Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জল ধরে, জল ভরে সবুজ বিপ্লব বিহারের দুই নারীর

শুধু জল ধরে আর সেই জল বণ্টন করেই শুখা গ্রামের ছবি পাল্টে দিয়েছেন তাঁরা, দয়া দেবী আর রুনা দেবী। শুধু নিজেদের গ্রাম নয়, পাল্টে দিয়েছেন আশপাশের বারোটি গ্রামের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতটাই। এখন তাঁদের দেখানো পথেই স্বপ্ন দেখছেন বিহারের বাঁকা জেলার কালাদিন্দা ও আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।

দয়াদেবী ও রুনাদেবী। — নিজস্ব চিত্র

দয়াদেবী ও রুনাদেবী। — নিজস্ব চিত্র

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৮
Share: Save:

শুধু জল ধরে আর সেই জল বণ্টন করেই শুখা গ্রামের ছবি পাল্টে দিয়েছেন তাঁরা, দয়া দেবী আর রুনা দেবী। শুধু নিজেদের গ্রাম নয়, পাল্টে দিয়েছেন আশপাশের বারোটি গ্রামের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতটাই। এখন তাঁদের দেখানো পথেই স্বপ্ন দেখছেন বিহারের বাঁকা জেলার কালাদিন্দা ও আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।

১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৈরি হয়েছিল বাঁকা জেলা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাস্তাঘাট-সহ উন্নয়নের সব মাপকাঠিতেই পিছিয়ে ছিল জেলাটি। জেলার ১১টি ব্লকের অন্যতম কাতোরিয়া। এই ব্লকের অধীনেই কোলহাসার গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই পঞ্চায়েতের অধীন কালাদিন্দা। ২০০৮ সালে সেই গ্রামেই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রশিক্ষণ দেয় মহিলাদের। তৈরি করা হয় বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী। কিন্তু অন্য আর পাঁচটা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মতো কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন না তার দুই সদস্য রুনাদেবী ও দয়াদেবী। কখনও স্কুলে যাননি তাঁরা। জন্মের সন-তারিখও ঠিক করে মনে নেই। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সেই প্রশিক্ষণ আর নাবার্ডের অর্থ সাহায্য তাঁদের চিন্তাটাকেই পাল্টে দেয়।

গ্রামের বুজে যাওয়া একটি ছোট জলাশয় পরিষ্কার করে বিশুদ্ধ, মিষ্টি বৃষ্টির জল ধরার কাজ শুরু করেন দয়া-রুনা। বুজে যাওয়া জলাশায়টির মালিকও কম টাকায় সেটা তাঁদের লিজ দিয়ে দেন। সেই জলাশয়টি খনন করে বর্ষায় জল ধরে মাছ চাষ করতে শুরু করেন রুনাদেবী ও দয়াদেবীর স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এ ছাড়া, বর্ষার মরসুম পার হতে চাষের জমিতেও জল দেওয়া শুরু করেন তাঁরা। বছরে এক বার যে মাঠে চাষ হত, জল সরবরাহ হতেই সেখানে তিন বার ফসল ফলতে শুরু করে। তখন গ্রামেরই আরও কয়েকটি পুকুর লিজ নেন দু’জন। ক্রমশ পাল্টাতে থাকে কালাদিন্দার ছবিটাই।

সেই ‘বার্তা’ রটে যায় কালাদিন্দা ছাড়িয়ে যায় অন্য গ্রামেও। আশেপাশের বারোটি গ্রামে কাজের পরিধি ছড়াতে থাকেন তাঁরা। গত আট বছরে এই এলাকার জলচিত্রটাই পাল্টে দিয়েছেন তাঁরা। গরমের সময়ে বছর কয়েক আগেও শুখার মোকাবিলা করতে যাঁদের হিমসিম খেতে হত, সেই গ্রামের মানুষরাও রুনা-দয়ার নেতৃত্বে এখন জলের ভাণ্ডার নিয়ে তৈরি। স্বাভাবিক ভাবেই আয় বেড়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর। তৈরি হয়েছে ১৩ কোটি টাকার তহবিল। এখন ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০টি জলাধার পরিচালনা করেন তাঁরা।

বারোটি গ্রামের বারো সদস্যকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কমিটি। কমিটির সম্পাদক ও কোষাধক্ষ্য দয়াদেবী ও রুনাদেবী। স্কুলের গণ্ডি না পেরিয়েও হিসেব রাখেন কীভাবে! মোবাইলের অন্য প্রান্তে হাসতে হাসতে রুনাদেবী বলেন, ‘‘ছোট থেকেই মুখে মুখে হিসেব করে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তাই এখন আর সমস্যা হয় না।’’ এ ছাড়া দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এক জন হিসাবরক্ষকও রাখতে হয়েছে তাঁদের। আর নারীশক্তির এই সাফল্যে গর্বিত দয়াদেবী বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের কাজ দেখে অনেকেই হেসেছিলেন। এখন হাসেন না। আমাদের সহায়তা চান। এখানেই ভাল লাগা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

green revolution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE