জখম: অমৃতসরের গুরু নানক দেব হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে বিস্ফোরণে আহত মহিলার। রবিবার। এএফপি
জঙ্গি অনুপ্রবেশের খবর পেয়ে দু’দিন আগেই রাজ্য জুড়ে সতর্কতা জারি করেছিল পঞ্জাব সরকার। তার পরেও আজ অমৃতসরের এক ধর্মীয় সমাবেশে গ্রেনেড বিস্ফোরণে মৃত্যু হল ৩ জনের।
পুলিশ জানায়, আজ রাজাসংসী গ্রামের নিরঙ্কারি ভবনে প্রার্থনার জন্য জমা হয়েছিলেন নিরঙ্কারি সম্প্রদায়ের কয়েকশো সদস্য। বেলা ১২টা নাগাদ মোটরবাইকে এসে তাঁদের দিকে গ্রেনেড ছোড়ে মুখোশধারী দুই ব্যক্তি। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৩ জন। আহত ২০। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ মনে করছে, এই হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরাই। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে পুষ্ট খলিস্তানি বা কাশ্মীরি জঙ্গি সংগঠনের হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ।
জইশ ই মহম্মদের ছয় বা সাত জন জঙ্গি পঞ্জাবে ঢুকেছে এবং তারা ফিরোজপুরে রয়েছে বলে বৃহস্পতিবারই সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা। বলা হয়েছিল, দিল্লির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে ওই জঙ্গিরা। গত সপ্তাহে পঠানকোটের মাধোপুরে চালকের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে একটি এসইউভি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আরও বাড়ে। পঞ্জাব পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সুরেশ অরোরা বলেছেন, ‘‘এই হামলা জঙ্গিদের কাজ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপরে হামলা হয়নি, হামলা হয়েছে একটি সম্প্রদায়ের উপরে। অকারণে এক দল মানুষের উপরে গ্রেনেড ছোড়ার আর কোনও কারণ নেই।’’
মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সরকার। হামলাকারীদের গোপন ঘাঁটির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশের একাধিক দল।
প্রতি রবিবারের মতো আজও আদলিওয়াল গ্রামের এই নিরঙ্কারি ভবনে জড়ো হন ভক্তেরা। অমৃতসর বিমানবন্দরের মাত্র আট কিলোমিটার দূরে এই ভবনটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার সময়ে ভিতরে অন্তত আড়াইশো ভক্ত ছিলেন। এক মহিলা স্বেচ্ছাসেবীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে মুখোশধারী দুই মোটরবাইক আরোহী। ভক্তদের দিকে গ্রেনেড ছুড়ে চম্পট দেয় তারা। সমাবেশের মূল বক্তা ধর্মগুরু সুখদেব কুমার-সহ তিন জন নিহত হন। নিরঙ্কারি ভবনের ভিতরে কোনও সিসিটিভি না থাকায় হামলাকারীদের শনাক্ত করতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। বিস্ফোরণের পরেই রাজ্যের বাকি নিরঙ্কারি ভবনগুলির পাশাপাশি হরিয়ানা ও দিল্লির ধর্মস্থানগুলিতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
বিস্ফোরণের খবর পাওয়া মাত্রই স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হামলার নিন্দা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জম্মু- কাশ্মীরের পাশাপাশি পঞ্জাবেও ফের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে আইএসআই। সম্প্রতি জম্মু সীমান্ত থেকে প্রচুর মাদক ও অস্ত্র আটক হয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই অস্ত্র পঞ্জাবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল অনুপ্রবেশকারীরা।
গোয়েন্দাদের অনুমান, মাদক চালানের টাকাতেই কাশ্মীর-পঞ্জাবে সন্ত্রাসে আর্থিক মদত দিতে চাইছে আইএসআই। সম্প্রতি পঞ্জাবে জঙ্গিদের ১৫টি মডিউলের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজ্যে জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেওয়ার অভিযোগে কয়েক জন কাশ্মীরি ছাত্রও গ্রেফতার হয়েছে। খলিস্তানি ও কাশ্মীরি জঙ্গিরা হাত মিলিয়ে কাজ করছে বলে
ধারণা পুলিশের।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও খবর, আইএসের জম্মু-কাশ্মীর শাখার কম্যান্ডার জাকির মুসা সম্প্রতি পঞ্জাবে ঢুকেছে। পুলিশ দাবি করেছে, ১৪ সেপ্টেম্বর জালন্ধরের এক থানায় গ্রেনেড হামলার প্রধান চক্রী ছিল এই মুসা। তার সমর্থনে পোস্টারও পড়েছে রাজ্যে। তবে এ দিনের এই বিস্ফোরণের পিছনে মুসার হাত নেই বলেই
মনে করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy