Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
৬০০ কোটি নিয়ে মামলা
Yes Bank

৪৪ সংস্থার ঋণে ঘুষ কত, তদন্তে ইডি-সিবিআই

সিবিআই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, ঘুষ নেওয়া, ঘুষ দিতে চাপ, অপরাধমূলক আচরণের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে ১২ জন ব্যক্তি ও সংস্থার নামে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ০৪:০৩
Share: Save:

ইয়েস ব্যাঙ্কের সিন্দুক থেকে ডিএইচএফএল-কে ৩৭০০ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন রাণা কপূর। বিনিময়ে ৬০০

কোটি টাকা ঘুষ বা ‘কিকব্যাক’ নিয়েছিলেন বলে এফআইআর-এ অভিযোগ তুলেছে সিবিআই। একই ভাবে অনিল অম্বানী গোষ্ঠীকে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, সুভাষ চন্দ্রের এসেল গোষ্ঠীকে ৮৪০০ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়েও রাণা ঘুষ নিয়েছিলেন কি না, তার তদন্তে নামছে সিবিআই ও ইডি।

মূলত বিপুল অনাদায়ী ঋণের ধাক্কাতেই ইয়েস ব্যাঙ্ক ডুবতে বসেছিল।

এর মধ্যে ১০টি বড় মাপের গোষ্ঠীর অন্তত ৪৪টি সংস্থার ঘরে ৩৪ হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ পড়ে রয়েছে। শোধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই জেনেও ইয়েস ব্যাঙ্ক এই সব ঋণ মঞ্জুর করেছিল। সবটাই হয় ইয়েস ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রাক্তন সিইও রাণার আমলে।

সিবিআই, ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের মতে, ধার শোধ না-করার ঝুঁকি সত্ত্বেও তাঁর ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমজনতার সঞ্চয়ের টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাণা। কায়েমি স্বার্থ ছাড়া এর পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে না। তাই এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঋণ মঞ্জুরের বিনিময়ে রাণা ঘুরপথে ঘুষ নিয়েছিলেন কি না, তার তদন্ত হবে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অনিল অম্বানী, সুভাষ চন্দ্রের মতো শিল্পপতিদের সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত আদৌ কতটা এগোবে, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে বিরোধী শিবিরের।

সিবিআই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, ঘুষ নেওয়া, ঘুষ দিতে চাপ, অপরাধমূলক আচরণের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে ১২ জন ব্যক্তি ও সংস্থার নামে। তাতে নাম রয়েছে রাণা কপূর, স্ত্রী বিন্দু রাণা কপূর, তিন কন্যা রাখি, রাধা ও রোশনি কপূর, ডিএইচএফএল-এর মালিক কপিল ও ধীরজ ওয়াধওয়ান, ডিএইএচএফএল, ডুইট আরবান ভেঞ্চার্স, আরএবি এন্টারপ্রাইজ, মর্গান ক্রেডিটস প্রাইভেট লিমিটেড, আরকেডব্লিউ ডেভেলপার্স-এর।

এফআইআর অনুযায়ী, ২০১৮-র এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্ক ডিএইএচএফএল (দেওয়ান হাউসিং ফিনান্স কর্পোরেশন লিমিটেড) সংস্থায় ৩৭০০ কোটি টাকা ডিবেঞ্চার হিসেবে লগ্নি করে বা শর্ত ছাড়াই ঋণ দেয়। ডিএইচএফএল-এর অন্যতম মালিক কপিল ওয়াধওয়ান এর বিনিময়ে রাণা ও তাঁর পরিবারকে ৬০০ কোটি টাকা ঘুষ দেয়। আবাসন তৈরির ঋণের মোড়কে এই ঋণ দেওয়া হয় ডুইট আরবান ভেঞ্চার্সকে। যার মালিক রাণার তিন মেয়ে। এই সংস্থাটি আবার আরএবি এন্টারপ্রাইজের শাখা সংস্থা। যার মালিক রাণার স্ত্রী বিন্দু কপূর। ঋণের বিনিময়ে যে জমি বন্ধক রাখা হয়েছিল, তার দাম খুবই সামান্য। ডিএইচএফএল ওই ৩৭০০ কোটি টাকা ইয়েস ব্যাঙ্ককে শোধ করেনি।

এফআইআর বলছে, ইয়েস ব্যাঙ্ক একই সঙ্গে ডিএইচএফএল-এর আর এক মালিক ধীরজ ওয়াধওয়ানের সংস্থা আরকেডব্লিউ ডেভেলপার্সকে ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এই আরকেডব্লিউ-র সঙ্গেই ডি-কোম্পানির ইকবাল মেমন ওরফে ইকবাল মির্চির লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। ইয়েস ব্যাঙ্ক তাদের ঋণ দিয়েছিল মুম্বইয়ের বান্দ্রা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য। কিন্তু আরকেডব্লিউ বান্দ্রায় কোনও লগ্নি করেনি। পুরোটাই ওয়াধওয়ানরা নিজেদের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেয়।

ইডি কর্তাদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইয়েস ব্যাঙ্কের খাতায় ১০টি বড় গোষ্ঠীর ৪৪টি সংস্থার ঋণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অনিল অম্বানী গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়া দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, এসেল গোষ্ঠীকে ৮৪০০ কোটি টাকা, ডিএইএচএফএল-কে ৪৭৩৫ কোটি টাকা, আইএল অ্যান্ড এফএস-কে ২৫০০ কোটি টাকা, জেট এয়ারওয়েজকে ১১০০ কোটি টাকা, কেরকার গোষ্ঠীর কক্স অ্যান্ড কিং ও গো ট্রাভেলসকে ১০০০ কোটি টাকা, ভারত ইনফ্রা, ম্যাকলয়েড রাসেল আসাম টি, এভারেডি-কে ১২৫০ কোটি টাকা ও থাপার গোষ্ঠীর সি জি পাওয়ারকে দেওয়া ৫০০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, মূলত এই ১০টি গোষ্ঠীর ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ শোধ না-হওয়াতেই ডুবতে বসেছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Yes Bank CBI ED Rana Kapoor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE