Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভিসা নিয়ে অনড় টেরেসা, প্রত্যাশা না মেটায় হতাশ দিল্লি

মুখে অবাধ বাণিজ্যের কথা, কিন্তু ভারতীয়দের ভিসা দিতে সেই কট্টর অবস্থান। সেই জটেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র চলতি সফর নয়াদিল্লির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। সোমবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে। ছবি: পিটিআই

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। সোমবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

মুখে অবাধ বাণিজ্যের কথা, কিন্তু ভারতীয়দের ভিসা দিতে সেই কট্টর অবস্থান। সেই জটেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র চলতি সফর নয়াদিল্লির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল না।

ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের ব্যবসার জন্য বাজারের খোঁজ করতে দিল্লিতে পা রেখেছেন টেরেসা। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও কয়েক বছর লাগবে। এর আগে বাণিজ্য সহ দ্বিপাক্ষিক বেশ কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করে এগোতে চাইছে ব্রিটেন। বাণিজ্যের স্বার্থে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গড়ার জন্যও আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’দেশ। কিন্তু ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য পরিবেশ সুগম করার জন্য দু’টি নাম কি ওয়াস্তে চুক্তি হলেও, কোনও বাণিজ্যচুক্তি হয়নি। কূটনীতিকদের দাবি, সে পথে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিতও দেখা যায়নি। বরং ভিসা নিয়ে জটিলতা টেরেসার গোটা পরিকল্পনাতেই ছাপ ফেলেছে।

সম্প্রতি ভারতীয় পড়ুয়াদের ব্রিটিশ ভিসা পাওয়া নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সে সম্পর্কে টেরেসা মে-র থেকে কোনও প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। বরং এ নিয়ে ভারতীয় ছাত্রদের যে সমস্যা হচ্ছে— সেই অভিযোগটিই উড়িয়ে দিয়েছেন টেরেসা। বরং তিনি বলেন, ‘‘ভারতের দশজন ছাত্রের মধ্যে ন’জনের ভিসার আবেদন সব সময়েই মঞ্জুর করা হয়েছে।’’ পাশাপাশি, টেরেসা এ-ও বলেছেন, ‘‘যে সব ভারতীয়দের ব্রিটেনে থাকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, তাদেরও ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত করা হবে।’’

আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার না করলেও বিষয়টি হতাশাজনক ভারতের পক্ষে। গত কয়েক মাসে ভারত থেকে ব্রিটেনে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ভিসার ফাঁসে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, বার্ষিক উপার্জন ১৮,৬০০ পাউন্ডের কম হলে পরিজনদের ব্রিটেনে আনতে পারেন না সে দেশে কর্মরত ভারতীয়রা।

তবে ভারতীয় বাণিজ্যকর্তাদের ভিসা মসৃণ করতে আজ দু’টি ঘোষণা করেছে ব্রিটেন। কিন্তু সেটি করা হবে মুষ্টিমেয় কিছু নাগরিকের জন্য। উচ্চবিত্ত কিছু ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারকে ব্রিটেনের ‘গ্রেট ক্লাব’ ভিসা পরিষেবার আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ‘ওয়ার্কিং ভিসা’ পাচ্ছেন, এমন ব্যক্তিদের ব্রিটেনের একটি বিশেষ ভিসা পরিষেবা স্কিম-এর আওতায় আনা হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু পড়ুয়াদের ভিসা পাওয়া সহজ করা নিয়ে ঘোষণা দূরস্থান, কোনও স্পষ্টনির্দেশিকাও দেখা যায়নি মোদী ও টেরেসা মে-র বৈঠকে। অথচ আজ সকালেই ‘ভারত-ব্রিটেন টেকনোলজি সামিট’-এ প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলোচ্যসূচির তারটি বেঁধে দিতে চেয়েছিলেন ভারতের এই দাবির সুরে। মোদী বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আমরা শিক্ষা নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে যৌথ ভাবে এগিয়ে যাব। যুবশক্তির শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে বিনিময় আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’’ মঞ্চে তাঁর পাশেই ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভিসা ব্যবস্থা এতই ভাল যে উজ্জ্বল ছেলেমেয়েদের ব্রিটেনে আসাকে সুনিশ্চিত করা হয়। তা ছাড়া সংখ্যাই বলে দিচ্ছে, আমেরিকা, চিন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার থেকে বেশি দেওয়া হয় ভারতকেই।’’

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সংখ্যার এই খেলা খেলে (অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার জনসংখ্যার পাশে ভারতকে রাখা হাস্যকর বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক) ভারতীয় পড়ুয়াদের বাড়তি ভিসা দেওয়ার প্রশ্নে অনড় মনোভাবই বজায় রেখেছেন টেরেসা। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিতে একটি রাষ্ট্র যদি অন্য দেশের স্পর্শকাতর দিকটি বুঝতে না পারে, তার প্রতিফলন পড়ে অর্থনৈতিক সম্পর্কেও। তাঁর মতে, ভিসা নিয়ে ব্রিটেনের কঠোর নীতি নয়াদিল্লির অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের বাণিজ্য নীতি নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখানো ভারতের পক্ষে কঠিন। একটি সুবিশাল যৌথ বিবৃতিতে ভিসার বিষয়টি অবশ্য কিছুটা জোর করেই ঢুকিয়েছে নয়াদিল্লি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘দুই শীর্ষ নেতার মতে, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে ব্রিটেন জনপ্রিয় গন্তব্য। বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্রদের আসার ব্যাপারে কোনও সংখ্যাগত সীমারেখা নেই বলেই টেরেসা জানিয়েছেন। ব্রিটেন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছে।’’

আসল কুক

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজনের সময়ে নরেন্দ্র মোদী জানতে চান, কেমন হয়েছে রান্নার পদগুলি। সপ্রংশস টেরেসা বলেন, ‘‘রান্না খুবই ভাল। এখানকার ‘কুক’ আসাধারণ।’’ নরেন্দ্র মোদী পাল্টা হেসে বলেন, ‘‘আমার ধারণা, ইংল্যান্ডের ক্রিকেট টিমের সঙ্গেই আসল কুক এসেছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Theresa May
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE