টিক্কি: গরম লোহার ছেঁকায় অসুস্থ খুদে। নিজস্ব চিত্র।
এক টুকরো লোহা উনুনে গরম করে বছর দেড়েকের সানু লুহারের বুকে বিশেষ একটি ধমনীর উপর চেপে ধরেছিলেন দাই মা। চিৎকার করে উঠেছিল শিশু। হাত-পা চেপে ধরলেন বাবা-মা। অসহায়ের মতো ধড়ফড় করে নিস্তেজ হয়ে পড়ল সানু।
কিছু দিন আগের ঘটনা। নিউমোনিয়া হয়েছিল সানু-র। রাজস্থানে প্রত্যন্ত উনালি গ্রামে কোনও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নেই। কাছাকাছি হাসপাতালে যেতে অন্তত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে হয়। ভিলওয়াড়া জেলার ১৩টি ব্লকের বেশির ভাগ গ্রামে চিকিৎসার ভরসা বলতে রয়েছেন বয়স্ক দাই মা (যাঁরা ‘ভোপা’ নামে পরিচিত) এবং হাতুড়ে চিকিৎসকেরা। চিকিৎসার বিচিত্র এই পদ্ধতি এঁদের মধ্যে প্রচলিত। তা হল— লোহা, কাপড় বা তুলোর মণ্ড বা মাটির ঢেলা আগুনে গরম করে তা শিশুর বুকে বা পেটে চেপে ধরা।
এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিজের শরীরে ছোটবেলার সেই পোড়া দাগ নিয়ে ঘোরেন। অনেক নাম আছে এই পদ্ধতির। কোথাও বলা হয়, ‘রাখা’ বা ‘দাগ লাগানা’। কোথাও ‘টিক্কি’ বা ‘কালজা’। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই মানছেন, অজমেঢ় ও চিতোরগড়ের অনেক গ্রামেও শিশুদের এই ভাবে পোড়ানো হয়। বেশ কয়েকটি শিশু গত কয়েক বছরে মারাও গিয়েছে।
সানু আপাতত ভর্তি ভিলওয়াড়ার হাসপাতালে। সেখান থেকেই ফোনে তার বাবা নারায়ণ লুহার বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে অসুখ হলে ভোপা-রা এই ভাবেই চিকিৎসা করে। ছোট থেকে দেখে আসছি। তাই একে কখনও খারাপ বা ভুল বলে ভাবিনি।’’
আরও পড়ুন: প্রাথমিক স্তরে পঞ্চম শ্রেণিকে আনতে কমিটি
গত দু’ বছর ধরে এই প্রথার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন ভিলওয়াড়ার শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারপার্সন সুমন ত্রিবেদী। তিনি নিজে চিকিৎসক। জুভেনাইল জাস্টিস আইনে যাতে এই দাই মা এবং হাতুড়ে চিকিৎসকদের গ্রেফতার করা হয় সে ব্যাপারে পুলিশকে অনুরোধ করেছেন তিনি। কিছুটা কাজও হয়েছে।
ভিলওয়ালা শিশুসুরক্ষা কমিটির চেয়ারপার্সন সুমন ত্রিবেদী। নিজস্ব চিত্র।
গত বছর জানুয়ারিতে ভিলওয়াড়ার দু’বছরের মেয়ে খুশবুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তার বুকে তপ্ত লোহা চেপে ধরেছিলেন দাই মা বছর সত্তরের লাডি বৈষ্ণব। আট দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর খুশবু মারা যায়। লাডি আপাতত জামিনে মুক্ত। টেলিফোনে বলেন, ‘‘২৫ বছর এই কাজ করছি। এই একটা মেয়ের ক্ষেত্রে সব গোলমাল হয়ে গেল।’’
রাজস্থানের শিশু চিকিৎসকদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, কিছুটা হলেও পরিস্থিতি পাল্টেছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শিশুদের এই ভাবে পোড়ানোর ১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু সুমনের আক্ষেপ, ‘‘সবাই জামিন পেয়ে যায়। তার পর অনন্ত কাল মামলা চলে। কাউকে শাস্তি না দেওয়া গেলে কোনও প্রথা বন্ধ করা খুব মুশকিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy