Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ধর্মঘট ঠেকাতে মোদীর দাওয়াই শ্রম সম্মেলন

জমি আইন সংশোধনের জেদ দেখালেও তার রাজনৈতিক তাপ ইতিমধ্যেই গায়ে লাগতে শুরু করেছে সরকারের। এর মাঝে আবার ১১টি শ্রমিক সংগঠন দেশ জুড়ে ধর্মঘট ডেকে দেওয়ায় আশঙ্কার মেঘ দেখছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

জমি আইন সংশোধনের জেদ দেখালেও তার রাজনৈতিক তাপ ইতিমধ্যেই গায়ে লাগতে শুরু করেছে সরকারের। এর মাঝে আবার ১১টি শ্রমিক সংগঠন দেশ জুড়ে ধর্মঘট ডেকে দেওয়ায় আশঙ্কার মেঘ দেখছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

শ্রমিক সংগঠনগুলি ধর্মঘট ডেকেছে ২ সেপ্টেম্বর। সূত্রের খবর, তার আগেই তাদের কিছুটা প্রশমিত করতে দ্রুত ভারতীয় শ্রম সম্মেলন ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে দু’দিন আগে শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী বঙ্গারু দত্তাত্রেয়কে ডেকে পাঠান মোদী। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, সম্মেলনের তিনি নেতৃত্ব দেবেন। জুলাইয়ের শেষ বা অগস্টের গোড়ায় যেন ওই সম্মেলন ডাকা হয়।

শ্রমিকদের দশ দফা দাবি খতিয়ে দেখার জন্য এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী গড়ে দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ওই গোষ্ঠীর প্রধান। মোদী তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন, শ্রম সম্মেলন ডাকার আগে তিনিও যেন শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনায় বসেন। জেটলির সঙ্গে ওই গোষ্ঠীতে রয়েছেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং কয়লা ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী পীযূষ গয়াল।

কেন্দ্রের এই তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিপিআই নেতা তথা এ আইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কবে শ্রম সম্মেলন ডাকা হবে, তা নিয়ে সরকারের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে সরকার যদি ভেবে থাকে স্রেফ সম্মেলন ডাকলেই চিড়ে ভিজবে, সেটা হবে না।’’ কারণ হিসেবে গুরুদাসবাবু বলেন, শ্রম সম্মেলন হয় ত্রিপাক্ষিক। সেখানে শ্রমিক, সরকার ও মালিক তিন পক্ষই থাকে। সবাই সবার কথা বলে সেখানে। কিন্তু সম্মেলনের সুপারিশগুলি মানা সরকারের কাছে বাধ্যতামূলক নয়। অতীতে এমন বহু সুপারিশ হয়েছে, যা সরকার এখনও মানেনি। তাঁর কথায়, শ্রমিকদের দাবিগুলি পরিষ্কার। তা হল— শ্রম আইন সংস্কারের নামে শ্রমিকদের শোষণের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা করতে হবে। জমি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। লাভে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ চলবে না। গুরুদাসবাবু বলেন, সরকার এই দাবিগুলি মানবে কি না, সেটাই আসল কথা।

যে ১১টি শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তার মধ্যে আরএসএসের শাখা সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)-ও রয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বিজেপির সমর্থক হলেও দেশজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন যে পথে চলছে, বিএমএস তার বাইরে যেতে পারে না। অনেকের ধারণা— বিএমএস নেতাদের পরামর্শেই ধর্মঘটের আগে শ্রম সম্মেলন ডাকার সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রশ্ন হল, শ্রমিক সংগঠনগুলিকে প্রশমিত করতে সরকার শ্রম সম্মেলন ডেকে কী প্রস্তাব দিতে চলেছে?

শ্রম মন্ত্রক সূত্রের খবর, শ্রম আইন সংস্কার করা সময়ের দাবি। জমি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ খারিজ করার প্রশ্নও উঠছে না। তবে শ্রম সম্মেলনে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার দাওয়াই দিতে পারে মোদী সরকার। প্রত্যেকের ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়ার পর তাঁদের স্বাস্থ্য বিমার জন্য নতুন প্রকল্প ঘোষণা করতে পারে অর্থ মন্ত্রক। অটল পেনশন যোজনাকেও ওই প্রকল্পের সঙ্গে জোড়া হতে পারে।

বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক বি এন রাই সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এমনকী তাঁর এ-ও দাবি, শ্রম আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁদের মতামতগুলিও ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করছে সরকার। যদিও গুরুদাসবাবুরা এখনও অনমনীয়। তাঁরা বলছেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে সরকার ছেলে ভোলানোর খেলায় নেমেছে! কিন্তু এ ভাবে শ্রমিকদের শান্ত করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE