Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভাগাড়ের ভয় পুরীতেও, ভাজা মাছে না বাঙালির

পুরীর সৈকতে একটি মাছভাজার দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বেলঘরিয়ার শিপ্রা ভট্টাচার্য। সঙ্গে স্বামী, পেশায় রেলকর্মী রাজু ভট্টাচার্য ও দুই মেয়ে। মা-মেয়েদের আবদার— চিংড়ি খাবেন। ধমকে উঠলেন রাজুবাবু, “ঘুরতে এসে কি সব ভুলে গেলে! ভাগাড় কাণ্ডের পরেও তোমাদের হুঁশ ফেরেনি? এই সব বাসি মাছ খেলে আর বাঁচতে হবে না।”

মাছ আছে, ক্রেতা নেই। পুরীতে। —নিজস্ব চিত্র।

মাছ আছে, ক্রেতা নেই। পুরীতে। —নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
পুরী শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০৩:৪০
Share: Save:

বেলাভূমির ধার বরাবর রাস্তা। সেখানেই সার দিয়ে সব দোকান। ফুচকা, ধোসা, চিকেন পকোড়া থেকে মাছভাজা— পর্যটক টানতে হাজির সবই। শুধু পর্যটকের দেখা নেই।

ছবিটা পুরী সৈকতের। পুরীর সৈকতে একটি মাছভাজার দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বেলঘরিয়ার শিপ্রা ভট্টাচার্য। সঙ্গে স্বামী, পেশায় রেলকর্মী রাজু ভট্টাচার্য ও দুই মেয়ে। মা-মেয়েদের আবদার— চিংড়ি খাবেন। ধমকে উঠলেন রাজুবাবু, “ঘুরতে এসে কি সব ভুলে গেলে! ভাগাড় কাণ্ডের পরেও তোমাদের হুঁশ ফেরেনি? এই সব বাসি মাছ খেলে আর বাঁচতে হবে না।”

এই আতঙ্কেই পড়শি রাজ্যের সৈকত ভূমিতেও আছড়ে পড়েছে ভাগাড় কাণ্ডের ঢেউ। স্কুল-কলেজে গরমের ছুটির মরসুমে পুরীতে এখন দেদার ভিড়। তার নব্বই ভাগ বাঙালি। তবু খাদ্যরসিক, মাছপ্রিয় বঙ্গসন্তানরা সৈকতে খাবারের স্টলের ধারেকাছে ঘেঁষছেন না।

হুগলির গুড়বাড়ির ব্যবসায়ী সৌমেন ঘোষ জানালেন, তাঁরা ৩২জন একসঙ্গে এসেছেন। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজেরাই রান্না করে খাওয়াদাওয়া করছেন। সৌমেনের কথায়, ‘‘আগে পুরীতে এসে কত মাছভাজা, চিকেন পকোড়া খেয়েছি। কিন্তু ভাগাড় কাণ্ডের পরে আর নয়।” নিউটাউন থেকে আসা বেসরকারি সংস্থার কর্মী পার্থ ঘোষ বলেন, “বাছাই করা ভাল হোটেলে খাওয়াদাওয়া করছি। তবে চিকেন বা মাছভাজা খাওয়ার প্রশ্নই নেই।”

আরও পড়ুন:

‘বাবা’ পেতে ডিএনএ পরীক্ষা দাবি

এমন অবস্থায় স্টল থাকছে ফাঁকা। কমছে বিকিকিনি। মাছভাজার দোকানি অতীশ পণ্ডাও বললেন, “মাস দেড়েক আগেও দিনে ৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হচ্ছিল। এখন এত ভিড়। কিন্তু মেরেকেটে ২ হাজার টাকার জিনিসও বিক্রি হচ্ছে না।” মাছভাজা থেকে চিকেন ড্রামস্টিকের বিক্রি কমেছে বলে হতাশ গলায় জানালেন গোল্ডেন বিচের ফুডস্টল মালিক নিরঞ্জন বেহেরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পর্যটকদের আতঙ্ক নেহাত অমূলক নয়। সৈকতের ধারে ওই সব দোকানে যে বেশ কয়েকদিনের বাসি খাবার বিক্রি হয়, তা মানছেন দোকানিরাই। স্বর্গদ্বারের সামনে তিন পুরুষের ভাজাভুজির দোকান রাজকিশোর পণ্ডার। তাঁর ছেলে অতীশ পণ্ডা মানলেন, “আমরা দু’-তিনদিন পর্যন্ত মাছ, মাংস রেখে ব্যবসা করি। তার পরে বিভিন্ন রেস্তরাঁর এজেন্টরা এসে মাছ, মাংস নিয়ে যায়। আসলে ওঁদের ফ্রিজার থাকায় মাছ-মাংস রাখার সুবিধা রয়েছে।”

এমন পরিস্থিতি অজানা নয় পুরীর প্রশাসনেরও। স্থানীয় সূত্রের খবর, রথযাত্রার সময় এই সব দোকানে জোরদার অভিযান চলে। কিন্তু বছরের অন্য মরসুমের সে সবের বালাই নেই বলেই অভিযোগ। পুরীর পুরপ্রধান জয়ন্তকুমার সারেঙ্গি মানছেন, “বহু হোটেল, রেস্তরাঁ ও বিচের ধারের ফুডস্টলে বাসি মাছ-মাংসের কারবার চলে। তবে আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান করি। এ বার ধারাবাহিক অভিযান চালাব।” পুরী জেলার জনস্বাস্থ্য আধিকারিক ভাস্করচন্দ্র সামন্ত রায়েরও আশ্বাস, “শীঘ্রই অভিযান হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Puri Fish Carcass Meat Tourists Food Habits
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE