ব্যাঙ্ক রোড, কাছারি রোড, সিভিল লাইন, পুলিশ লাইন- ছয়লাপ পোস্টারে পোস্টারে।
না, নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের নয়। পোস্টারের লড়াইয়ে এখানেও এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির ‘গাঁধী’, বরুণ গাঁধী। ঠিক যে ভাবে যাবতীয় সমীক্ষায় এগিয়ে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ হিসেবে। সঙ্গম নগরীতেও পোস্টার-যুদ্ধে এগিয়ে তিনিই।
পোস্টারে বরুণের বড় ছবি, আর সঙ্গে ছোট ছবি নরেন্দ্র মোদীর ও বাকি নেতাদের। না, নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে এই পোস্টার নয়। বরং বিজেপির রাজনৈতিক অবস্থান মেনেই উত্তরপ্রদেশে ‘মিশন ২৬৫’-এর কথা বলা হয়েছে। কোথাও বা আক্রমণ করা হয়েছে রাজ্যের অখিলেশ সরকারকে। কিন্তু শহরে পা রাখলেই মনে হবে, দলের একমাত্র মুখ বরুণ গাঁধীই। দলের ভবিষ্যতও তিনি। দলের একমাত্র সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে বরুণেই।
আর এই অতি ‘বাড়াবাড়ি’তেই এখন বরুণের উপর বিরক্ত দলের নেতৃত্ব। অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহের কথায়, “শুধুমাত্র পোস্টার দিয়েই যদি নেতা হওয়া যেত, তাহলে তো বাকি সকলে এই পথ ধরেই চলতে পারতেন। এত বেশি পোস্টার তাঁর ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। যত তিনি এ ধরণের আচরণ করবেন, ততই তাঁর সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে থাকবে।”
বরুণের ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য বলছে, ইলাহাবাদে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেই বরুণের নাম মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ঘোষণা করে দেওয়া উচিত। তা না হলে এই রাজ্যে বিজেপি আর মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সব সমীক্ষায় যখন বরুণের নামই এগিয়ে থাকছে, তখন তাকে উপেক্ষা করে কী লাভ? পোস্টারে তাঁর সমর্থকদের সেই মনোভাবই ফুটে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপির সভাপতি কেশব মৌর্য অবশ্য বলছেন, দলের কোনও নেতা-কর্মী যদি পোস্টার লাগাতে চান, তাতে কোনও বাধা নেই। বড় নেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে যে কেউ এই কাজ করতে পারেন।
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের কাছে সব থেকে বেশি অসন্তোষের কারণ বরুণের পোস্টারের পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী বলে পরিচিত সঞ্জয় জোশী ও শত্রুঘ্ন সিনহার ছবিও দেখা যাচ্ছে। দলের এক নেতার কথায়, বরুণ যে ভাবে বাড়াবাড়ি করছেন, তাতে ধীরে ধীরে তিনি দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের মধ্যে সামিল হচ্ছেন। দল তাঁকে এক সময় সাধারণ সম্পাদক করেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলির দায়িত্ব দিয়েছে, তবু এখনও পর্যন্ত গাঁধী পরিবারের স্বভাব ত্যাগ করে বিজেপিকেই বুঝতে পারেননি।
বিজেপির এক উত্তরপ্রদেশের নেতা বলেন, “আমাদের কাছে তো এমনও খবর আছে, বরুণ আরও বড় পরিকল্পনা করে বসে আছেন। সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ আছে বরুণের। বরুণ যে ভাবে নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন, সেটি শুধুমাত্র নিজের ওজন বাড়ানোর কৌশল। ভবিষ্যতে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে এই সাধ মেটাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাহুল গাঁধী গোটা দেশের ভার সামলাবেন। আর বরুণ সীমাবদ্ধ থাকবেন উত্তরপ্রদেশে। একবার কংগ্রেসে যোগ দিলে রাহুলকে মাত দিয়ে ধীরে ধীরে বরুণই হয়ে উঠবেন সর্বেসর্বা।’’ বরুণ না কি এই দীর্ঘমেয়াদী রণনীতি নিয়েই এগোচ্ছেন। ভবিষ্যতে কী করবেন সে তো ভবিষ্যতের ব্যাপার। আপাতত উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে বিজেপির অন্দরে সব থেকে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন বরুণই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy