সেই পাত্র, পাত্রী। ছবি: হিমাংশু পঙ্কজ
গয়নার বাক্স খুলে আংটিটা কাঁপা হাতে পরিয়ে দিলেন ন’বছরের প্রেমিকার আঙুলে। বাঁ হাতের অনামিকায় আংটি ঢোকাতে গিয়ে কেঁপে উঠলেন সঙ্গীতা বড়ো। কতকটা দুঃখে, বাকিটা তীব্র যন্ত্রণায়। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরের কড়া ঠান্ডা ছাপিয়ে ওঠে প্রেমের উষ্ণতা।
গুয়াহাটির অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউয়ের ভারি, গম্ভীর পরিবেশটা ১৫ অক্টোবর সকাল থেকেই ছিল অন্য মেজাজে। এই প্রথম আইসিইউয়ের ভিতরে আংটি বদল আর ‘এনগেজমেন্ট সেরিমনি’ হবে বলে কথা! নার্স, ডাক্তারদের মুখ সকাল থেকে হাসি-হাসি। পাশের বেডের রোগীরাও যন্ত্রণা ভুলে অপেক্ষায় ছিলেন সন্ধ্যায় ভিজিটিং আওয়ার্সের। পাঁচটা বাজতেই হিমাংশু পঙ্কজ বড়ো, তাঁর বাবা-মা দরজা খুলে ঢুকতেই ঝপ করে উৎসব নেমে এল আইসিইউ রুমে।
আরও পড়ুন- তিন বছর পর আইএসের দখলমুক্ত হল রাক্কা
আরও পড়ুন- ‘ছোটবেলায় ভিনগ্রহীরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল আমাকে’
দিনটা যে এ ভাবে পালিত হবে ভাবতে পারেনি দুই পরিবার। কে সি দাস কমার্স কলেজে পড়ার সময় থেকেই প্রেম রঙিয়ার হিমাংশু ও মির্জার সঙ্গীতার। ন’বছরের প্রেমপর্ব শেষে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল। সঙ্গীতা এখন এম কম করছেন। হিমাংশু কাজ করেন নির্মাণ সংস্থায়।
বিয়ের প্রস্তুতির জন্যই ৮ অক্টোবর গাড়ি ভাড়া করে বাবার সঙ্গে মির্জা যাচ্ছিলেন সঙ্গীতা। কিন্তু বাসের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই বাবা ও গাড়িচালক মারা যান। গুরুতর জখম ও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সঙ্গীতাকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। যমে-মানুষে টানাটানি চলে। কিন্তু জ্ঞান ফিরছিল না সঙ্গীতার।
১৫ অক্টোবর ছিল আংটি বদল, আশীর্বাদের তারিখ। ১৪ অক্টোবর সঙ্গীতার জ্ঞান ফেরে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর ধাক্কা, ভাঙা হিপ জয়েন্ট-হাত-শিরদাঁড়া, ফুসফুসের সংক্রমণ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া সঙ্গীতা নিজেও বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলছিলেন। নাগাড়ে সাহস জুগিয়ে চলেন হিমাংশু। ১৫ অক্টোবর সকালে সঙ্গীতা হঠাৎই জানান, সেই দিনই তিনি হিমাংশুর হাতে আংটি-সিঁদুর পরতে চান। দুই পরিবার ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, যে ভাবে হোক সঙ্গীতাকে খুশি করতে হবে, আশার আলো দেখাতে হবে। নিয়ম খানিকটা ভেঙে আইসিইউয়ের মধ্যেই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সেই মতো ১৫ অক্টোবর, ১ নম্বর বেডে শোয়া সঙ্গীতাকে আংটি পরিয়ে দেন হিমাংশু। গায়ে তুলে দেন নতুন শাড়ি। হবু বউমাকে আশীর্বাদ করেন হিমাংশুর বাবা-মা। সঙ্গীতার কপাল ও সিঁথিতে আলতো সিঁদুর ছুঁইয়ে দেন হিমাংশু। অন্য বেডের রোগীরা ও তাঁদের আত্মীয়রাও হবু বর-কনেকে আশীর্বাদ করেন। হিমাংশুর পরনে ছিল নতুন পাঞ্জাবি। আনন্দ উৎসবের শরিক হওয়া বাকিদের অবশ্য পরতে হয়েছিল হাসপাতালের দেওয়া গোলাপী অ্যাপ্রন। আশীর্বাদের পরে নার্স, ডাক্তার, অন্য রোগী ও তাঁদের পরিবার-সহ সকলকে মিষ্টিমুখ করায় হিমাংশুর পরিবার।
হিমাংশু আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘এখন সঙ্গীতাকে বিপদমুক্ত করা ও মনের জোর ফিরিয়ে আনাই আমার প্রধান লক্ষ্য। আংটি বদল, সিঁদুর পরানো ও আশীর্বাদের সময়টুকু ওকে অনেকটা জীবনীশক্তি জুগিয়েছে। আমরা আরও ভাগ্যবান কারণ অন্যরাও প্রাণ খুলে আমাদের আশীর্বাদ করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy