—ফাইল চিত্র
মাংস বিক্রেতাদের ধর্মঘটে টালমাটাল অবস্থা উত্তরপ্রদেশের বাজারের। আজ, সোমবার থেকে গোটা উত্তরপ্রদেশে শুরু হয়েছে মাংস বিক্রেতাদের অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট। অধিকাংশ জেলাতেই মাংসের সব দোকান বন্ধ। ফলে মাছের বাজারে উপচে পড়েছে ভিড়। মাছের দামও লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে এক দিনেই।
লখনউয়ের বিভিন্ন বাজারঘাটের চেহারা বদলে গিয়েছে রাতারাতি। শহরের বিভিন্ন মাছ বাজারে রোজকার খরিদ্দার যাঁরা, তাঁদের সিংহ ভাগই বাঙালি। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে লখনউয়ের প্রায় সব মাছ বাজারে যে বিপুল ভিড়, তাঁদের মধ্যে অবাঙালিদের সংখ্যা বাঙালিদেরকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। মুরগি, পাঁঠা-সহ সব রকমের মাংসের কেনাবেচা আপাতত বন্ধ উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু একটা অন্তত আমিষ পদ না পেলে যাঁদের রসনা অতৃপ্ত থেকে যায়, অবাঙালিদের মধ্যেও তাঁদের সংখ্যা কম নয়। মাংস না পেয়ে তাঁরা মাছের দিকে ঝুঁকেছেন। মাংসের ব্যবস্থা করতে না পেরে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন বড় শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও মাছের পদে জোর দিয়েছে। আর যাঁদের বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান রয়েছে, তাঁরা শেষ মুহূর্তে মেনু কার্ড থেকে মাংস ছেঁটে ফেলে ইলিশ বা চিংড়ির দিকে ঝুঁকছেন। বারাবাঁকির মহম্মদ ফাহিমের কথায়, ‘‘মুরগি বা পাঁঠার মাংস কোনও কোনও জেলায় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যতটা দরকার, ততটা পাওয়া খুব মুশকিল। তাই মাংসের বদলে মাছের ব্যবস্থা করছি।’’
মাংসের আকালে লখনউতে বন্ধ জনপ্রিয় কাবাবের দোকান। ছবি: পিটিআই।
লখনউয়ের মাছ বিক্রেতাদের একাংশ রবিবার জানিয়েছিলেন, মাংস বিক্রেতাদের ডাকা ধর্মঘটকে সমর্থন করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মাছের দোকানও বন্ধ রাখা হবে উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাছ বিক্রেতারা সর্বাত্মক ধর্মঘটে যাননি। আর বাজার থেকে মাংস অমিল হয়ে যাওয়ায় হু হু করে বেড়েছে মাছের দাম। লখনউয়ের বাজারে ইলিশের দাম রবিবার পর্যন্তও ছিল ১০০০ টাকা। সোমবার এক লাফে তা ১৪০০ টাকা। বিঘতখানেক লম্বা চিংড়ির দাম রবিবার ছিল ৬০০ টাকা। সোমবার সেই চিংড়ি ১২০০ টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে। রুই মাছ গত সপ্তাহেও ছিল ২৫০ টাকা কিলো। সোমবার থেকে ৪০০ টাকা কিলো। পমফ্রেট বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কিলো দরে।
দাম যতই বাড়ুক, ক্রেতা কিন্তু পিছু হঠছেন না। লখনউয়ের মাছ বাজারে দিনভর বাঙালিদের দেদার আনাগোনা সত্ত্বেও মাছের ঝাঁকা খালি হতে হতে রাত হয়ে যেত। সোমবার বেলা ৩টের মধ্যেই মাছ শেষ লখনউয়ের বিভিন্ন বাজারে।
আরও পড়ুন: রাশ টানল দিল্লি, অযোধ্যা যাত্রা আপাতত বাতিল আদিত্যনাথের
অনেকে অবশ্য সপ্তাহ খানেকের মাংস ঘরে ঢুকিয়ে নিয়েছেন আগেভাগে। অরিজিৎ সিংহ নামে এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আমি তো আমার ফ্রিজারটা মাংসে ভরিয়ে ফেলেছি। ধর্মঘটের খবর পেয়েই প্রসেসড মাংসের দু’ডজন প্যাকেট একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিনে নিয়েছি।’’ সপ্তাহ দুয়েকও যদি মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ থাকে, তা হলেও অসুবিধা হবে না অরিজিতের। কিন্তু সবার পক্ষে আগে থেকে মাংস কিনে ফ্রিজারে জমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ তাই সেনা ক্যান্টিন থেকে হিমায়িত মাংস জোগাড় করার চেষ্টা করছেন।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার চলাকালীনই বিজেপি জানিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে সব অবৈধ কসাইখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বন্ধ করে দেওয়া হবে যন্ত্রচালিত কসাইখানাগুলিও। যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়েই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে পদক্ষেপ করেছেন। কিন্তু মাংস ব্যবসায়ীরা এক বিরোধিতায় সরব। যন্ত্রচালিত কসাইখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত তাঁরা মানতে তো চানই না, অবৈধ কসাইখানার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ মানতেও তাঁরা নারাজ। সব কসাইখানা ফের খুলে দেওয়ার দাবিতেই অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মাংস বিক্রেতাদের সংগঠন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy