এতগুলো দিন কেটে যাওয়ার পরেও গণপিটুনির আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না।
২১ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল।
এতগুলো দিন কেটে যাওয়ার পরেও গণপিটুনির আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। তাঁদের বেধড়ক মার খাওয়ার ভিডিয়োটা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল হোলির চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই। এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি গুরুগ্রামের মুসলিম পরিবারটি। বাড়ির বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। খেলা তো দূর, বাড়ির বাইরে বেরোতেই ভয় পাচ্ছে তারা! অসহায়তা এমন জায়গায় যে, সোমবার ওই পরিবারের মহম্মদ সাজিদ জানিয়েছেন, বিচার না-পেলে পরিবারের সবাই মিলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন।
সাজিদের দাদা মহম্মদ আখতারকে মঙ্গলবার ফোনে ধরা হলে তাঁর গলায় অনুনয়— ‘‘এই দেশটা কি আমার নয়? তা হলে আমাদের ঘটনাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না কেন? উল্টে আমাদের পরিবারের দু’জন নিরপরাধের বিরুদ্ধে মামলা হল!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আখতার জানান, হোলির দিনে গোটা পরিবার এক জায়গায় হয়ে নির্ভেজাল ছুটি কাটাচ্ছিলেন। নিছক ক্রিকেট খেলা নিয়েই গণ্ডগোল হয়েছিল বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। ছেচল্লিশ বছরের আখতার বারবার ফিরে যাচ্ছেন একটাই শব্দে— সুপরিকল্পিত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা নেই। বাড়ির বাচ্চারা সে দিন নিজেদের মধ্যে খেলছিল। মোটরবাইক নিয়ে দু’জন লোক কোথা থেকে এসে ঝামেলা শুরু করল। সাজিদ বাধা দেয়। তখন তাদের মধ্যে এক জন ওর গায়ে হাত তোলে। পাকিস্তানে গিয়ে ক্রিকেট খেলতে বলে। তখনকার মতো ঝামেলা মিটলেও সে বলে যায়, ফিরে এসে দেখে নেবে। খানিক ক্ষণের মধ্যেই লাঠিসোটা নিয়ে ওদের দলটা চড়াও হল। মেয়েরা কান্নাকাটি করে অনুরোধ করছিল। ওরা কানেই তুলল না। আমাদের পরিবারের তেরো জন আহত। তার চেয়েও বড় কথা— আমরা সবাই আতঙ্কিত!’’
মাঝখানে ঘরবাড়ি ছেড়ে দিল্লি চলে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন আখতারেরা। পনেরো বছর ধরে ওই এলাকায় রয়েছেন। ভাবেননি কখনও, এমন ঘটতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক চাপে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টে হামলাকারীদের সুবিধার্থে গোটা ঘটনার অভিমুখ ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আখতার বলছেন, ‘‘এখনও আমরা হুমকি পাচ্ছি। অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির মেয়েদের আজেবাজে কথা বলা হচ্ছে!’’
মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রাজকুমারের ভগ্নিপতি আনন্দ শর্মার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ধর্মীয় কারণে হামলার অভিযোগ মিথ্যে। ক্রিকেট খেলা নিয়েই ঝামেলা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, খেলা ঘিরে বচসার জেরে রাজকুমারকে মারধর করে ঘরে আটকে রেখেছিল ওই পরিবারটি। তখন তাঁকে ছাড়াতে গ্রামতুতো সশস্ত্র ‘আত্মীয়েরা’ লাঠি নিয়ে ওই বাড়িতে ঢোকেন। তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিয়োটি ভুয়ো। মেয়েরা কাঁদছে, চিৎকার করছে আবার ওরাই ভিডিয়ো করছে। এমনটা হয় নাকি! গণ্ডগোল মিটে যাওয়ার পরে ওরা এ সব বানিয়ে হিন্দু-মুসলিম ঝামেলার নাম দিচ্ছে।’’
যদিও পর ক্ষণেই আনন্দ জোর গলায় বলছেন, ‘‘দেখুন, গণ্ডগোল হয়েছে। মারধরও হয়েছে। যারা গিয়েছিল আমাদের আত্মীয়ের মতো। পরিবারের বিপদে পাশে দাঁড়াবে না?’’
এই বিষয়ে গুরুগ্রামের পুলিশ কমিশনার কে কে রাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি জনসংযোগ আধিকারিককে বলে দিচ্ছি। উনিই জবাব দেবেন।’’ জনসংযোগ আধিকারিক সুভাষ বোকান ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘পরিবারটিকে ২৪x৭ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের গাড়ি ঘুরছে। হুমকির অভিযোগ নিয়ে পরিবারটি আমাদের লিখিত ভাবে কিছু জানায়নি। আমাদের সামনেও তেমন কিছু আসেনি। আমাদের জানালে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’’ তিনি একই সঙ্গে বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি অভিযুক্তকে মারধর করেছিলেন। তার পর তিনি আরও লোকজন জড়ো করে এনে তাঁকে পাল্টা মারেন। পুরোটাই ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy