ধর্মীয় বিভাজন রেখা যেন এখনও স্পর্শ করেনি অযোধ্যার আব্দুল, সাদিক বা মেহবুবদের। ছবি: সংগৃহীত।
যে ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতাকে হাতিয়ার করে প্রতিনিয়ত মেরুকরণের চেষ্টা করে চলেছেন রাজনীতিকদের একাংশ, তার বিরুদ্ধে এ যেন এক নীরব প্রতিবাদ! ভোটব্যাঙ্কের সমীকরণের কাছে এখনও যাঁরা মানবধর্ম বিসর্জন দেননি আব্দুল, সাদিক বা মেহবুবরা যেন তাঁদেরই প্রতিনিধি।
অযোধ্যায় বিতর্কিত চত্বরে রামলালা মন্দিরের চারপাশে কাঁটাতার সারাইয়ের কাজ করেন আব্দুল ওয়াহিদ। মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের অনুরোধে রামলালা বিগ্রহের ‘বস্ত্র’ তৈরি করেন সাদিক আলি। আর যে জমিতে রামলালার বিগ্রহ রয়েছে তা সারা ক্ষণ আলো ঝলমলে রাখার দায়িত্বে রয়েছেন মেহবুব। গোটা দেশের ধর্মীয় বিভাজন রেখা যেন এখনও স্পর্শ করেনি আব্দুল, সাদিক বা মেহবুবদের।
৩৮ বছরের লোহা ঢালাইকারী আব্দুল ওয়াহিদের সম্বল বলতে একটা মরচে ধরা ওয়েল্ডিং মেশিন, প্লাজমা কাটার, গ্যাস আর রড। তা নিয়েই রামলালার মন্দিরের সুরক্ষার দিকে কড়া নজর তাঁর। এ কাজে আব্দুলের রোজগার হয় দিন প্রতি ২৫০ টাকা। ২০০৫-এ এখানেই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল ৫ লস্কর জঙ্গি। আব্দুল বলেন, “সেই থেকেই মন্দিরের আশপাশে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করছি আমি। রোদে-জলে নষ্ট হয়ে গেলে সেই বেড়া সারাইয়ের কাজও করি।” আব্দুল জানিয়েছেন, তাঁর মতোই মন্দিরের সুরক্ষায় রয়েছেন বহু পুলিশ, সিআরপিএফ জওয়ান। এর পর আব্দুলের মন্তব্য, “সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ধর্ম হয় না।”
আরও পড়ুন
কোন ‘ছোঁয়া’ কেমন, শিশুদের শেখাতে প্রোজেক্ট মাসুম
খানিকটা আব্দুলের মতোই গল্প এলাকার দর্জি সাদিক আলির। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য পাগড়ি, কুর্তা, জ্যাকেট তৈরি করেই রুজিরুটি জোটে তাঁর। সাদিক জানিয়েছেন, গত ৫০ বছর ধরেই তিনি ও তাঁর ছেলে সাধু-সন্ত–সহ এলাকার হিন্দুদের জন্য জামাকাপড় বানাচ্ছেন। তবে সাদিক বলেন, “রামলালার সাটিনের বস্ত্র সেলাই করতে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পাই।” সেই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, “আমাদের সকলের কাছেই আল্লা এক।”
আরও পড়ুন
বিয়ের রাতেই স্ত্রীকে ছুরি মারলেন ‘শারীরিক ভাবে অক্ষম’ স্বামী
রামলালা মন্দিরের ইলেকট্রিকের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন সাদিকের বন্ধু মেহবুব। তিনি বলেন, “১৯৯৪ থেকে বাবার সঙ্গে এই মন্দিরের ইলেকট্রিকের কাজ করছি।” কানপুর থেকে তাঁর হিন্দু ‘ভাই’রাই মেহবুবকে ইলেকট্রিক তারের জোগান দেন। আর তা দিয়ে মন্দিরে আলো জ্বালান মেহবুব। তিনি আরও বলেন, “আমি আগে ভারতীয়। আর হিন্দুরা আমার ভাই।”
আরও পড়ুন
দুধের শিশুকে খুন করে মা ওয়াশিং মেশিনে ঢোকালেন!
মন্দিরের কাজকর্মের সময় ছাড়াও নির্ভেজাল আড্ডা দিতে একসঙ্গে হন এই তিন জন। সরযূ নদীর ধারে একসঙ্গেই চা খেতে খেতে গল্প করেন তাঁরা। কখনও বা মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের হাঁটার সঙ্গী হন আব্দুল, সাদিক ও মেহবুবরা।
আর এ ভাবেই অযোধ্যা নিজের অন্দরে গড়ে তুলেছে সম্প্রীতির এক অখণ্ড ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy