Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সন্তানসম্ভবা ছিলেন কি শিনা, নয়া জট

মৃত্যুর সময় শিনা কি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, সংবাদমাধ্যমের একটি সূত্রে এমন ইঙ্গিত মেলার পরে নাটকীয় মোড় নিতে চলেছে শিনা হত্যা-রহস্য। বৃহস্পতিবার মুম্বই পুলিশের তিনটি দল তিনটি শহরে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চালায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৫০
Share: Save:

মৃত্যুর সময় শিনা কি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, সংবাদমাধ্যমের একটি সূত্রে এমন ইঙ্গিত মেলার পরে নাটকীয় মোড় নিতে চলেছে শিনা হত্যা-রহস্য।

বৃহস্পতিবার মুম্বই পুলিশের তিনটি দল তিনটি শহরে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চালায়। গুয়াহাটিতে তারা কথা বলে শিনার ভাই, মিখাইল বরার সঙ্গে। কলকাতায় লম্বা জেরা করা হয় এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্নাকে। আর খাস মুম্বইয়ে এ দিন জেরার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়া। ইন্দ্রাণী, তাঁর প্রাক্তন গাড়িচালক শ্যাম মনোহর রাই এবং প্রাক্তন টিভি ব্যারন পিটার মুখোপাধ্যায়ের ছেলে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে দফায় দফায় জেরা করা হয়। এমনকী তিন জনকে মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করেন রাকেশ। রাতের দিকে থানায় যেতে দেখা যায় পিটারকেও। তার কিছু আগেই একটি টিভি চ্যানেলে যিনি কবুল করেছেন, ছেলে রাহুল একা নয়। শিনা নিজেও তাঁকে বলেছিলেন যে— তিনি ইন্দ্রাণীর বোন নন, মেয়ে। এ দিন সন্ধেয় সঞ্জীবকেও মুম্বই নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার ইন্দ্রাণী এবং মনোহরের মুখোমুখি তাঁকে বসানো হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। রাকেশ এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুলিশ একটা ধারণা করতে পেরেছে।

উঁচুতলার প্রতিপত্তিশালী পরিবারে সম্পর্কের এমন জট-জটিলতা এবং মায়ের হাতে মেয়েকে খুনের মতো বিরল অভিযোগকে ঘিরে এই মুহূর্তে উত্তেজনায় কাঁপছে গোটা দেশ। তার মধ্যেই একাধারে ধোঁয়াশা আর নাটকীয়তার পারদ আরও চড়িয়ে দিয়েছে, শিনার সন্তান-সম্ভাবনা সংক্রান্ত নয়া ইঙ্গিত। একটি সূত্রের মতে, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল শিনা যখন খুন হন, তখন তিনি সম্ভবত কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কে সেই সন্তানের পিতা? পিটারের ছেলে রাহুল, যাঁর সঙ্গে শিনার সম্পর্ক ছিল বলে জানা গিয়েছে, তিনি কিন্তু নন। বরং সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মুখোপাধ্যায় পরিবারের ঘনিষ্ঠদের মতে, ওই সন্তানের পিতা এমন এক জন, যিনি ইন্দ্রাণীর ‘অত্যন্ত কাছের মানুষ’। ওই ঘনিষ্ঠেরাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই ‘কাছের মানুষ’টি মিডিয়া ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। নিজের একটি ব্যবসা গোটানোর পরে তিনি ইন্দ্রাণীকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি তাইল্যান্ডে যাচ্ছেন নতুন ব্যবসার কাজে। কিন্তু ওই ঘনিষ্ঠদের দাবি, মানুষটি আসলে ব্যবসার কাজে যাননি। গিয়েছিলেন শিনার সঙ্গে ছুটি কাটাতে। পরে শিনার বইপত্র ঘাঁটতে গিয়ে বিমানের বোর্ডিং পাস দেখতে পেয়ে আসল তথ্যটি জানতে পারেন ইন্দ্রাণী। পারিবারিক বন্ধু মহলের এমনও দাবি, বিষয়টি নিয়ে ইন্দ্রাণী ওই ব্যক্তিকে চেপে ধরেন। ব্যক্তিটি স্বীকার করেন সব। কিন্তু তখনও ওই ব্যক্তি জানতেন না যে, শিনা আসলে ইন্দ্রাণীর মেয়ে। তিনি শিনাকে ইন্দ্রাণীর বোন বলে জেনেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। সুতরাং তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, নিজের বলা মিথ্যার জালে নিজেই জড়িয়ে পড়ছিলেন ইন্দ্রাণী। অন্য দিকে শিনা তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করতে চাইছিলেন না। বিদেশি ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্টে থাকা ইন্দ্রাণীর টাকাপয়সাও ফেরত দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। এই দুয়ে মিলেই শিনাকে পৃথিবী থেকে সরানোর জন্য ইন্দ্রাণী মরিয়া হয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের কেউ কেউ।

এই জটিলতার মধ্যে সঞ্জীবের স্বার্থ কী? ইন্দ্রাণী এবং সঞ্জীবের মেয়ে বিধিকে দত্তক নিয়েছিলেন পিটার। পুলিশের একাংশের ধারণা, শিনা যে ভাবে টাকাকড়ি নিয়ে অনমনীয় মনোভাব নিচ্ছিলেন, তাতে ভবিষ্যতে বিধির ক্ষতি হতে পারে বলে হয়তো আশঙ্কা করেছিলেন সঞ্জীব। আবার ইন্দ্রাণীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক জোড়া লাগার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল বলেও দাবি করেছেন কিছু সূত্র। সঞ্জীব নিজে পুলিশকে জানিয়েছেন, মেয়ে বিধির সঙ্গে দেখা করতেই নাকি তিনি ২০১২-র এপ্রিলে মুম্বই গিয়েছিলেন।

পিটার কি এ সবের কিছুই জানতেন না? আগের দিন তিনি বলেছিলেন, রাহুল তাঁকে শিনার আসল পরিচয় জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেননি। এ দিন একটি টিভি চ্যানেলে মুখ খুলে তিনি স্বীকার করলেন, শিনাও তাঁকে তাঁর গোপন সত্যিটা জানিয়েছিলেন। পিটারের দাবি, শিনা তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘জিজু আমাকে বিশ্বাস করো। আমি ইন্দ্রাণীর বোন নই। আমি ওর মেয়ে। ইন্দ্রাণী তোমাকে মিথ্যে বলছে। ও আমাকে এই কথাটা কাউকে বলতে বারণ করেছিল। কিন্তু আমি তোমাকে বলছি। কারণ আমি তোমাকে পছন্দ করি। এবং রাহুল আমার বয়ফ্রেন্ড।’’

২০১১ সাল নাগাদ এই সব কথা হয়েছিল বলে পিটার জানান। কিন্তু এ সব শোনার পরেও পিটার নিজের স্ত্রীকেই বিশ্বাস করে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘শিনার মুখের কথা বিশ্বাস করার কোনও কারণ ছিল না। ইন্দ্রাণীকে আমি দশের মধ্যে নয় দশমিক নয় শতাংশ বিশ্বাস করি। শিনার কথাগুলো হজম করতে আমার অসুবিধা হচ্ছিল।’’ শিনার সঙ্গে রাহুলের সম্পর্ক কেন ইন্দ্রাণী মানেননি? পিটারের উত্তর, ‘‘রাহুল তখন চাকরি করছিল না। আমেরিকা থেকে ফিরে অভিনয়ের কাজ খুঁজছিল। ইন্দ্রাণী চেয়েছিল শিনা আরও প্রতিষ্ঠিত কারও সঙ্গে থাকুক।’’ শিনার মৃত্যুর পরে শিনার মোবাইল থেকে নিজেই রাহুলকে এসএমএস করে সেই এসএমএস পিটারকে দেখিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। সেখানে সম্পর্ক ভাঙার কথা ছিল। শিনা যে আমেরিকায় রয়েছেন তা প্রমাণ করার জন্য নিজেই আমেরিকায় গিয়ে শিনার মোবাইল থেকে মেসেজ করতেন ইন্দ্রাণী। মুম্বই পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখেছে, শিনার মোবাইল ২০১২-র এপ্রিলের পর থেকে ইন্দ্রাণীর কাছেই ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sheena Bora Pregnant police guwahati mumbai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE