রঞ্জন গগৈ
তিনিই প্রবীণ বিচারপতিদের পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছিলেন।
সেই বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রধান বিচারপতির আসনে বসতে দিতে চায় না বলে অভিযোগের আঙুল উঠল। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিচারপতি গগৈকে আটকাতেই বর্তমান প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের অবসরের বয়স দু’বছর বাড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
বিরোধীরা সরব হয়েছেনই। এমনকি অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানার মন্ত্রী যশবন্ত সিন্হারও দাবি, ‘‘বিচারপতিদের অবসরের বয়স দু’বছর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব আসলে বিচারপতি গগৈয়ের প্রধান বিচারপতির পদে পদোন্নতি আটকানো।’’ বর্তমান প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের আগামী ২ অক্টোবর অবসর নেওয়ার কথা। তাঁর পরে দ্বিতীয় প্রবীণতম বিচারপতি গগৈয়েরই প্রথা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা। তিনি অবসর নেবেন ২০১৯-এর নভেম্বরে। অবসরের বয়স ২ বছর বাড়ানো হলে, প্রধান বিচারপতির পদে দীপক মিশ্র ২০২০ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত থেকে যাবেন। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে, এই সময়ে বিচারপতিদের অবসরের বয়স বাড়ানোর উদ্দেশ্য হল প্রধান বিচারপতি মিশ্রের মেয়াদ দু’বছর বাড়ানো, যাঁকে সরকার ইমপিচমেন্ট থেকে রক্ষা করেছে।’’
আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ অবশ্য দাবি করেছেন, খাতায়-কলমে এমন কোনও প্রস্তাব নেই। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর। হাইকোর্টের বিচারপতিদের ক্ষেত্রে তা ৬২ বছর। তা বাড়িয়ে সরকার যথাক্রমে ৬৭ ও ৬৪ বছর করতে সরকার বিল আনছে বলে গত কাল দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘বড় হাতের এন দিয়ে নো!’’ কিন্তু বিরোধীদের যুক্তি, অবসরের বয়স না বাড়িয়ে প্রধান বিচারপতির পদের মেয়াদ বেঁধে দিয়েও প্রধান বিচারপতি মিশ্রকে ওই শীর্ষ পদে রেখে দেওয়া সম্ভব। তবে সরকারি সূত্রের যুক্তি, অবসরের বয়স বাড়াতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। চলতি বাদল অধিবেশনেই তা করে ফেলা বেশ কঠিন। রাজ্যসভায় সরকারের সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাও নেই।
সরকার মুখে যা-ই বলুক, অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালই সম্প্রতি একাধিক বিচারপতির অবসরের দিনে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অবসরের বয়স বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর যুক্তি, বিচারপতিদের পরিণত হয়ে উঠতে সময় লাগে। যত দিনে তিনি নতুন চিন্তাভাবনা প্রয়োগের জায়গায় আসেন, তত দিনে অবসরের বয়স এসে যায়। বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এই দাবি তুলেছেন।
কংগ্রেস মুখপাত্র তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির যুক্তি, ‘‘প্রথমত, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে অবসরের এই ফারাক থাকাই উচিত নয়। সরকার অবসরের বয়স বাড়ালে বিচার বিভাগে শূন্যপদের সমস্যা মেটানো যায় ঠিকই। কিন্তু একেবারে ভোটের আগে সরকারের এই প্রচেষ্টা একেবারেই নিরীহ মনে হচ্ছে না।
এর পিছনে অভিসন্ধি রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy