Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিমানবন্দরে যুবক কী করে, জানে না বাহিনী

প্রশ্ন উঠেছে, এক সাধারণ যুবক যদি এ ভাবে দেওয়াল টপকে বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে আসতে পারেন, তা হলে যাত্রী-সহ কোনও বিমানকে উড়িয়ে দেওয়াও কি সম্ভব নয় জঙ্গিদের পক্ষে?

মুম্বই বিমানবন্দর। ফাইল চিত্র।

মুম্বই বিমানবন্দর। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৫
Share: Save:

দেশের কোনও বিমানবন্দরে নিরাপত্তার এত বড় গাফিলতি সাম্প্রতিক অতীতে চোখে পড়েনি। গত ২২ অগস্ট একজন যুবক মুম্বই বিমানবন্দরের দেওয়াল টপকে শুধু ঢুকেই পড়েননি, বেশ কয়েক মিনিট ঘাসের জঙ্গল দিয়ে হেঁটে চলে এসেছিলেন রানওয়ের কাছে ট্যাক্সিওয়েতে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিমানের পাইলট পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিও করে রাখেন। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।

প্রশ্ন উঠেছে, এক সাধারণ যুবক যদি এ ভাবে দেওয়াল টপকে বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে আসতে পারেন, তা হলে যাত্রী-সহ কোনও বিমানকে উড়িয়ে দেওয়াও কি সম্ভব নয় জঙ্গিদের পক্ষে? মুম্বই বিমানবন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে, গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

ঘটনার দিন স্পাইসজেটের বেঙ্গালুরুগামী বিমান রানওয়েতে ঢুকছিল। যুবকটি চলে আসেন বিমানের নীচে। দূর থেকে যুবককে আসতে দেখে পাইলট বিমানের দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন। নয়তো ইঞ্জিনের টানে যুবকের দেহ কয়েক টুকরো হয়ে যেতে পারত। পরে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-এর জওয়ানেরা যুবকটিকে পাকড়াও করেন। জানা যায়, তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন। তাঁকে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিআইএসএফ-এর এক কর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। সিআইএসএফ-এর একাধিক জওয়ানকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ডও করা হতে পারে। পাশাপাশি, পাঁচিলের যে দিকে শহর, সে দিকে পুলিশি টহল বাড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

মুম্বই বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমানবন্দরের চারপাশে আন্ধেরি, মারোল, কুরলা ও কলিনা রয়েছে। সে দিন যুবকটি কুরলা ও কলিনার মাঝখানের প্রায় ৮ ফুট উঁচু দেওয়াল টপকে ঢুকেছিলেন। কী করছিল সিআইএসএফ? জানা গিয়েছে, দেওয়ালের ভিতরের দিকে বেশ কিছু দূর অন্তর ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। তার মাথায় উঠে অহরহ নজরদারি চালানোর কথা জওয়ানদের। সে দিন যুবকের দেওয়াল টপকানোর ঘটনা তাঁদের নজর এড়িয়ে যায়। দুই ওয়াচ টাওয়ারের মাঝে হেঁটেও টহল দেওয়ার কথা জওয়ানদের। কিন্তু, যুবকের গতিবিধি তাঁদেরও নজর এড়িয়ে যায়।

সিআইএসএফ-এর পাল্টা যুক্তি, দেওয়ালের বাইরের দিকে পর পর বস্তি। সেখানে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বাস। সেই সব ঘরের ছাদে উঠে যে কোনও সময়ে দেওয়াল টপকে যাওয়া যায়। বাইরের গাছে উঠেও অনায়াসে দেওয়াল টপকে আসা যায়। তবে, প্রথম দেওয়াল টপকানোর পরে আরও একটি দেওয়াল রয়েছে। সিআইএসএফ-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘দ্বিতীয় দেওয়াল টপকানো তুলনায় সহজ। এর নীচের দিকে নিকাশি নালা রয়েছে। কেউ চাইলে সেখান দিয়েও ঢুকে আসতে পারে।’’ কিন্তু, বিমানবন্দরের চৌহদ্দির মধ্যে সেই যুবক ঢুকে যাওয়ার পরেও কেন তাঁদের নজরে এল না, তার কোনও সদুত্তর নেই নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে।

আরও প্রশ্ন, দ্বিতীয় দেওয়াল থেকে রানওয়ে দূরত্ব প্রায় ১০০ মিটার। ওই পথ পেরোতে প্রায় বেশ কয়েক মিনিট সময় লাগার কথা। এক যুবক সেখান দিয়ে হেঁটে চলে এল, তা-ও নজরে পড়ল না কেন নিরাপত্তারক্ষীদের? মুম্বই বিমানবন্দরে কর্মরত সিআইএসএফ-এর এক অফিসারের যুক্তি, ওই ঘাস-জঙ্গল এলাকায় সাধারণ পোশাকে অনেক লোক ঘুরে বেড়ান। তাঁদের মধ্যে কেউ পাখি তাড়ানোর কাজে যুক্ত, কেউ ঘাস কাটার কাজে যুক্ত, কেউ ছোটখাটো বিদ্যুৎ লাইন সারাই ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত। দূর থেকে কাউকে আলাদা করা সম্ভব নয়। ফলে, ওই যুবকের হেঁটে আসা যদি সে দিন সিআইএসএফ-এর নজরেও এসে থাকে, তা নিয়ে সন্দেহ হয়নি কারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mumbai Airport Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE