শবরীমালার ক্ষেত্রে যে বাধা এসেছে, ডান্সবারের ক্ষেত্রেও সেই পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ‘ভারতীয় বার গার্লস ইউনিয়ন’-এর সভাপতি বর্ষা কালে।
প্রায় ১৪ বছর বন্ধ থাকার পরে মহারাষ্ট্রে ডান্সবারগুলিকে কয়েকটি বিশেষ নিয়ম মেনে চালু করতে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে বৃহস্পতিবার। উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা বার ডান্সারদের। কিন্তু তাঁরা এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না, কারণ লড়াইটা রাজ্য সরকারের সঙ্গে।
ফোনে বর্ষা বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা, বারগুলি ডান্সবারের লাইলেন্স নিতে গেলেই সরকার কোনও বাহানায় আটকে দেবে বা ঘোরাবে। কেরলের শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও প্রবেশে বাধা পাচ্ছেন মেয়েরা। এখানেও তেমন হতে পারে। এখন চুপচাপ অপেক্ষা করব। আগে অন্তত ৫০টি ডান্সবার লাইসেন্স পাক, তবে মনে করব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সরকার কার্যকর করছে।’’
বর্ষার সূত্রেই যোগাযোগ হল শবনম রাজের সঙ্গে। রাজস্থানের মেয়ে শবনম প্রায় ৩০ বছর আগে মুম্বইয়ে এসেছিলেন। নাচতেন ‘বেওয়াচ’ নামে একটি ডান্সবারে। ফোনে বললেন, ‘‘মাসে হেসেখেলে তিরিশ-চল্লিশ হাজার টাকা রোজগার হত। তার উপর খদ্দেরদের দেওয়া হাজার-দু’হাজারের ‘টিপস’ ছিল। বার বন্ধ হতে চার দিক অন্ধকার হয়ে গেল। আমি গান গাইতে শুরু করলাম। কিন্তু লোকে শুধু গান শুনতে বা মদ খেতে চায় না। নাচ দেখতে চায়। ফলে রোজগার তলানিতে চলে এল।’’
মুম্বইয়ের মীরা রোডে দুই সন্তানকে নিয়ে কোনওক্রমে দিন গুজরান হয় শবনমের। আদালতের রায় শুনে বলেন, ‘‘বড্ড দেরি হয়ে গেল। বয়স ১৪ বছর বেড়ে গিয়েছে আমার। এখন ডান্স বার খুললেও কেউ আমার নাচ দেখতে চাইবেন না।’’
২০০২ সাল থেকে মহারাষ্ট্র বিশেষত মুম্বইয়ের বার ডান্সারদের সংগঠিত করেন বর্ষা। সেই সময়ে লড়াই ছিল পুলিশি ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে। এর পর ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্র সরকার ডান্সবারগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আন্দোলন করে বার গার্লস ইউনিয়ন। তবে সে বছর অগস্টে মহারাষ্ট্রের সব ডান্সবারে নাচ বন্ধ করে দেয় সরকার।
বর্ষার কথায়, ‘‘সরকার নির্দেশ দেয়, মেয়েরা আর বারে নাচতে পারবেন না। তাঁরা ওয়েট্রেস বা সিঙ্গার হিসাবে কাজ করতে পারবেন। যাঁরা এত দিন ডান্সবারে নেচেছেন, তাঁদের সকলের পক্ষে গান গাওয়া সম্ভব ছিল না। ওয়েট্রেসের কাজেও অত মেয়ে দরকার ছিল না। ফলে রাতারাতি অনেক মেয়ে ফুটপাতে বসল।’’ বর্ষার স্বামী কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। ফলে সংসার ভেসে যায়নি।
বর্যা জানান, শুধু মুম্বইয়ে ১২৫০টি ডান্সবার চলত। পুণে, ঠাণে, রায়গড়ের মতো কয়েকটি জায়গা মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ৩ হাজারের বেশি ছিল। প্রায় ৭৫ হাজার মেয়ে সেখানে নাচতেন। এঁদের মধ্যে ১৩-১৪ হাজার বাঙালি। বর্ষা বলেন, ‘‘২৫ হাজার মেয়ে গায়িকা বা ওয়েট্রেসের কাজে পুনর্বাসন পেয়েছিল। বাকি ৫০ হাজার বেকার হয়ে যায়।’’
এঁদের অনেকেই পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, আমেরিকায় বা ইউরোপের বারগুলিতে নাচতে চলে যান। কেউ বাধ্য হন যৌনব্যবসায় নামতে। ছোটখাট কারখানা বা দোকানে কাজ নেন কিছু। বেশ কয়েক জন আত্মঘাতী হয়েছিলেন বলেও ইউনিয়ন সূত্রের দাবি। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বর্ষারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy