Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মোদীর জন্মদিন

মোদীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে জবাব মিলল কি, ঘুম ছুটল বিজেপিতে

এল কি এল না! এলে কী ভাষায় এল! ধন্যবাদ, না অজস্র ধন্যবাদ, না কৃতজ্ঞতা? নামোল্লেখ আছে না নেই? নেকনজরের চুলচেরা বিচার! সকাল থেকে হাপিত্যেশ করে বসে থাকা। যেন পরীক্ষার ফল বেরোবে! বেলা বারোটায় প্রথম দফার রেজাল্ট বেরিয়েছে!

জন্মদিনে মায়ের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

জন্মদিনে মায়ের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

এল কি এল না! এলে কী ভাষায় এল!

ধন্যবাদ, না অজস্র ধন্যবাদ, না কৃতজ্ঞতা? নামোল্লেখ আছে না নেই? নেকনজরের চুলচেরা বিচার!

সকাল থেকে হাপিত্যেশ করে বসে থাকা। যেন পরীক্ষার ফল বেরোবে! বেলা বারোটায় প্রথম দফার রেজাল্ট বেরিয়েছে! যাঁদের নাম উঠেছে, তাঁরা খানিক নিশ্চিন্ত! বাকিরা দমচাপা অপেক্ষায়। পরের দফায় নাম আসবে তো? দুপুর তিনটে নাগাদ উত্তেজনা ফের দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল। আসছে, সে আসছে!

সাতসকালেই নরেন্দ্র মোদীকে টুইট করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে রেখেছেন সবাই। মোদী তার উত্তর দিলেন কি না, দিলে কী উত্তর দিলেন— টেনশন হবে না? এই উত্তরই তো জন্ম দেবে প্রশ্ন, সংশয় বা নিশ্চিন্তির। বোঝা যাবে, প্রধানমন্ত্রী কাকে কতটা কদর করছেন! অন্তত তেমনটাই ধারণা দিল্লির দরবারে!

মোদী একবার বারোটা নাগাদ কয়েক জনকে টুইট করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনটের কিছু আগে ফের দ্বিতীয় দফা জবাব দিতে শুরু করেছেন। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই টুইটার খুলে বসে পড়লেন বিজেপি নেতা, মন্ত্রীর সহায়কেরা। রিও-তে গোলমাল পাকানো কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গয়ালের নাম করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্মলা সীতারামনের ক্ষেত্রে কিন্তু নাম নেননি। স্মৃতি ইরানিকে ‘অনেক’ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হর্ষবর্ধনকে ‘কৃতজ্ঞতা’। এ সবের মধ্যে কোনও গূঢ় অর্থ নিহিত আছে কি না, সেই জল্পনায় দিনভর সরগরম থেকেছে রাজধানী।

ঘটনা হল, এ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জন্মদিনের শুভেচ্ছার জন্য জনা সত্তরকে টুইট করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী। তার মধ্যে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি আছেন। বিরোধী নেতা রাহুল গাঁধী আছেন। তাঁকে ‘অসংখ্য ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন মোদী। ফোন করে লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘আশীর্বাদ’ পাওয়ার কথা লিখতে ভোলেননি। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি, অমিতাভ বচ্চন, সচিন তেন্ডুলকর, লতা মঙ্গেশকর, সানিয়া মির্জা, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর, টাটাগোষ্ঠীর কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রি, অ্যাপলের কর্ণধার টিম কুকও আছেন। আর রাত এগারোটা নাগাদ এ দিনের শেষ টুইটে মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, টুইট-ফেসবুক মিলিয়ে সারা পৃথিবী থেকে অসংখ্য মানুষ তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাতে তিনি আপ্লুত। সকলকে আলাদা করে উত্তর দিতে পারলেন না বলে দুঃখিতও।

অর্থাৎ আজ যাঁদের কপালে টুইটের শিকে ছিঁড়ল না, কাল আর তাঁদের আশা নেই? সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি, বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহরা আছেন উত্তর না-পাওয়ার দলে। পিএমও সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, টুইটে কে কী উত্তর পেলেন বা না পেলেন, তাতে কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ নেই। আজকের দিনটা মোদী খুবই ব্যস্ত ছিলেন। সারা দিন গুজরাতে কাটিয়ে রাতে দিল্লি ফিরেছেন। সবাইকে টুইট করা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। যাঁরা টুইটে জবাব পাননি, তাঁদের সঙ্গে যে মোদীর ফোনে কথা হয়নি বা হবে না, এমনটাও ধরে নেওয়ার কারণ নেই।

অথচ ৬৬ বছরের এই জন্মদিনের আগে কিন্তু কোনও দিন মোদীর জন্মদিন নিয়ে মাতামাতি দেখা যায়নি।

এমনকী ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ভক্ত এবং ঘনিষ্ঠেরা চাইলেও মোদী নিজেই স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, কোনও আড়ম্বর নয়। আড়াই বছরের মাথায় কী হল তবে? অস্বস্তির মুখে বিজেপি নেতারাই কবুল করছেন, মোদীকে এখন নতুন করে নিজের ব্র্যান্ডটি ঘষেমেজে নিতে হচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই গোটা দেশে দলের সব নেতা-কর্মীকে আজ তাঁর জন্মদিন ঘিরে ‘সেবা দিবস’ পালন করতে বলা হয়েছে। সামনে উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাতে ভোট। তার দু’বছরের মাথায় ফের লোকসভা নির্বাচন। আজ জন্মদিনটি ছিল তার প্রস্তুতি নেওয়ার আদর্শ মঞ্চ।

প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার দিয়ে, তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, এক সঙ্গে হাজারো বাতি জ্বালিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার তো়ড়জোড় তো আগেই ছিল। গত বছর বাদ পড়ে যাওয়ার পর এ বারে গুজরাতে মোদী দিন শুরু করেছেন মায়ের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে। মায়ের সঙ্গে মিনিট পনেরো ক্যামেরার সামনে ‘একান্তে’ কাটিয়ে। গুজরাত সফরে থাকা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরও এ দিন শুভেচ্ছা জানাতে সকালে তাঁর কাছে যান। এর পরে সারা দিন ধরে মোদী ছিলেন গুজরাতের আদিবাসী এলাকায়। একের পর এক সভায় বক্তৃতা করেছেন গুজরাতি ভাষায়। রাজ্যবাসীর মন জয়ের চেষ্টায় কসুর করেননি। কারণ মোদী জানেন, তাঁর নিজের রাজ্যেই দল খুব স্বস্তিতে নেই। গত কয়েক মাসে একের পর এক দলিত ও সংখ্যালঘু নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। গোরক্ষকদের মারে আহত এক সংখ্যালঘু যুবক গত কাল মারা যাওয়ায় কাল রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তার উপর মোদী কাল আমদাবাদে পা রাখার পরেই দলিত আন্দোলনের অন্যতম মুখ জিগ্নেশ মেবানিকে পুলিশ আটক করে। মোদীর জন্মদিনের উৎসব ‘পণ্ড’ করে দিতে পারেন, এই আশঙ্কায় তাঁকে আজ দিনভর আটকে রাখা হয়।

মোদীর জন্মদিনকে ‘সেবা দিবস’ হিসেবে পালন করতে দেশ জুড়ে মাঠে নেমেছিল গেরুয়া শিবিরও। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ‘মোদীর জন্য দৌড়’-এর সূচনা করেন। অসুস্থ শরীর নিয়েও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দিল্লির এক বস্তিতে যান। অমিত শাহ ঝাড়ু হাতে তেলঙ্গানায়, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ দিল্লির রক্তদান শিবিরে, বেঙ্কাইয়া নায়ডু অন্ধ্রে কুষ্ঠরোগীদের সঙ্গে, অনন্ত কুমার বেঙ্গালুরুতে কোদাল হাতে জঞ্জাল সরাতে— প্রচারের আলোয় আসার কোনও সুযোগই হাতছাড়া করতে চাননি নেতারা।

কিন্তু মোদীর নেকনজরে পড়া গেল কিনা, সেই উদ্বেগ থেকেই গেল বিজেপি শিবিরের বহু নেতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Birthday celebrataion Tweet BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE