আধার তথ্যের চুরি রুখতে নতুন ধাঁচের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করল ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)’। এই ব্যবস্থায় সব কাজে আধার নম্বর না দিলেও চলবে। আধার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রত্যেক আধার-মালিক ১৬ অঙ্কের একটি সংখ্যা পাবেন, যেটি হবে তাঁর ‘ভার্চুয়াল আইডি’। পরিষেবাদাতা সংস্থাকে এই নম্বরটি দিলেই চলবে। যা থেকে সংস্থাগুলি শুধু তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যই পাবে। প্রয়োজনের বাইরে আধারের সঙ্গে যুক্ত বায়োমেট্রিক ও অন্য যাবতীয় তথ্য তাদের হাতে চলে যাবে না।
‘ভার্চুয়াল আইডি’ মিলবে ইউআইডিএআই-এর ওয়েবসাইট, আধার নথিভুক্ত কেন্দ্র বা আধারের সরকারি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন থেকে। চাইলে নম্বরটি পাল্টেও নেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে আগেরটি বাতিল হয়ে যাবে। ১৬ অঙ্কের ‘ভার্চুয়াল আইডি’-তে থাকা ব্যক্তির নাম, ঠিকানা বা ফটো দিয়েই ‘সিম ভেরিফিকেশন’ বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার মতো কাজ হয়ে যাবে। প্রতিটি পরিষেবার জন্য বারবার ১২ সংখ্যার আধার জানাতে হবে না।
এর পাশাপাশি চালু হচ্ছে ‘ই-কেওয়াইসি’ ব্যবস্থা। গ্রাহকদের তথ্য জানতে যে ‘নো ইওর কাস্টমার’ ফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন সংস্থা, সেই ব্যবস্থাকে অনলাইনে আনা হবে এতে। এতে যে ই-তথ্যভাণ্ডার তৈরি হবে, তা ব্যবহার করার অধিকার থাকবে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার। তারা প্রয়োজনে ওই তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের কাছে রেখে দিতে পারবে। বেসরকারি সংস্থাগুলিও ‘ই-কেওয়াইসি’-র তথ্য পাবে। তবে সেই তথ্য দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সংগ্রহে রাখার অধিকার পাবে না তারা।
নতুন এই দুই ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে আগামী মার্চ মাস থেকে। তবে আধার তথ্য নিয়ে কাজ করে এমন সব সংস্থাকে আরও কিছুটা সময় দেওয়া হচ্ছে। আধার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য জুন মাসের মধ্যে নিজেদের সফ্টওয়্যারে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নয়তো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে সংস্থাগুলিকে।
বর্তমানে ব্যাঙ্কের আকাউন্ট খোলা, মোবাইল সিম সংযোগ, বিমা থেকে শুরু করে সরকারি অনুদান-সব কিছুরই জন্য প্রয়োজন ১২ সংখ্যার আধার নম্বর। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকেই অভিযোগ উঠেছে যে, দেশের ১১৯ কোটির মানুষের আধার তথ্য আদৌও সুরক্ষিত নয়। বিশেষ করে সম্প্রতি ট্রিবিউন পত্রিকার সাংবাদিক ৫০০ টাকার বিনিময়ে আধারের তথ্য হাতে পাওয়ার পরে সেই অভিযোগ আরও তীব্র হয়েছে। ওই ঘটনার থেকে আধার ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয় সব মহলে।
তথ্য নয়ছয় নিয়ে বিতর্কের আবহে আধার কর্তৃপক্ষের এ দিনের সিদ্ধান্তে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, তথ্য ফাঁস থেকে শিক্ষা নিয়েই কি নতুন এই সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত? এই দাবি মানতে নারাজ ইউআইডিএআই। তাঁদের দাবি, কয়েক মাস ধরেই এর প্রস্তুতি চলছিল। এত বড় সিদ্ধান্ত মাত্র এক সপ্তাহে নেওয়া বা পরীক্ষামূলক ভাবে সেটির প্রয়োগ করে দেখা অসম্ভব। ঘটনাচক্রে শুধু দু’টোর সময়টা মিলে গিয়েছে।
যদিও প্রশ্ন উঠছে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘ভার্চুয়াল আইডি’-ও হ্যাক হতে পারে। সেই পথে নয়ছয় হতে পারে তথ্য। ‘ই-কেওয়াইসি’-র তথ্যভাণ্ডার থেকে পাওয়া তথ্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি জমিয়ে রাখতে না দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কারণ, দেশবাসীর যাবতীয় তথ্য এক বার পেলেই তা ব্যবসায়িক স্বার্থে কাজে লাগাতে পারছে তারা। সেই তথ্য তাদের কাছে মহার্ঘ্য। কিন্তু মুনাফার জন্য যাঁদের তথ্য বেসরকারি সংস্থাগুলি ব্যবহার করবে, তাঁরা কিছুই পাবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy