Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাশে সহযাত্রীরা, নিশুত রাতের ট্রেনে প্রসব

প্রসবের পরেই ওই মহিলা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ট্রেনে থাকা এক চিকিৎসক তাঁকে দেখেন। সিটিটিআই বদরপুরে রেলের কন্ট্রোল রুমে গোটা বিষয়টি জানান। কিন্তু সেখানে কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না।

সন্তানকে নিয়ে পূজা গৌড়।

সন্তানকে নিয়ে পূজা গৌড়।

শিবাজী দে সরকার ও উত্তম সাহা
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

কিছু আগেই বড় একটি স্টেশন ছেড়ে এসেছে রাতের ট্রেন। সেখান থেকে নতুন ওঠা যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করে নিজের আসনে বসেছেন চিফ টিকিট পরীক্ষক (সিটিটিআই)। ট্রেনের এক হকার এসে জানান, অসংরক্ষিত কামরায় এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সম্ভবত তাঁর প্রসববেদনা উঠেছে। শুনেই অন্য যাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ওই মহিলাকে সংরক্ষিত কামরায় আনেন সিটিটিআই। যাত্রীদের মধ্যে থাকা এক নার্সের সাহায্যে সেখানেই পুত্রসন্তান প্রসব করেন ওই মহিলা।

প্রসবের পরেই ওই মহিলা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ট্রেনে থাকা এক চিকিৎসক তাঁকে দেখেন। সিটিটিআই বদরপুরে রেলের কন্ট্রোল রুমে গোটা বিষয়টি জানান। কিন্তু সেখানে কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। সব শুনে এগিয়ে আসেন অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশনমাস্টার (এএসএম)। নিজের আবাসন থেকে গরম জল, দুধ এবং অন্যান্য সামগ্রী আনেন তিনি। মহিলা কিছুটা সুস্থ হলে ট্রেনটি রওনা হয়।

দাওতোহাজা স্টেশনে বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গুয়াহাটি-শিলচর সাপ্তাহিক বিশেষ ট্রেনে। শুক্রবার ভোরে ট্রেনটি বদরপুরে পৌঁছলে প্রসূতি ও শিশুকে সেখানকার রেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রসূতির নাম পূজা গৌড়। হোজাই থেকে শিলচর যাবেন বলে একাই ট্রেনে উঠেছিলেন তিনি। হাসপাতাল থেকে তাঁর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল সুপার এস দেশমুখ জানান, কাছাড়ের মাসিসপুরের বাসিন্দা পূজা এবং তাঁর সন্তান ভাল আছেন। গত সপ্তাহেও ওই রুটে অন্য একটি চলন্ত ট্রেনে জন্ম হয় এক কন্যাসন্তানের।

টিকিট পরীক্ষক হিসেবে গুয়াহাটি-শিলচর সাপ্তাহিক বিশেষ ট্রেনে ছিলেন বদরপুরের সিটিটিআই জয়দীপ দে। ওই ট্রেনের বাতানুকূল কামরার টিকিট পরীক্ষার দায়িত্ব ছিলেন তিনি। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ তিনি কাজ শেষ করে নিজের জায়গায় বসে ছিলেন। শুক্রবার জয়দীপবাবু
জানান, দাওতোহাজা স্টেশনে ট্রেন থামলে ওই মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় এস-৮ সংরক্ষিত কামরায়। কাপড় দিয়ে ঘিরে আব্রুর ব্যবস্থা করা হয়। শম্পা বৈদ্য নামে এক যাত্রী-নার্স
প্রসব করাতে এগিয়ে আসেন। এসি কামরার যাত্রী বিকাশ নামে মেডিসিনের এক চিকিৎসক তাঁকে সাহায্য
করেন। নিশুত রাতে দাওতোহাজা স্টেশন এবং তার আশেপাশে দোকানপাট তখন বন্ধ। স্টেশনের এএসএম নিজের কোয়ার্টার থেকে গরম জল, দুধ-সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসেন। ট্রেনটি সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। প্রসূতি কিছুটা সুস্থ বোধ করার পরে ট্রেনটি ফের রওনা হয়। সিটিটিআই বলেন, ‘‘ট্রেনে নার্স ও চিকিৎসক থাকায় সুবিধে হয়েছে। সেই সঙ্গে সহযাত্রী এবং দাওতোহাজা স্টেশনের এএসএম পাশে দাঁড়ান।’’

রাতে মহিলার পরিচয় জানা যায়। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হয়ে সকালে তিনি নিজের পরিচয় দেন। জানা যায়, স্বামী সুনীল গৌড়ের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে থাকতেন পূজা। ঝগড়াঝাঁটির জেরে সুনীল মাস দুয়েক আগে তাঁকে ফেলে চলে আসেন বলে অভিযোগ। পরে একাই রওনা হন পূজা। শ্বশুরবাড়ি করিমগঞ্জ জেলার তিলভূমে। লামডিং পেরোতেই প্রসববেদনা শুরু হয় তাঁর। কালাচান্দ ও লাংটিং স্টেশনের মাঝামাঝি শিশুটির জন্ম হয়। চলন্ত ট্রেনে পৃথিবীর আলো দেখা শিশুটির নামকরণ নিয়ে জল্পনা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Spiritual Pregnancy Woman Delivery Baby Boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE