Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চড়ছে সম্পর্কের পারদ, ফের দুই পড়শির বাগ্‌যুদ্ধ

ফের উত্তপ্ত দুই পড়শির সম্পর্ক। নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর আর ভারতীয় সেনার সাম্প্রতিক মায়ানমার অভিযান নিয়ে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ তরজা আরও তীব্র হল। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌরের পর আজ মাঠে নেমেছেন খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর।

মায়ানমার অভিযান নিয়ে রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকের পরে বেরিয়ে আসছেন মনোহর পর্রীকর (বাঁ দিকে) ও অজিত ডোভাল। ছবি: পিটিআই।

মায়ানমার অভিযান নিয়ে রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকের পরে বেরিয়ে আসছেন মনোহর পর্রীকর (বাঁ দিকে) ও অজিত ডোভাল। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০৩:৪১
Share: Save:

ফের উত্তপ্ত দুই পড়শির সম্পর্ক। নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর আর ভারতীয় সেনার সাম্প্রতিক মায়ানমার অভিযান নিয়ে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ তরজা আরও তীব্র হল। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌরের পর আজ মাঠে নেমেছেন খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। পাকিস্তানের নাম-না করে তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের নতুন পদক্ষেপে যারা ভীত, তারাই সাড়াশব্দ করতে শুরু করেছে।’’

চুপ করে থাকতে চাইছে না ইসলামাবাদও। কূটনৈতিক সংযম থেকে বাইরে এসে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার খান হুমকি দেন ভারতকে। আজ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর ঢাকায় দেওয়া বিবৃতিকে প্ররোচনামূলক এবং বিদ্বেষপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গোটা বিবৃতিতে ভারতের ‘খবরদারি’ করার মানসিকতাই ফুটে উঠেছে। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আজ সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্টই বলেন, ‘‘দেশের স্বার্থ লঙ্ঘিত হলে, আমরা পাল্টা আক্রমণ করবই।’’ পরোক্ষে ভারতকেই বার্তা দিয়ে শরিফ মনে করিয়েছেন, মায়ানমারের মতো তাঁদের দেশে ঢুকে ভারত যেন এমনটা করতে না যায়। পাক সরকারের ভারত বিরোধিতার সুরে সুর মিলিয়ে প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফও আজ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিতে পিছপা হননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আমাদের পরমাণু শক্তির প্রদর্শন করতে চাই না। কিন্তু অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়লে কীসের জন্য পরমাণু অস্ত্র তুলে রেখে দেব! শব-এ-বরাতের উদ্‌যাপন করার জন্য তো আর অস্ত্রগুলো তৈরি করা হয়নি!’’

যখন ভারত-পাক আলোচনার পথ খোলার চেষ্টা চলছিল, তখনই বাংলাদেশ আর মায়ানমার কাঁটা তাকে এক ধাক্কায় খাদে গড়িয়ে দিল কি না, তা নিয়ে কূটনৈতিক শিবিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে মোদী নিজে ফোন করে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর মার্চে ইসলামাবাদে গিয়েছিলেন। জুলাইয়ে রাশিয়ায় ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ (এসসিও)-এর সম্মেলনে মোদী-শরিফ দেখা হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। দুই প্রধানমন্ত্রীর পার্শ্ববৈঠক সম্ভব কি না, তা নিয়েও কথা চলছিল। কিন্তু ভারত-পাক সম্পর্কের নাগরদোলা তত্ত্বে আবার সব কিছু ভেস্তে যাওয়ার সম্ভবনাই উঁকি মারছে।

আজ পাক পার্লামেন্টে ভারতের প্রতি যে ঘৃণা বর্ষিত হয়েছে, সাম্প্রতিক অতীতে তা দেখা যায়নি বলেই মনে করেন অনেকে। পার্লামেন্টের নেতা রাজাজ জাফারুল হক প্রস্তাবটি এনে বলেছেন, ‘‘ভারতের এই নিষ্ঠুর প্রয়াসকে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ সম্প্রতি ঢাকা গিয়ে সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ তোলেন মোদী। বলেছিলেন, ‘‘মাঝে মধ্যেই পাক সন্ত্রাসবাদীরা ভারতকে বিব্রত করে।’’ মায়ানমারে গিয়ে ভারতীয় সেনার জঙ্গি দমনের পরে সুর চড়ান রাজ্যবর্ধন রাঠৌরও। মোদীর ঢাকা বিবৃতি আর রাঠৌরের মন্তব্য এখন পাক ভূখণ্ডকে আক্রমণ করার চক্রান্ত হিসেবেই দেখছে ইসলামাবাদ।

জবাবে ভারতও আজ আক্রমণ শানিয়েছে। মায়ানমারের অভিযানকে মানসিকতার পরিবর্তন হিসেবে তুলে ধরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্রীকর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘যদি চিন্তা-ভাবনা বদলায় তা হলে অনেক কিছুই বদলে যায়। গত দু’তিন দিনের ঘটনা আপনারা দেখলেন। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একটা সাধারণ অভিযান গোটা দেশের নিরাপত্তার ছবিটাই পাল্টে দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE