ছবি সংগৃহীত।
মহিলা পাইলটের সংখ্যায় বিশ্বে এক নম্বর জায়গাটা এখন ভারতেরই। দেশের বাণিজ্যিক উড়ানগুলির মোট বিমানচালকের ১২ শতাংশই মহিলা পাইলট। যা আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিগুণ। দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে জার্মানি-সহ পশ্চিমী দেশগুলি।
মহিলা পাইলটদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ উইমেন এয়ারলাইন পাইলটস’-এর তরফে এ কথা জানানো হয়েছে।
এও জানানো হয়েছে, ভারত-সহ বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই মহিলা পাইলটদের চাহিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ভারত-সহ প্রায় সব দেশেই সরকারি ও বেসরকারি স্তরে অভ্যন্তরীণ (ডোমেস্টিক) ও আন্তর্জাতিক (ইন্টারন্যাশনাল) বিমান ও বিমানযাত্রীর সংখ্যা গত ২০ বছরে বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। চলতি বছরের প্রথম অর্ধেই ভারতে বিমানযাত্রীর সংখ্যা কম করে ২২ শতাংশ বেড়েছে।
সেটা বিশ্বজুড়েই বাড়ছে বিমানের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায়। বিমানযাত্রার খরচ ও ধকল আগের চেয়ে অনেকটাই কমে যাওয়ায়। তার ফলে, আগামী ২০ বছরে গোটা বিশ্বে তাদের উড়ানগুলি চালানোর জন্য ৭ লক্ষ ৯০ হাজার পাইলট লাগবে ‘বোয়িং’ সংস্থারও।
আরও পড়ুন- যুদ্ধবিমানের ককপিট আজ তিন ভারত-কন্যারও
আরও পড়ুন- ফাইটার জেট চালাবেন মহিলা পাইলটরাও
মার্কিন মুলুকের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও লিঙ্গভিত্তিক গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক মারিয়া বুকুর বলছেন, ‘‘এই চাহিদা তখনই মেটানো সম্ভব, যদি পাইলটের পেশায় দ্রুত হারে আরও বেশি সংখ্যা নিয়ে আসা যায় মহিলাদের।’’
বাধা কমেছে, আগ্রহ বেড়েছে মহিলাদের
এটাও ঠিক, এই পেশায় মহিলাদের আসার আগ্রহও আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে।
তার নানা কারণও রয়েছে। দেশ-বিদেশের মহিলা পাইলটদের বক্তব্য, এই পেশায় আসার জন্য আগে মা, বাবা, অভিভাবকদের অনুমতি পেতে ঘাম ছুটে যেত মহিলাদের। বিমানে রাতে থাকতে হবে, দীর্ঘ সময় কাটাতে হবে আকাশে, থাকতে হবে পুরুষ বিমানকর্মীদের সঙ্গে, এই সব যুক্তিতে আগে মহিলারা পাইলট হওয়ার জন্য অনুমতি পেতেন না বাড়ি থেকে।
কিন্তু সেই সমস্যা এখন অনেকটাই কমেছে। তার অন্যতম কারণ, বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ বিমানেই এখন মহিলা পাইলটদের রাতে ডিউটি করতে হয় না। বিমানে মহিলা পাইলটদের নিরাপত্তাও আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে ডিউটিতে আসা ও ডিউটি শেষ হওয়ার পর তাঁদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য দেওয়া হয় গাড়ি। সঙ্গে দেওয়া হয় সশস্ত্র দেহরক্ষী। এটা ২০১২ সালে নির্ভয়াকাণ্ডের পর শুরু হয়েছে।
তবে এই সবের চেয়েও যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, যে গুটিকয়েক পেশায় এখন পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের বেতন-বৈষম্য প্রায় নেই বললেই চলে, মহিলা পাইলটদের পেশা তাদের অন্যতম। উড়ান-ভাতা (ফ্লাইং অ্যালাওয়েন্স)-সহ এক জন মহিলা পাইলট এখন তাঁর চাকরি জীবনের শুরুতেই মাইনে পান ২৫ হাজার থেকে ৪৭ হাজার ডলার পর্যন্ত। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়ানের তারতম্যে এইটুকুই ফারাক হয় মহিলা পাইলটদের প্রাথমিক বেতনে।
গর্ভবতী অবস্থায় তাঁদের আকাশে উড়তে হয় না। দেওয়া হয় গ্রাউন্ড ডিউটি। গর্ভবতী মহিলা পাইলটদের ওই সময় বিমানবন্দরেই নানা রকমের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর ফলটা বোঝা যাচ্ছে কী ভাবে?
বেসরকারি সংস্থা ‘ইন্টারগ্লোব অ্যাভিয়েশন লিমিটেড’-এর চালানো ‘ইন্ডিগো’র বিমানগুলিতে এই মুহূর্তে মোট পাইলটের ১৩ শতাংশই মহিলা। যা পাঁচ বছর আগে ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। আর সেই মহিলা পাইলটরা কেউই সাধারণ স্তরের কর্মচারী নন। ইন্ডিগোর মোট ৩৩০ জন মহিলা পাইলটের সকলেই ম্যানেজার পর্যায়ের।
আরেকটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ‘স্পাইসজেট’-এর মোট পাইলটের ১২ শতাংশই মহিলা। সংস্থার চেয়ারম্যান অজয় সিংহ জানিয়েছেন, ওই মহিলা পাইলটদের অনেকেই বিভাগীয় প্রধান। আগামী ৩ বছরে তাঁর সংস্থায় মহিলা পাইলটের সংখ্যা বাড়বে আরও ৩৩ শতাংশ। মাসে সর্বাধিক কতটা সময় আকাশে উড়তে হবে, মহিলা পাইলটদের জন্য সেই সময়সূচিও আগে বেঁধে দেওয়া হয়। ফলে, পারিবারিক বা অন্যান্য কারণে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে না ‘স্পাইসজেট’-এর মহিলা পাইলটদের।
কিন্তু এই সবই তো বিমান সংস্থাগুলির কর্তাদের দাবি।
কী বলছেন মহিলা পাইলটরা?
দেশের অন্যতম বেসরকারি বিমানসংস্থা ‘জেট এয়ারওয়েজ লিমিটেড’-এর পাইলটদের সিনিয়র ট্রেনার শ্বেতা সিংহ জানাচ্ছেন, ২০ বছর আগে এই পেশায় আসার জন্য পারিবারিক অনুমতি আদায় করতে তাঁকে যথেষ্টই অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। কারণ, মহিলা পাইলটদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব ও রাতের উড়ান শিডিউল।
শ্বেতার কথায়, ‘‘ওই সময় এই পেশাটা ছিল পুরোপুরি পুরুষদের নিয়ন্ত্রণে। সে বড়ই কঠিন সময়। আমাকে খুব লড়তে হয়েছিল।’’
তবে সব সমস্যাই মিটে গিয়েছে বলে মনে করছেন না ইন্ডিগোর ৩৭ বছর বয়সী মহিলা পাইলট রুপিন্দর কউর। তাঁর কথায়, ‘‘যাবতীয় পারিবারিক চাহিদা, প্রয়োজন মেটানোর পরেও এই পেশায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এখনও মহিলাদের ২০০ শতাংশ দিতে হয়।’’
তাঁর ইঙ্গিত, বেতনবৃদ্ধি, প্রমোশনের ক্ষেত্রে এ দেশে লিঙ্গবৈষম্য এখনও রয়েছে এই পেশায়।
কী বলছে ম্যাকিনসে রিপোর্ট?
ম্যাকিনসে রিপোর্ট জানাচ্ছে, ভারতের মোট কর্মীসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ মহিলা কর্মী। আর দেশের জিডিপি-বৃদ্ধির ১৮ শতাংশই হয়েছে মহিলাদের দৌলতে। ওই রিপোর্ট এটাও জানিয়েছে, মহিলা কর্মীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ানো সম্ভব হলে দেশের জিডিপি আরও ১৮ শতাংশ বাড়ানো যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy