Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ডিজনিল্যান্ড, মহীশূরের মন্দির পশ্চিম অম্বিকাপুরে

সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের দুর্গাপুজোয় বরাকবাসীকে তাঁরা যে চমক দিতে চলেছেন, মহালয়ার সকালেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সে দিন ট্যাবলো, মানবমূর্তি, মণিপুরি ব্যান্ড, ঢাকি সহ বিশাল শোভাযাত্রা বের করেছিল পশ্চিম অম্বিকাপুর দুর্গাপূজা কমিটি। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের দুর্গাপুজোয় বরাকবাসীকে তাঁরা যে চমক দিতে চলেছেন, মহালয়ার সকালেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সে দিন ট্যাবলো, মানবমূর্তি, মণিপুরি ব্যান্ড, ঢাকি সহ বিশাল শোভাযাত্রা বের করেছিল পশ্চিম অম্বিকাপুর দুর্গাপূজা কমিটি। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া।

তাঁরা যে এ বার বড় পুজো করছেন, এই শোভাযাত্রার পর আর সভাপতি শুভ্রেন্দুশেখর দত্ত বা কার্যকরী সম্পাদক প্রদীপ দাসদের উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না। পানিভরার সাধন পাল শাস্ত্রীয় প্রতিমা তৈরি করছেন বটে, কিন্তু চমক অন্যত্র। প্রদর্শনীর জন্য পৃথক প্রতিমা বানাচ্ছেন প্রদীপ আচার্য। পুরোপুরি কাগজের প্রতিমা। ১৪ ফুট উঁচু। পুরো কাঠামোটি একটি বিশাল পদ্মফুলে বসা। ৫০ কিলোগ্রাম পুরনো খাতা-বই, পত্রিকা ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এই প্রতিমা। মূর্তি যেমন দু’টি। মণ্ডপও দু’টিই বলা যেতে পারে। দুর্গাশঙ্কর পাঠশালা প্রাঙ্গণে সামনে হবে ক্যালিফোর্নিয়ার ডিজনিল্যান্ড। পরে মূল মণ্ডপে মহীশূরের স্থাপত্যকে তুলে আনা হচ্ছে। এই দুইয়ের মধ্যে রয়েছে ভিক্টোরিয়ার সেই ড্যান্সিং ফাউন্টেন। গানের তালে তালে নাচবে জলের ফোয়ারা। আলোকে গোটা এলাকা সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন সঞ্জীব দাস। পরিবেশ ভাবনাই সেখানে মূল থিম। এলইডি বাল্বে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তাই তুলে ধরা হবে। ৫০ বছরের পুজো বলে কথা! তাই মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে নাগরদোলা ছাড়াও থাকবে বিভিন্ন ধরনের খেলার সরঞ্জাম। বসবে ফুড কোর্ট। ঢাকির দলেরও বিশেষ আকর্ষণ থাকবে, দাবি আয়োজকদের। তাঁরা জানান, মহিলা ঢাকির দল পঞ্চমীতে পশ্চিম অম্বিকাপুর আসছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে তাঁদের ঢাক বাদন চলতে থাকবে। মহিলারা দল বেঁধে ঢাক বাজাচ্ছেন, শিলচরে এই প্রথম দেখা যাবে।

আগমনী অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে পুজো কমিটির সাংস্কৃতিক শাখা। পরিবেশিত হবে মহিষাসুরমর্দিনী। বিসর্জনেও তাঁরা চমক দেবেন বলে ভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বিজয়া দশমীতে নয়, তাঁরা প্রতিমা নিয়ে বেরোবেন এর পরের দিন। তাও পাড়ার পুরুষদের কাঁধে করে মা যাবেন পশ্চিম অম্বিকাপুর থেকে সদরঘাটে। সঙ্গে হবে ধামাইল, মণিপুরি বাদন, চা জনগোষ্ঠীর নৃত্য। ৬ জনের মহিলা ঢাকিদল তো থাকবেনই।

এমন পুজোর বাজেট কত? কোষাধ্যক্ষ নিখিলেশ চৌধুরী জানালেন, ২৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে ধরে নিয়ে মাঠে নেমেছেন তাঁরা। পুরোটাই এলাকাবাসীর চাঁদায় সারতে হবে। সামান্য কিছু আশা করছেন স্যুভেনিরের বিজ্ঞাপন থেকে। ৫ অক্টোবর মণ্ডপ উদ্বোধনেই স্যুভেনির আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন সম্পাদক প্রণব দাস। সে দিন একপ্রস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও রয়েছে তাঁদের। এলাকার ৫০ শিশু প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে নৃত্য পরিবেশন করবে। একসঙ্গে ৫০ মহিলা উলুধ্বনি দেবেন, বাজাবেন শাঁখ। বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল এলাকারই বাসিন্দা। তিনিই এ বারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। মণ্ডপের উদ্বোধকও। থাকবেন প্রথম দিককার পুজোয় যারা সক্রিয় ছিলেন, সেই সব প্রবীণরাও।

তাঁদের দুয়েক জন অবশ্য এবারের পুজোয়ও সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদেরই এক জন উপ-সভাপতি নটরাজ ধর। তিনি বললেন, ‘‘পশ্চিম অম্বিকাপুর পৃথক পুজো করবে বলে যে বার অম্বিকাপুর পুজো কমিটি থেকে বেরিয়ে এল, তখন আমি নেহাতই কিশোর। তবু বিভিন্ন কাজে জড়িয়েছিলাম।’’ তিনি জানান, মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জিতেন্দ্রলাল দেবরায়, দীনবন্ধু পাল, অমল দত্ত, কৃষ্ণধন রায়, দুর্গেশরঞ্জন পুরকায়স্থ, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিদ্যুতকুমার চৌধুরী, রণবীর পাল, অজিত আদিত্য, শঙ্কর মিত্র, রবীন্দ্রকুমার চৌধুরী, চঞ্চল ঘোষ ও হীরক চৌধুরী। সেটা ১৯৬৭ সাল। প্রথম পুজো কমিটির সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ কেউ আজ আর বেঁচে নেই। তাঁরা হলেন ক্রমে গোপেন্দ্রকুমার চৌধুরী, নির্মলেন্দু দেব ও সাধন সেনগুপ্ত। জ্যোতিরঞ্জন ভট্টাচার্য ছিলেন পুরোহিত।

১৯৮৩-র পুজোর সম্পাদক নটরাজবাবু জানান, এই পুজো এক বছরের জন্যও কখনও বন্ধ হয়নি। এমনকী ১৯৮৬ সালে বিরাট বন্যা হয় পুজোর সময়। প্রতিমা জলে ভাসে ভাসে। তবু পুজো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Disneyland West Ambikapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE