Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবসা হোক, টেরেসার সফরে ভিসা জটও কাটাতে চাইছে নয়াদিল্লি

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ভারতের বিরাট বাজারকে নিশানা করেই রবিবার গভীর রাতে দিল্লিতে পা রাখলেন টেরেসা মে।

দিল্লি বিমানবন্দরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ছবি: রয়টার্স

দিল্লি বিমানবন্দরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৯
Share: Save:

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ভারতের বিরাট বাজারকে নিশানা করেই রবিবার গভীর রাতে দিল্লিতে পা রাখলেন টেরেসা মে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম বিদেশ সফর। সেখানে ভারতকে বেছে নিয়ে মে দিল্লিকে বার্তা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু কূটনীতিকরা মনে করছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসার কথাবার্তা এগোলেও ভারতীয় পড়ুয়াদের সে দেশে ভিসার দেওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে ব্রিটেনকে চাপে রাখবে দিল্লি।

আগামী বছর মার্চ নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে ব্রিটেন। তার পর দু’বছরের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শেষ করার সম্ভাবনা। কনসারভেটিভ পার্টির নেত্রী টেরেসা ২৩ জুনের গণভোটে ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ান থেকে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে সফল হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর সামনে এখন চ্যালেঞ্জ ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা। ‘ব্রিটেনের অর্থনীতিকে সার্বভৌম ও স্বাধীন’ করে তোলার যে যুক্তি ব্রেক্সিট-পন্থীরা দিয়েছেন, তাকে বাস্তবায়িত করাই লক্ষ্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর।

সেই আশাতেই ভারতের বিরাট বাজারের দিকে তাকিয়ে ব্রিটেন। দিল্লি পৌঁছনোর আগেই লন্ডনের একটি সংবাদপত্রে এ নিয়ে তাঁর আশার কথাও শুনিয়েছেন মে। বলেছেন, দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে তিন দিনের সফরে তিনি ব্রিটেনের ‘শ্রেষ্ঠ জিনিসগুলি’-র কথাই তুলে ধরতে চান। মে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ ভারত। বিশ্বে তারা এখন একটা বড় শক্তি। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে ব্রিটেনের। আর ভারতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। যাঁর আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচিগুলির সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।’’ ভারতের গুরুত্বের দিকে তাকিয়েই যে তিনি বিদেশ সফরের জন্য প্রথম দিল্লিকেই বেছে নিলেন, সে কথাও জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। মে-র কথায়, ‘‘ব্রেক্সিট আমাদের সামনে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, খোলামেলা ব্যবসার সেই সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে চাই।’’

আগামিকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন মে। বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে কথা হবে। সকালে দিল্লিতে প্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি সম্মেলনেও যোগ দেবেন তিনি। মোদীও উপস্থিত থাকবেন সেখানে। তার আগে ভারতের থেকে ব্রিটেনের প্রত্যাশার কথাও তুলে ধরেছেন টেরেসা মে। জানিয়েছেন, মোদীর মেক ইন ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে চায় ব্রিটেন। এর ফলে দু’দেশেই কর্মসংস্থান হতে পারে বলে আশা তাঁর। টেরেসা-র সঙ্গে ৪০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দিল্লি পৌঁছেছেন। এঁরা সে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগী। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের স্বার্থে এই ধরনের শিল্পদ্যোগীদেরই গুরুত্ব দিতে চাইছে ব্রিটেন।

তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা মনে করছেন, টেরেসার প্রত্যাশায় কাঁটা হয়ে উঠতে পারে ব্রিটেনের অভিবাসী কমানোর নীতি। ব্রেক্সিটের পরেই ভারতীয় পড়ুয়াদের ব্রিটিশ ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। এই সময়ে ভারত থেকে ব্রিটেনে পড়তে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। পড়াশোনা শেষ করার পরে ভারতীয় ছাত্ররা সে দেশে দু’বছর থাকার যে সুযোগ পেতেন, তা-ও এখন নেই। বার্ষিক উপার্জন ১৮,৬০০ পাউন্ডের কম হলে পরিজনদের ব্রিটেনে আনতে পারেন না কর্মরত ভারতীয়রা।

কূটনীতিকরা মনে করছেন, অবাধ বাণিজ্যের কথা বললেও লন্ডনের এ সব নীতি পরস্পরবিরোধী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Theresa May India Tour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE