুনের ঘটনাটাকে দুর্ঘটনার চেহারা দিতে।’’

শৈলজাকে খুনের পর নিজের কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তরপ্রদেশের মেরঠ সেনা ক্যান্টনমেন্টের মেসে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন নিখিল। রবিবারই মেরঠ থেকে নিখিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই মেরঠ থেকেও তাঁর ‘বান্ধবী’দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করেননি নিখিল। নিখিল ওই সময় নিজের দ্বিতীয় মোবাইল থেকে ডিমাপুরে তাঁর অন্য ‘বান্ধবী’-দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন। নিয়মিত ভিডিও কল করতেন!

দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই নিখিলের ওই ‘বান্ধবী’দেরও প্রয়োজনে জেরা করা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE