হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছোট্ট আরসালান। বিস্ফোরণে দৃষ্টি হারিয়েছে সে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের অস্ত্রোপচার হবে। তার আগে চামচে করে ছেলের মুখে সুপ তুলে দিচ্ছিলেন মুহম্মদ আসলাম শেখ। ছেলের কানে কানে বললেন, ‘‘আর দু’এক দিনের মধ্যেই তুমি ভাল হয়ে যাবে। সব দেখতে পাবে।’’ আট বছরের ছেলের ফ্যাকাশে মুখে চিলতে হাসি ফোটার আগেই ঝাপসা হয়ে উঠেছিল মুহম্মদের দু’চোখ।
শ্রীনগরের ওই হাসপাতালেই পাশের ঘরে শুয়ে আরসালানের সম্পর্কিত দাদা তাহির আহমেদ। ১২ বছরের তাহিরের একটা হাত উড়ে গিয়েছে বিস্ফোরণে। গুরুতর জখম তাহিরের দিদি রাজ়িয়াও। দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানে এক বিস্ফোরণের জেরে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে আব্দুল গনির গোটা পরিবার।
ঘটনাটা মাসখানেক আগের। ১১ জুলাই বাড়ির উঠোনে খেলছিল আবদুল গনির চার নাতি-নাতনি। আরসালান, তাহির, রাজ়িয়া আর মেয়ে রুখসানার ছেলে সালিক ইকবাল। ওদের কাছেই ছিলেন রুখসানা। আচমকা বিস্ফোরণের শব্দে কানে তালা ধরে গিয়েছিল। উড়ে আসা স্প্লিনটারের চোটে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন তিনিও। কোনও রকমে উঠে বাচ্চাদের দিকে ছুটে এসে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে ওরা। শুধু সালিক নড়ছে না। ছেলেটাকে বুকে চেপে হাসপাতালের পথে দৌড়েছিলেন রুখসানা। সালিককে দেখে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, মারা গিয়েছে সে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের আগের দিন কাছের কুনদালান গ্রামে জঙ্গিদের সঙ্গে সেনার লড়াই বেধেছিল। সেনার গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় জঙ্গিদের আশ্রয়। সে দিনের লড়াইয়ের পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিল আরসালানরা। নিছক কৌতূহলের বশে সেখান থেকে কুড়িয়ে আনে অদ্ভুত দেখতে কয়েকটা জিনিস। খেলনা ভেবে সেগুলো নাড়াচাড়া করাতেই ওই বিস্ফোরণ। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা লড়াইয়ের পরে কাশ্মীরের নানা অংশে ছড়িয়ে রয়েছে বিস্ফোরক। ফলে এমন ঘটনার সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই মনে করছে প্রশাসন।
আরসালান, তাহিরকে সুস্থ করতে একাধিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। কোমরের তলা থেকে অনেকগুলো হাড় ভেঙেছে রাজ়িয়ার। আপাতত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এক দিন ছাড়া ছাড়া তাকে ড্রেসিং করাতে হচ্ছে। তাহির-রাজ়িয়ার জন্যে এখন হাসপাতালের পাশেই ঘর ভাড়া করে থাকছেন বাবা-মা। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে রাজ়িয়ার প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন। ‘‘এত খরচ কীভাবে চালাব বুঝতে পারছি না’’, শ্রীনগরের হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বলছিলেন রাজ়িয়ার বাবা খুরশিদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy