ক্ষমতায় না থেকে ক্ষমাশীল কমিউনিস্ট।
বিরোধিতার শাস্তি বুলেটেই দিতে পছন্দ করতেন যোশেফ স্তালিন। সে না হয় অনেক আগের কথা। বামফ্রন্ট জমানাতেই ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা।
আজ সেই সিপিএম নেতৃত্বই ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির বিরোধিতা করল। ১৯৯৩-এর মুম্বইতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রী ইয়াকুবের ৩০ জুলাই ফাঁসি নির্ধারিত। সিপিএম পলিটব্যুরোর দাবি, রাজীব গাঁধীর হত্যায় দোষী সাব্যস্তদের ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন হয়েছে। ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষা মঞ্জুর করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হোক।
হৃদয় পরিবর্তনের কারণ? সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তি, দু’বছর আগে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেই ঠিক হয়েছে, তাঁরা আর প্রাণদণ্ডের পক্ষে নন। নারকীয় অপরাধের ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ডই সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। আজমল কাসভ ও আফজল গুরুর ফাঁসির পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয় পার্টি। বামপন্থী চিন্তাবিদ, মানবাধিকার সংগঠনগুলির চাপ ছিলই। কোনও নিয়ম না মেনে, খেয়ালখুশি মতো এ দেশে ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয় বলেও সিপিএম নেতাদের মত। কিছু দিন আগেই আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ পি শাহ মন্তব্য করেছিলেন, এ দেশে গরিবদেরই ফাঁসি হয়। বড়লোকদের হয় না। সিপিএম নেতারাও সেই মতের শরিক। তাঁদের যুক্তি, অধিকাংশ উন্নত দেশ থেকেই প্রাণদণ্ড উঠে গিয়েছে।
নিন্দুকরা বলছেন, সরকারে থাকলে খুনি-ধর্ষণকারী বা সন্ত্রাসবাদীদের ফাঁসিতে ঝোলানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ক্ষমতার বাইরে থাকলে মৃত্যদণ্ডের বিরোধিতা করে প্রগতিশীল অবস্থান নেওয়া সহজ। কমিউনিস্ট চিনে প্রাণদণ্ডের হার এখন অনেক কমেছে ঠিকই। কিন্তু দুর্নীতি বা ড্রাগ পাচারের মতো অপরাধেও চিনে আকছার প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়। কিউবায় একসময় প্রাণদণ্ড তুলে দেওয়া হয়েছিল। অনেকের প্রাণভিক্ষা মঞ্জুর হয়েছিল। এখন রাউল কাস্ত্রোরা আবার প্রাণদণ্ড ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। সিপিএম নেতাদের দাবি, সামগ্রিক ভাবে কমিউনিস্ট দেশগুলিতেও এখন প্রাণদণ্ড তুলে দেওয়ার দিকেই ঝোঁক।
ইয়াকুবের ফাঁসি হলে তা ন্যায়সঙ্গত হবে না বলে মনে করছে পলিটব্যুরো। কারণ ইয়াকুব ষড়যন্ত্রে ছিল ঠিকই। কিন্তু সে আত্মসমর্পণ করেছে। নিজে কাঠগড়ায় উঠেছে। পরিবারের লোকেদেরও দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে কাঠগড়ায় হাজির করেছে। পাকিস্তানের কারা কারা ওই হামলায় জড়িত ছিল, কারা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিয়েছিল, সেই তথ্য দিয়েছে ইয়াকুব। সেই হিসেবে ইয়াকুব ভারত সরকারের হাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র সাক্ষী। অথচ বাকিরা যখন গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, তখন ইয়াকুবকেই ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy