Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ এক্স রে থেকে সিটি স্ক্যান, ধুবুরি হাসপাতাল নিয়ে ক্ষোভ

অসমের পশ্চিম প্রান্তের ধুবুরি জেলা সদর হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন প্রায় ১৭ লক্ষ বাসিন্দা। কিন্তু প্যাথলজি এবং রেডিওলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে বন্ধ হয়ে রয়েছে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রা সোনোগ্রাফি থেকে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা।

ধুবুরির এই হাসপাতাল নিয়েই ক্ষোভ।— নিজস্ব চিত্র।

ধুবুরির এই হাসপাতাল নিয়েই ক্ষোভ।— নিজস্ব চিত্র।

রাজীব চৌধুরী
ধুবুরি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:৪১
Share: Save:

অসমের পশ্চিম প্রান্তের ধুবুরি জেলা সদর হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন প্রায় ১৭ লক্ষ বাসিন্দা। কিন্তু প্যাথলজি এবং রেডিওলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে বন্ধ হয়ে রয়েছে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রা সোনোগ্রাফি থেকে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা। রোগীদের এই পরীক্ষাগুলি করানোর জন্য যেতে হচ্ছে হয় কোচবিহার নয়তো গুয়াহাটি। গুয়াহাটি যেতে লাগে ৫ ঘণ্টা। কোচবিহারও আড়াই ঘণ্টার ধাক্কা। অসুস্থ রোগীকে নিয়ে অত দূর যাতায়াতের ধকল সামলানো কঠিন। তাই বেশিরভাগ রোগীই কাছাকাছি বেসরকারি সংস্থাতে পরীক্ষাগুলি করিয়ে নেন। তাতে যাতায়াতের সময় ও ধকল বাঁচে। কিন্তু খরচ অনেক বেড়ে যায়ধুবুরির বাসিন্দা তপন সাহা বলেন, ‘‘স্রেফ হাসপাতালের গাফিলতিতে চিকিৎসার খরচ দ্বিগুণ-তিন গুণ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাই ভয় লাগে।’’ ধুবুরি শহরের তিন নম্বর বালুচরের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী রাজা পাল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘এই হাসপাতালটি মেঘালয় ও অসমের বহু মানুষের ভরসা। কোচবিহারের তুফানগঞ্জেরও অনেকে এখানেই আসেন। অথচ হাসপাতালটির পরীক্ষার ব্যবস্থা কেন যে উন্নত হচ্ছে না, কে জানে।’’ রাজাবাবুর দাবি, ‘‘হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা ভাল না থাকায় বেসরকারি ল্যাবোরেটরিগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে।’’ তবে স্থানীয় একটি এমনই বেসরকারি ল্যাবোরেটরির মালিকের বক্তব্য, সব জায়গাতেই কোনও বড় হাসপাতালকে ঘিরে প্যাথোলজির ল্যাব বা ওষুধের দোকান গড়ে ওঠে। এখানেও তার অন্যথা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালে পরীক্ষার যন্ত্র বন্ধ থাকায় অনেকেই আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা কোনও অসাধু পথে ব্যবসা করছি।’’ ধুবুরির বিধায়ক জাহানউদ্দিন জানান, “ধুবুরি সদর হাসপাতালের সমস্যার কথা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের পদস্থ কর্তাদের কাছে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান ঘটবে।”

হাসপাতালটিতে ২০০টি শয্যা। রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। জেলার বিলাসীপাড়ার বাসিন্দা তথা সমাজসেবক বাবলা দাস, গৌরীপুরের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক মনোয়ার সরকারও দাবি করেন, এই হাসপাতালে পরিষেবা ঠিক মতো না থাকলে একটি বিরাট অংশের মানুষ যে বঞ্চিত হচ্ছেন, সে কথা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বুঝতে পারছেন না। মনোয়ারবাবু বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে যাঁরা আসেন, তাঁদের অনেকেই অত্যন্ত গরিব। তাই আরও গুরুত্ব তো এখানে দেওয়া দরকার।’’

ধুবুরি সদর হাসপাতালের সুপার হারুন আল রসিদ জানিয়েছেন, “২০১৪ সালের ১ মার্চ হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট চিকিৎসককে বদলি করে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন কাউকে সেই জায়গায় নিয়োগ করা হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কোন ফল হচ্ছে না।”

এ ছাড়াও ধুবুরি সদর হাসপাতালে রয়েছে অন্য সমস্যাও। পরিকাঠামো অনুযায়ী ২০০টি শয্যাযুক্ত একটি সদর হাসপাতালে কম করেও ৫৭ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহুর্তে ধুবুরি সদর হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ২২ জন চিকিৎসক। শুধু তাই নয় নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কম রয়েছে। ফলে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রুগীরা সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছে না।

জেলার যুগ্ম স্বাস্থ্য আধিকর্তা ডা: সুশীল দাস জানান, “হাসপাতালে প্যাথোলজি এবং রেডিওলোজিস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার পাশাপাশি অন্য বিভাগের চিকিৎসক এবং নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও কম। আমি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোন উত্তর পাইনি।”

এই অবস্থায় ধুবুরি সদর হাসপাতালে সমস্যা সামনে রেখে বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলিও।

বিজেপির ধুবুরি জেলার সভাপতি দীপক সাহা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে জেলা জুড়ে আন্দোলনে নামা হবে। ওই একই সুরে সুর মিলিয়েছে অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদও। পরিষদের ধুবুরি জেলা সমিতির সভাপতি টুনু বর্ধনও জানান, অবিলম্বে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE