গোটা দিন ধরে সর্দার পটেলকে দিয়ে ইন্দিরা গাঁধীকে মাত দেওয়ার চেষ্টা তো করলেনই। এ বারে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে কংগ্রেসের অবদানকেও ধাপে ধাপে খাটো করার কাজে নামছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আজ, সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মবার্ষিকী। আর আজই ছিল ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুদিন। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই নেহরু-গাঁধী পরিবারকে আক্রমণের জন্য পটেলকে হাতিয়ার করে চলছেন মোদী। ক্ষমতায় এসেও ইতিহাসের পাতা থেকে কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক চরিত্রদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের ঐতিহ্য নিজের পালে কেড়ে নেওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন। আজ আরও একধাপ এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস দেশের নাগরিকদের কাছে ঠিক ভাবে তুলে না ধরে ঘোরতর অন্যায় করা হয়েছে। স্বাধীনতার আন্দোলন নেতাদের আন্দোলন ছিল না, এটি জনসাধারণের আন্দোলন। কিন্তু সেটি পড়ানো হয় না। এই নতুন ইতিহাস তিনি ধাপে ধাপে তুলে ধরবেন বলে আজ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
যার অর্থ স্পষ্ট, এত দিন ধরে কংগ্রেস যে ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোদস্তুর কৃতিত্ব দাবি করে আসত, সেটি ধাপে ধাপে মুছে দিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করা। সর্দার পটেলকে সামনে রেখে যে কাজটি আজ শুরুও করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে দিল্লি হাইকোর্টের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েও পটেলের কথা বললেন। দুপুরে ইন্ডিয়া গেটে ‘একতা দৌড়’ শুরু করলেন। সন্ধ্যায় প্রগতি ময়দানে পটেলকে নিয়ে একটি সংগ্রহশালারও উদ্বোধন করলেন। পটেলকে নিয়ে দিনভর এই মহাড়ম্বর করা হলেও ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুতে সকালে নামমাত্র একটি টুইট করেই ক্ষান্ত হয়েছেন তিনি। পটেল নিয়ে এই মাতামাতিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে এইআইসিসি দফতর থেকে ইন্দিরা গাঁধী সংগ্রহশালা পর্যন্ত রাহুল গাঁধীর পদযাত্রাও। সকালে ইন্দিরা স্মরণে সনিয়া-রাহুলের উপস্থিতিও।
ইন্দিরাকে এই অবজ্ঞা নিয়ে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আজ সর্দার পটেলকে নিয়ে এত মাতামাতি করে ইন্দিরা গাঁধীর বলিদানকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। তাঁদের মনে রাখা উচিত, এই পটেলই আরএসএসকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সরকারি বিজ্ঞাপনে তা প্রকাশ করা উচিত মোদী সরকারের।’’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘‘অনেকে প্রশ্ন করেন, আমরা কারা পটেলকে নিয়ে অনুষ্ঠান করার? পটেল কাউকে কোনও কপিরাইট দিয়ে যাননি। আর আমি তো বিজেপি-ওয়ালা, আর সর্দার সাহেব তো কংগ্রেসি। তা-ও শুধুমাত্র এই দেশের প্রতি সর্দার পটেলের অবদানকে দেশের সামনে তুলে ধরার জন্য আমার এত আগ্রহ।’’
বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আসলে পটেল কংগ্রেসে থাকলেও জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে বিবাদ হয়েছিল। কংগ্রেস নেহরু-গাঁধী পরিবারের বাইরে অন্য কাউকে স্বীকৃতি দেয় না। স্বাধীনতা আন্দোলনের কৃতিত্বও নিজেদের বলে দাবি করে। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে একটি বিকৃত ইতিহাস দেশের সামনে পেশ করেছে তারা। এ বারে সেটি বদলের সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী এটির উপরেই জোর দিয়েছেন মাত্র।’’ বিজেপি নেতাদের মতে, ইতিহাসের পাতায় এমন অসংখ্য নাম রয়েছে, যাঁরা একসময় কংগ্রেসে থাকলেও পরে তাঁদেরই বিরোধিতা করেছেন অথবা কংগ্রেস ভুলে গিয়েছে। সর্দার পটেলের পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ নারায়ণ, পন্ডিত মদনমোহন মালব্যের নামে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। আজও ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেন তিনি। যার মাধ্যমে এ দেশেরই রাজ্যগুলির মধ্যে আদান-প্রদান আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: শিখ নিধন নিয়ে ইন্দিরাকে মোদীর খোঁচা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy