তাজমুল্লি বেগমের ছবি হাতে ‘বুলন্দশহরের শাহজাহান’ ফইজুল হাসান কাদরি। —ফাইল চিত্র।
ঠিক যেমন ঘটেছিল ৩৫২ বছর আগে। ‘মুমতাজের পাশেই’ আবার শায়িত হবেন ‘শাহজাহান’। নিজেরই গড়া তাজমহলে!
বুলন্দশহরের শাহজাহান, ফইজুল হাসান কাদরির কোনও সাম্রাজ্য ছিল না। দিন কেটেছে পোস্টমাস্টারের চাকরি করে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে দেবাই তহসিলের কাসের কালান গ্রামে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন এক মিনি তাজমহল। আকার বা জৌলুসে সম্রাট শাহজাহানের তাজমহলের সঙ্গে তুলনা করা অর্থহীন। তবে স্ত্রীর প্রতি তাঁর অতুলনীয় ভালবাসাই কাদরিকে এ কালের শাহজাহান করে তুলেছিল এলাকায়। তবে কাজ পুরো শেষ করতে পারেননি। শেষ সম্বল দু’লক্ষ টাকা দিয়ে জয়পুর থেকে মার্বেল আনাবেন বলে মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হল না। ৮৩ বছর বয়স। লাঠি ঠুকঠুক করতে কাজেকর্মে এখানে-ওখানে চলে যেতেন। গত বৃহস্পতিবার তেমনই বেরিয়েছিলেন। পথে একটি মোটরসাইকেল তাঁকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। স্থানীয়েরা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচাতে পারেননি তাঁকে। শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়।
আত্মীয়েরা জানিয়েছেন, বছর দুই আগেও এক বার সাইকেল থেকে পড়ে চোট পেয়েছিলেন। কিন্তু এ যাত্রায় আর কিছু করতে পারলেন না। তবে কাদরির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁর তাজমহলে স্ত্রী তাজমুল্লি বেগমের পাশেই সমাহিত করা হবে তাঁকে। মিনি তাজমহলের বাকি কাজও তাঁরাই সম্পূর্ণ করবেন বলে মনস্থ করেছেন।
আরও পড়ুন: একসঙ্গে থাকবেন, অসমে হলফনামা দিলেন দুই বান্ধবী
গলার ক্যানসার হয়ে তাজমুল্লি বেগম মারা যান ২০১১ সালে। ৫৮ বছরের বিবাহিত জীবনে ছেদ পড়ে। পরের বছর তাঁর সমাধির উপরে মিনি তাজমহল গড়ার কাজে হাত দেন কাদরি। সাধ থাকলেও সাধ্যের তো সীমা থাকে! নিজের সব সম্বল নিয়ে নেমেছিলেন মাঠে। কিনেছিলেন মার্বেল আর ইমারতি সরঞ্জাম। কিন্তু বেশ খানিকটা গাঁথনি ওঠার পরে আটকে যায় কাজ। তত দিনে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর প্রেমকথা। অখিলেশ যাদব তখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। সব শুনে লখনউয়ে ডেকে পাঠান কাদরিকে। বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। টাকা দিতে চান মিনি তাজমহলের বাকি কাজ শেষ করার জন্য। বিনীত ভাবে কাদরি জানান, এটা তিনি নিজেই গড়তে চান। তবে মুখ্যমন্ত্রী চাইলে গ্রামে একটি ইন্টার-কলেজ করে দিলে ভাল হয়। অখিলেশ তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে সেই জমিতেই গড়ে দেন কলেজ। গাঁয়ের মেয়েরা এখন সেখানেই পড়ে। সেই কলেজের কিছুটা জমি কাদরিরই দেওয়া। আজকের শাহজাহানের এই ‘বেটি পড়াও’ নিয়ে অবশ্য তেমন প্রচার নেই।
আরও পড়ুন: উনত্রিশেই মার্কিন কংগ্রেসে, মাথাব্যথা এখন বাড়িভাড়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy