Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভক্তকে দিয়ে মোদী-স্তুতিতে এ বার ‘টাইম’

নির্বাচনে মোদীর জয়কে লেখক মনোজ লাডোয়া ‘জাতপাতের বিভেদ ভেঙে একক ভারতের উত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

ছবি: এপি।

ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০১:৩০
Share: Save:

মাত্র কয়েক সপ্তাহে ‘বিভেদের গুরু’ থেকে ‘ঐক্যবদ্ধ ভারতের প্রধানমন্ত্রী’।

মার্কিন ‘টাইম’ পত্রিকার ২০ মে সংখ্যার প্রচ্ছদ নিবন্ধ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। ভারতের নির্বাচনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখচ্ছবি ছাপা হয় পত্রিকাটির ২০ মে সংখ্যার প্রচ্ছদে। দৃষ্টিতে বিষণ্ণতা, গলায় গেরুয়া চাদর। হেডলাইন— ‘ইন্ডিয়া’জ় ডিভাইডার ইন চিফ’ (ভারতে বিভেদের গুরু)। বলা হয়েছিল, ‘এক ব্যর্থ রাজনীতিক হিসাবে ভোট চাইতে এসেছেন মোদী, যিনি করে দেখাতে পারেননি। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, সেই স্বপ্ন, সেই আস্থা আজ আর তাঁর সঙ্গে নেই।’ এ বার নির্বাচনী বিশ্লেষণে সেই পত্রিকার নিবন্ধেই কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য সুর। বলা হয়েছে, ‘মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম দফা তো বটেই, নির্বাচনের সময়েও তাঁর নীতিগুলিকে বিরুদ্ধ সমালোচনা, কখনও কখনও অন্যায্য সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ দশকে তাঁর মতো আর কোনও প্রধানমন্ত্রী ভারতের ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ রায় পাননি।’

মোদীর সব চেয়ে বড় সাফল্য হিসাবে আমলাতন্ত্রের ফাঁকফোকর বোজানোকে চিহ্নিত করেছে পত্রিকাটি। আর আগের সংখ্যার সেই প্রচ্ছদ নিবন্ধে দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করার অভিযোগ তোলা হলেও, এ বারে দাবি করা হয়েছে— পরের পাঁচ বছরে মোদী নাকি সেই প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও দক্ষ ও কার্যকর করে তুলবেন। চলতি সংখ্যার নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘প্রথম দফায় ভারতের কুখ্যাত অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্রের ফাঁকফোকরগুলির ছিদ্র বন্ধ করার সাফল্যের পরে দ্বিতীয় দফায় মোদী ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলিকে দক্ষ এবং আগামী দশকগুলিতে কাজের উপযোগী করে তুলতে সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এমনিতেই তিনি বাস্তববাদী রাজনীতিক।

দ্বিতীয় দফায় এই কাজ করতে গিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তার হাতছানি মোদী অনায়াসে এড়িয়ে যেতে পারবেন।’

পত্রিকাটির আগোর সংখ্যার প্রচ্ছদ নিবন্ধটি হইচই ফেলে দিয়েছিল। এমনকি মোদী নিজেও নিবন্ধ-লেখক আতিশ তাসিরের পাকিস্তানি পরিচয় তুলে দাবি করেছিলেন, ‘ওঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা নিবন্ধ যেমন হয়...’। সাংবাদিক তাসিরের উইকিপিডিয়া পেজে হানা দিয়ে তাঁর পেশা হিসেবে ‘কংগ্রেসের জনসংযোগ ম্যানেজার’ লিখে দেন মোদী-ভক্তরা। এ বারে পত্রিকাটি যে লেখককে দিয়ে ভারতের নির্বাচনী বিশ্লেষণটি করিয়েছেন, সেই মনোজ লাডোয়া কিন্তু সত্যিই দীর্ঘদিন মোদীর ‘জনসংযোগ ম্যানেজার’ ছিলেন। ২০১৪-র নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর প্রচারে রিসার্চ অ্যানালিসিস এবং বার্তা পাঠানোর দায়িত্বে ছিলেন লাডোয়া। বর্তমানে তিনি লন্ডন ভিত্তিক তথ্য সংগঠন ‘ইন্ডিয়া ইনক’ গোষ্ঠীর প্রধান, যেটি ‘বিজেপি ঘেঁষা’ হিসেবেই পরিচিত।

নির্বাচনে মোদীর জয়কে লেখক মনোজ লাডোয়া ‘জাতপাতের বিভেদ ভেঙে একক ভারতের উত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মোদীর প্রথম দফা সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন— ‘বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি পর্যন্ত ভারতের অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে, এবং দেশও উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত গতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে।’ লাডোয়া লিখছেন, ‘সামাজিক অস্থিরতার সময়ে মুখ বুজে থাকার জন্য মোদী মাঝে মাঝেই সমালোচিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ভারতের বিভেদের বেশ কয়েকটি প্রধান কারণকে যে ভাবে মোকাবিলা করেছেন, ভোটাররা তাকে বিপুল ভাবে সমর্থন করেছেন। মোদী যে নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার সেটিকে নিজেদের স্বপ্ন বলেই রায় দিয়েছেন।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi TIME
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE