খুনের তদন্তে ‘স্নিফার ডগ’। রবিবার শিলচরে। স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
ফের জোড়া খুন শিলচর শহরে।
লিঙ্ক রোডে স্বামী-স্ত্রী খুনের পর আজ মা-ছেলের মৃতদেহ মিলল সেকেন্ড লিঙ্ক রোডে।
৪ বছরেও আগের ঘটনার কোনও সূত্র খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ। এ দিনও প্রাথমিক তদন্তের পর কিছু বলা সম্ভব হয়নি তাঁদের। গোয়েন্দা কুকুর আনা হয়েছিল, সে-ও ব্যর্থ।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের নাম শীলা দেব কানুনজ্ঞ এবং সৌমিত্র দেব কানুনজ্ঞ। ৭৯ বছরের শীলাদেবীর এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে জয়শ্রীর বিয়ে হয়েছে অনেক দিন। স্বামী সুধেন্দু দেবকানুনজ্ঞ চা বাগানে চাকরি করে অবসর নিয়েছিলেন। তিনিও ২০১১ সালে প্রয়াত হন। সেই থেকে বাড়িতে শুধু মা-ছেলেই থাকতেন। ৫৩ বছরের সৌমিত্র অবিবাহিত।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘরের মেঝেতে দু’টি মৃতদেহ প্রথম দেখতে পান বাড়ির পরিচারিকা হেনা সুত্রধর। অন্য দিনের মতো আজও তিনি সকাল ১১টা নাগাদ তাঁদের বাড়ি যান। দরজা খোলা ছিল। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন হেনাদেবী।
তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন পাড়াপড়শি। খবর দেওয়া হয় মেয়ে জয়শ্রী ও জামাতা দীপঙ্কর করকে। ছুটে যান ডিএসপি এস কে দাস-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার প্রেরণা শর্মাও ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর করেন।
তিনি জানান, ছেলের মাথার পিছনে তিনটি আঘাত রয়েছে। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান। মায়ের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে চোখ-মুখে ছিল কালশিটে। সম্ভবত বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে বৃদ্ধাকে।
রাতেই দুষ্কৃতীরা তাঁদের খুন করেছে, না আজ সকালে— তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। তাঁরা যে ঘুমিয়েছিলেন, বা ঘুমোতে যাচ্ছিলেন, বিছানায় মশারি লাগানো দেখে অনুমান করা যায়। আবার এমনও হতে পারে, ঘুম থেকে উঠেছেন মাত্র, বিছানা তোলা হয়নি তখনও। প্রথমে বিছানায় যে একপ্রস্থ ধস্তাধস্তি হয়েছে, তাও টের পাওয়া যায়। তদন্তকারীদের অনুমান, শেষে হয়তো মেঝেতে টেনে নামানো হয়।
কিন্তু কেন তাঁদের খুন করা হবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না বেসরকারি স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা জয়শ্রীদেবী বা গুরুচরণ কলেজের ইংরেজির শিক্ষক দীপঙ্করবাবু। জয়শ্রী বলেন, ‘‘গত কাল বিকেলেও মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’ কখনও কোনও ঘটনায় জীবনসংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেননি। তিনি পুলিশে এজাহার দিয়ে খুনিদের দ্রুত খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আর্জি জানিয়েছেন।
দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘শাশুড়ি বৃদ্ধ। তিনি খুন হবেন, ভাবা যায় না। শ্যালক সৌমিত্র ওরফে পিঙ্কুও ছিলেন নির্ভেজাল। শিল্প-সংস্কৃতি, নাটক নিয়েই ছুটোছুটি করতেন। সিল্কস্ক্রিন ও গ্রাফিকসের কাজে ছিলেন দক্ষ। শহরেরই এক ছাপাখানায় কাজ করতেন। তাঁর কোনও শত্রু থাকার কথা নয়।’’
সৌমিত্র দেব কানুনজ্ঞের বিরুদ্ধে অবশ্য সিবিআই আদালতে একটি মামলা চলছে। দূরদর্শনের ডকুমেন্টারি তৈরিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সরকারি-বেসরকারি কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নিয়মিত তাঁকে ওই মামলায় হাজিরা দিতে হতো। দীপঙ্করবাবুর বক্তব্য, ওই মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল। অর্থের প্রতি কোনও সময় তাঁর লোভ ছিল না। বরং অন্যের প্রয়োজনে ছুটোছুটিতেই বেশি আনন্দ পেতেন।
পুলিশ অবশ্য সিবিআই মামলার সঙ্গে এর সংশ্রব রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে। জমি দখলের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও মাথায় রাখছেন তাঁরা।
এলাকাবাসীও মা-ছেলেকে অত্যন্ত নিরিবিলি বলেই উল্লেখ করেন। তাঁদের আক্ষেপ, ধস্তাধস্তি, খুন, দু’জনের মৃত্যু ঘটে গেল— কিন্তু কেউ টের পেলেন না। তাঁরা জানান, আগে এলাকায় একটি পুলিশ পেট্রলিং-পোস্ট ছিল, কিন্তু এক সময় সেটি তুলে নেওয়া হয়। এলাকাবাসী পুলিশ চৌকি বসানোর দাবি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy