Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অমিতের সফর হতাশই করল বিরসা মুণ্ডার গ্রামকে

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রামগুলোকে মডেল গ্রাম বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি সরকার। সেই অনুযায়ী ঝাড়খণ্ডের ১৯টি গ্রাম মডেল গ্রাম হবে। মডেল গ্রামের সব বাড়িই হবে পাকা। এ দিন অমিত বিরসার বংশধর সুকরা মুণ্ডার পাকা বাড়ির ভিত পুজো করে বিরসা মুণ্ডার গ্রাম উলাহাতুকে মডেল গ্রাম বানানোর শুভ সূচনা করেন।

বিরসা মুণ্ডার গ্রামে অমিত শাহ। —নিজস্ব চিত্র।

বিরসা মুণ্ডার গ্রামে অমিত শাহ। —নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২০:৪৩
Share: Save:

তাঁর আসার কথা সকাল দশটা নাগাদ। মাদল বাদক গারু মুণ্ডা তাঁর নাচ ও গানের দলবল নিয়ে বিরসা মুণ্ডার ঘরের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সকাল দশটা থেকেই। মাঝেমধ্যেই ছোটো বড় নেতার আগমনে মাদল বেজে উঠছে। কিন্তু আজকের বিশেষ অতিথি কোথায়?

আরও পড়ুন

দলের হুইপ মানতে হবে ঋতব্রতকে

মন্ত্রীর বোনই আক্রান্ত

শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পরে এলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ভাদ্র শেষের তীব্র গরমে ঠায় দাঁড়িয়ে তখন গারু মুণ্ডার দলের ছেলে মেয়েরা ক্লান্ত। কিন্তু তার মধ্যেও মাদল বেজে উঠল। মেয়েরা নাচল মাদলের তালে তালে। গান নাচের শেষে গাড়ু বলেন, ‘‘শুধু নাচ গান দেখানোই নয়, ইচ্ছা ছিল অমিত শাহকে আমাদের গ্রামের সমস্যার কথা সরাসরি বলার। কিন্তু সেই সুযোগ তো মিলল না!’’

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রামগুলোকে মডেল গ্রাম বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি সরকার। সেই অনুযায়ী ঝাড়খণ্ডের ১৯টি গ্রাম মডেল গ্রাম হবে। মডেল গ্রামের সব বাড়িই হবে পাকা। এ দিন অমিত বিরসার বংশধর সুকরা মুণ্ডার পাকা বাড়ির ভিত পুজো করে বিরসা মুণ্ডার গ্রাম উলাহাতুকে মডেল গ্রাম বানানোর শুভ সূচনা করেন। তীব্র গরমের মধ্যে পুরোহিতের সঙ্গে পুজোয় বসে রীতিমতো ঘেমে নেয়ে গিয়েছিলেন অমিত। প্রায় পনেরো মিনিট ধরে চলে পুজো। বিরসা যে ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই ঘরে গিয়ে বিরসার মুর্তিতে মালা দিয়ে প্রণামও করেন অমিত। এর পরে গ্রামে একটি সভায় ভাষণ দেন। কিন্তু নিরাপত্তার বেড়াজালে থাকা অমিতের সঙ্গে কোনও গ্রামবাসীই কথা বলতে পারেননি।

দেখুন ভিডিও

শুধু গ্রামবাসীরাই নয়, কথা বলার সুযোগ পাননি বিরসার নাতি সুকরা মুণ্ডাও। এ দিন ওই গ্রামে যে সভা হয় তাতে সুকরা অমিত শাহ, মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস-সহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে স্টেজে বসেছিলেন। বিজেপি সভাপতি তাঁকে উপহার স্বরূপ চাদর দেন। কিন্তু অমিতের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার সুয়োগ মেলে নি সুকরার। সুকরা বলেন, ‘‘এখনও কথা হয়নি। দেখি যদি পরে বলা যায়।’’

অমিত শাহকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি বিরসা মুণ্ডার গ্রামে।

এত বড় নেতা এলেন গ্রামে, কিন্তু সরাসরি কথা বলার সুযোগ না মেলায় মুষড়ে পড়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানালেন, গত দু’দিন ধরে গ্রামে আলো, পানীয় জল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র সব একদম ঠিকঠাক চলছে। এক গ্রামবাসী বলেই ফেললেন, ‘‘কেন এ সব ঠিক মতো আছে সেতো আমরা সবাই জানি। ভিআইপি চলে যাবেন। আর এ সব পরিষেবাও ভ্যানিশ হয়ে যাবে। আমরা যদি সরাসরি আমাদের সমস্যার কথা বলতাম তা হলে হয়তো সুরাহা হতো। কিন্তু তা হল না।’’
অমিতের এ দিন ওই গ্রামে বিরসার বংশধরের বাড়িতে দুপুরের খাবার কথা থাকলেও পরে তা বাতিল হয়। অনুষ্ঠান শেষে অমিত হেলিকপ্টারে চেপে চলে যান রাঁচী। সেখান থেকে আজই তাঁর দিল্লি ফেরার কথা।

দেখুন ভিডিও
অমিতের হেলিকপ্টার দেখতে ভিড় করেছিলেন গ্রামের আট থেকে আশির বাসিন্দারা। গ্রামের মাঠে বানানো হয়েছিল অস্থায়ী হেলিপ্যাড। দুপুর দেড়টা নাগাদ হেলিকপ্টার গ্রামের মাঠে ধুলো উড়িয়ে আকাশে উড়ে গেল। হেলিকপ্টার ওড়া দেখতে দেখতে গ্রামের এক প্রৌঢ় অজয় মুণ্ডা বলেন, ‘‘কম নেতা হেলিকপ্টারে চেপে আমাদের গ্রামে এলেন না। এ রকম হেলিকপ্টার আসে, যায়। আমরা যে রকম ছিলাম সে রকমই থেকে যাই।’’
হেলিকপ্টার ওড়ার ধুলোয় তখন উলিহাতু সত্যিই ঝাপসা হয়ে আসছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE