বন্যাদুর্গতদের আকাশপথে উদ্ধার করছে ভারতীয় নৌসেনা। দক্ষিণ কেরলে। ছবি: রয়টার্স।
সামনে ধসে রাস্তা বন্ধ। পিছনে জলে ডুবে গোটা রাজ্য!
বেড়াতে বেরিয়ে জাতীয় সড়কের উপরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ ভাবে আটকে থাকতে হবে কখনও ভাবিনি। নাওয়া-খাওয়া নেই, কেরলের রাস্তাতেই ঘর। বৃহস্পতিবার রাতটা অবশ্য হোটেলে কেটেছে। তবে কত দিন? টাকাও প্রায় শেষ। এটিএম বন্ধ। খাবার অগ্নিমূল্য। হোটেলগুলোতে জলের প্রবল আকাল।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করেছি। ইতিমধ্যেই নৈনিতাল, পুরী, বিষ্ণুপুর এবং শান্তিনিকেতনে ঘুরতে গিয়েছি আমি আর অর্ঘ্য। এবার ঠিক হল, কেরল যাব। গত ১১ অগস্ট কলকাতা ছাড়ার সময়েই শুনেছিলাম, কেরলের অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু প্লেনের টিকিট কাটা রয়েছে, হোটেলের ভাড়াও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। স্বামী-স্ত্রী তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম।
১২ অগস্ট, কোচিতে প্রথম দিন কিছু মালুম হয়নি। দ্বিতীয় দিন মুন্নার। সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি। কোনও মতে দিনটা কাটিয়ে পরদিন আলাপুঝা। ভারতের ভেনিস বলে কথা, আলাপুঝা না দেখলে হয়! তবে যত না নয়নাভিরাম তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর লেগেছে আলাপুঝা। প্রবল বৃষ্টি আর ঝড়ে আমাদের বোট খারাপ হয়ে যায়। কোনও মতে হোটেলে ফিরি। টিভিতে তত ক্ষণে দেখাচ্ছে, সতর্কতা জারি হয়েছে। তখনও তেমন দুশ্চিন্তা হয়নি। মনে হল, ১৫ তারিখের টিকিট কাটা। কিন্তু সেদিনই সকালে ফোনে মেসেজ এল, কলকাতায় ফেরার বিমান বাতিল। অর্ঘ্য জানাল, ১৮ তারিখ পর্যন্ত সমস্ত বিমানের ওঠানামা বাতিল। কোচি বিমানবন্দরই ভেসে গিয়েছে!
ঠিক হল, ট্রেনে কলকাতা ফিরব। মিনিট কয়েকের মধ্যে সেই পরিকল্পনাও বাতিল। বন্যায় লাইন ডুবে গিয়েছে। এ দিকে কোচি দ্রুত ছাড়তে হবে। যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানে তখনই হাঁটুজল। গাড়ি ভাড়া করে বেঙ্গালুরু বা চেন্নাই হয়ে ফেরার মতো টাকা নেই সঙ্গে। অবশেষে বাসে ফেরার পরিকল্পনা হল।
গত পরশু রাতের বাসে বেশ কিছুটা এগিয়েই বুঝলাম, আটকে গিয়েছি। রাত ১টা নাগাদ জাতীয় সড়কে বাস দাঁড়িয়ে গেল! প্রায় ১২ ঘণ্টা ওইখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে। জল নেই, খাবার নেই। প্রাকৃতিক কাজের জন্য ভরসা সামনের জঙ্গল! বিকেলের দিকে বোঝা গেল, বাস আর এগোবে না। সামনে ধস নেমে পরপর দু’টো গাড়ি চাপা পড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই রাস্তা বন্ধ।বাসচালক জানালেন, রাস্তা না খোলা পর্যন্ত রাস্তায় বসে থাকার চেয়ে সামনের হোটেলে ওঠা ভাল।
ধস নামার জায়গা থেকে ঘণ্টাখানেক দূরে একটা ছোট হোটেলে উঠেছি কাল রাতে। তবে এ ভাবে কত দিন থাকতে হবে জানা নেই। এলাকার একটা এটিএমও কাজ করছে না। বাড়ির লোক চিন্তায়। কলকাতা থেকে টাকা পাঠানোরও উপায় নেই।
আপাতত অপেক্ষা। রাস্তা খুলবে কবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy