মুদাসির প্যারে (বাঁ দিকে) ও শাকিব বিলাল। ফাইল চিত্র
একটা টিনের ছাদের ঘর। তাতেই কোনও রকমে দিন কাটত পাঁচ জনের। এখন অবশ্য রয়ে গিয়েছেন চার জন। পরিবারের পঞ্চম সদস্য, বছর চোদ্দোর মুদাসির প্যারের নাম উঠে গিয়েছে উপত্যকায় নিহত জঙ্গিদের তালিকায়। গত কাল শ্রীনগরের কাছে মুজগুন্দে এক সংঘর্ষে নিহত হয়েছে সে। মুদাসিরই উপত্যকায় নিহত সবচেয়ে কমবয়সি জঙ্গি বলে দাবি বাহিনীর। তালিকায় নাম আছে শাকিব বিলালেরও। বছর সতেরোর যে কিশোর-শিল্পী কাশ্মীর নিয়ে তৈরি ছবি ‘হায়দর’-এ একটি ছোট্ট ভূমিকায় অভিনয় করেছিল।
৩১ অগস্টের আগে মুদাসিরের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগের কথা স্বপ্নেও ভাবা যেত না বলে জানাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যেরা। বছর চোদ্দোর ওই কিশোর স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ত। ক্রিকেট খেলত পাড়ার অন্য কিশোরদের সঙ্গে। ৩১ অগস্ট বাড়ির পাশে প্যারে মহল্লায় এক সংঘর্ষে নিহত হয় তিন লস্কর জঙ্গি। তার পরে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার নাম করে পাড়ার আর এক কিশোর শাকিব বিলালের সঙ্গে উধাও হয়ে যায় মুদাসির। শাহিদ কপূর অভিনীত ‘হায়দর’ ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিল বিলাল। থিয়েটার শিল্পী হিসেবে বছর তিনেক আগে কেরলে এক প্রতিযোগিতায় জিতেছিল সে। বিলালের পরিবার জানাচ্ছে, ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। জিনিস কিনতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক অপরিচিতের মোটরবাইকে চেপে উধাও হয়ে যায়। ‘‘আমরা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি, জঙ্গি দলে যোগ দেবে বিলাল। কেন সে এমনটা করল, তা আজও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়,’’ জানিয়েছেন বিলালের আত্মীয় আসিম আইজাজ়।
‘‘উধাও হয়ে যাওয়ার পরে দিনের পর দিন আশপাশের গ্রামে মুদাসিরের খোঁজ করে বেড়িয়েছি আমি’’, চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন তার মা ফরিদা বেগম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা ভাবতেও পারিনি ও জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছে। জানলে ওকে সেদিন বাড়ি থেকেই বেরোতে দিতাম না।’’
গত সপ্তাহে কালাশনিকভ হাতে মুদাসিরের ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তখনই মুদাসিরের জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার কথা তাঁরা জানতে পারেন বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। ফরিদা বেগম বললেন, ‘‘ওই বয়সের ছেলের তো পরিবারের সঙ্গে থেকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার কথা। কিন্তু আমার ছেলের জন্ম হয়েছে কাশ্মীরে। এটাই ওর দুর্ভাগ্য।’’
এক পুলিশ-কর্তার মতে, এই কিশোরদের ঘিরে জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কে স্থানীয়দের মনে আরও আকর্ষণ তৈরি করার সুযোগ পেয়েছিল লস্কর ই তইবা। কিন্তু মুদাসির-বিলালের মৃত্যু ফের বুঝিয়ে দিল বন্দুক নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ সঠিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy