বৃহস্পতিবার সংসদে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। ছবি: পিটিআই।
তুমুল বিরোধিতার মধ্যে বৃহস্পতিবার লোকসভায় পেশ হল তিন তালাক বিল।
এ দিন লোকসভায় বিলটি উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বলেন, “আজ দেশের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন। নারী শক্তি, নারী সম্মান এবং নারীদের অধিকার রক্ষার্থে এ এক তাত্পর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।”
অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তহাদুল (এআইএমআইএম), বিজেডি, এআইএডিএমকে-সহ বেশ কিছু দল এই বিলের বিরোধিতা করলেও কংগ্রেস কিন্তু সে রাস্তায় হাঁটেনি। বরং বিলটি কী ভাবে সংশোধন করা যায় সেই প্রশ্নই তুলেছে তারা।
আরও পড়ুন: রাহুল দৌড়চ্ছেন, গোয়ায় ফুরফুরে মেজাজে ছুটিতে সনিয়া
এ দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই তিনি বার্তা দেন, সব দলের ঐকমত্যেই বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা করতে হবে। অন্য দিকে, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে স্থির হয় তিন তালাকের বিরোধিতা করা হবে না ঠিকই, তবে বিলে ‘শাস্তি’ হিসাবে যে তিন বছর কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে তাদের প্রবল আপত্তি আছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “মহিলাদের সুরক্ষার জন্য এই বিলকে আরও শক্রিশালী করতে হবে আমাদের।” পাশাপাশি তিনি এ প্রশ্নও তোলেন, ‘‘বিলে বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী ও পরিবারকে পরিত্যাগ করেন তাঁকে জেলে পাঠানো হবে। কিন্তু জেলে থাকলে তিনি কী ভাবে পরিবারের ভরণপোষণ করবেন? সে কথা নেই। সেটাও তো থাকা উচিত।’’
সংসদে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। ছবি: পিটিআই।
তবে, অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তহাদুল (এআইএমআইএম), বিজেডি, এআইএডিএমকে-র মতো দলগুলো তুমুল হইচই জুড়ে দেয় এ দিন সংসদে। এআইএমআইএম-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ তোলেন, এই বিল এনে মুসলিম মহিলাদের প্রতি অন্যায় করছে কেন্দ্র। এতে তাঁদের স্বাধীনতার অধিকার খর্ব হবে। বিজেডি-র অভিযোগ, বিলটি ভুলে ভরা। ওয়াইসির বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “মুসলিম মহিলাদের যন্ত্রণা বোঝার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পরেও এমন ঘটনা ঘটেছে।” এ দিন তিনি রামপুরের একটি ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে জানান, শুধুমাত্র দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার জন্য এক মুসলিম মহিলাকে তাঁর স্বামী তালাক দিয়েছেন! পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, ইসলামিক দেশগুলো তিন তালাক নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে, তা হলে ভারতের মতো একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হয়ে সেটা কেন মেনে নিতে পারছে না? এ ক্ষেত্রে তো সরকার শরিয়ত আইনে নাক গলাচ্ছে না!
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের তীব্র নিন্দায় সুষমা, ‘ধিক্কার’ উঠল গোটা সংসদ থেকে
কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, “আমরা তিন তালাক বিলকে সমর্থন জানাচ্ছি। কিন্তু বিলের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। এই বিল সংসদীয় প্যানেলে রিভিউ-এর জন্য পাঠানো উচিত।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরোধীরা যতই হইচই করুক না কেন, বিলটি লোকসভায় পাশ করাতে খুব একটা বেগ পতে হবে না। কেন না, এখানে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে বিলটি যখন রাজ্যসভায় উঠবে, সেখানে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে মোদীর সরকারকে। বিজেপি তাই চাইছে বিজেডি এবং এআইএডিএমকে-র মতো দলগুলোকে পাশে পেতে। যাতে রাজ্যসভায় বিলটি কোনও ভাবে আটকে এদের হাত ধরেই বৈতরিণী পার করতে পারেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy