প্রতীকী ছবি।
এ যেন বিহারের ‘সুপার-৩০’-র ওড়িয়া সংস্করণ। সুপার-১৯। সমাজের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের ঠিকানা। শিক্ষাবিদ অজয় বাহাদুর সিংহের তত্ত্বাবধানে চলা ভুবনেশ্বরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জিন্দেগি ফাউন্ডেশন’ এ বছরও ১৯ জন পড়ুয়ার আগামী দিনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে। সেই স্বপ্ন পূরণের আনন্দে পড়ুয়ারা যখন উচ্ছ্বসিত, তখন অজয় বাহাদুর ঠিক করছেন তাঁর পরের বছরের লক্ষ্য। আর সেই সঙ্গে নিজের অতীতের যন্ত্রণা ভুলতে চাইছেন সন্তানসম পড়ুয়াদের সাফল্যের আলোয়।
বিহারের ‘সুপার-৩০’-র আনন্দ কুমারের কেমব্রিজে যাওয়া হয়নি অর্থাভাবে। আর চরম আর্থিক অনটনের কারণে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি অজয় বাহাদুরের। মাঝপথেই ডাক্তারি পড়া ছেড়ে চা-শরবত বিক্রি করে পরিবারের পেট ভরানোর দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। নিজেই বলছেন, একটা সময় ঝাড়খণ্ডে বাবা বৈদ্যনাথ মন্দিরের সামনে শ্রাবণী মেলার সময় পূণ্যার্থীদের চা-শরবত বিক্রি করে পড়াশোনা চালাতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা কাটেনি। শেষে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তার পরেই ঠিক করেন, তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়নি ঠিকই, কিন্তু শুধু মাত্র আর্থিক অনটনের কারণে অন্য অনেকের ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন পূরণ করবেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই ২০১৭ সালে ভুবনেশ্বরে তৈরি করেন ‘জিন্দেগি ফাউন্ডেশন’। ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেছে বেছে আর্থিক অনটনে ভুগতে থাকা পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে বের করেন। তাঁদের নিখরচায় পড়ানো এবং খাবারের ব্যবস্থাও করেন অজয়, যাতে তাঁদের আগামী দিনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়।
এ বছরের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই অন্য রকম। করোনা অতিমারির আবহে পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর সমস্যা। কিন্তু বাধা হয়নি কোনওটাই। অজয়ের কথায়, ‘‘দারিদ্র্য বা করোনা অতিমারী, কোনওটাই ওদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে পারেনি। তাই এ বছরও ‘জিন্দেগি ফাউন্ডেশন’-এর পড়ুয়ারা ইতিহাস তৈরি করেছেন। ১৯ জনের মধ্যে ১৯ জনই এ বছর ডাক্তারি এন্ট্রান্সে পাশ করেছেন।’’
অঙ্গুলের ক্ষিরোদিনী সাহু যেমন লকডাউনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। উপায়ন্তর না দেখে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে সোজা চলে আসেন অজয়ের বাড়িতে। সেখানে থেকেই চিকিৎসা এবং পড়াশুনা চালিয়ে নিট পরীক্ষায় পাশ করেছেন দরিদ্র ক্ষেতমজুরের কন্যাটি। সাইকেলে চাপিয়ে আনাজ বিক্রি করা বাবার ছেলে সত্যজিৎ সাহু, ঠেলায় চাপিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ইডলি-বড়া বিক্রি করা শুভেন্দু পরিদা বা পান দোকানির মেয়ে নিবেদিতা পণ্ডাদের গল্পগুলোও একই রকম।
অজয়কে সাহায্য করতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কিন্তু অজয় নিজেই জানালেন, ‘‘কোনও ব্যক্তি বা কোনও সংগঠনের থেকে সাহায্য নিই না আমি। নিজের সামর্থ্যে যেটুকু হয়, তাই দিয়েই ওদের সাহায্য করি। ওদের মধ্যে নিজের ছায়া দেখতে পাই যে!’’ একই সঙ্গে বলছেন, ‘‘নিজের ডাক্তার হতে পারিনি। কিন্তু যখন দেখি এরা সফল হচ্ছে, তখন মনে হয় এটা আমারই জয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy