২৬/১১-র পর এ বার কন্দহর কাণ্ডের অনুকরণে হামলার আশঙ্কায় তোলপাড় দেশ!
দিন কয়েক আগেই মুম্বইয়ের ২৬/১১ হামলার ধাঁচে জলপথে পাক জঙ্গিদের হামলার ছক ভেস্তে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। আজ ভারতীয় গোয়েন্দারা জানান, ১৯৯৯ সালে যে ভাবে কাঠমান্ডুু থেকে দিল্লিগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান অপহরণ করে কন্দহরে নিয়ে গিয়েছিল হরকত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গিরা, এ বার সেই একই কায়দায় আকাশপথে দিল্লি থেকে কাবুলগামী বিমান ছিনতাইয়ের ছক কষছে জঙ্গিরা।
শনিবার কলকাতায় এয়ার ইন্ডিয়ার দফতরে একটি উড়ো ফোন আসে। ঝরঝরে বাংলাতেই ও-পারের কণ্ঠ জানায়, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে জঙ্গিদের। সেই ফোনের সূত্র ধরে আজ রাতে বনগাঁর এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, প্রশান্ত বিশ্বাস নামে ওই যুবক জানিয়েছে, মজা করার জন্যই সে হুমকি-ফোন করেছিল। যদিও তার আগে পর্যন্ত তোলপাড় চলে গোটা দেশে। এবং যুবকটি ধরা পড়ার পরেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না কেন্দ্র। তাই আপাতত বজায় রাখা হচ্ছে বিভিন্ন বিমানবন্দরের বাড়তি নিরাপত্তা। গোটা বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত কাল বিমান ছিনতাইয়ের হুমকির খবর পাওয়া মাত্রই জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী ও বিমান মন্ত্রকের কর্তারা। চিহ্নিত করা হয় স্পর্শকাতর বিমানবন্দরগুলিকে। সাম্প্রতিক কালে এ দেশে জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত যা যা তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে তা নিয়ে রাতভর চলে বিশ্লেষণ। তার পরে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লি-কাবুল বিমানটিকে প্রাথমিক ভাবে নিশানা করেছে জঙ্গিরা। যাত্রী সেজে উঠে বিমানটি ছিনতাইয়ের ফন্দি এঁটেছে তারা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিগামী আইসি-৮১৪ বিমানটি ছিনতাই করে অমৃতসর-লাহৌর-দুবাই হয়ে শেষ পর্যন্ত তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের কন্দহরে নামায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। সে ক্ষেত্রেও ছিনতাইকারীরা যাত্রী সেজে কাঠমান্ডুু বিমানবন্দর থেকে বিমানে ওঠে। সাত দিন দর কষাকষির পরে ভারতীয় জেলে বন্দি মৌলানা মাসুদ আজাহার-সহ তিন জঙ্গির মুক্তির বিনিময়ে ছাড়া পান বিমানের ১৯০ জন যাত্রী। তবে কন্দহর-কাণ্ডের পর ২০০১ সালে ৯/১১-এর মতো ঘটনা ঘটেছে। তার পরে বিমান ছিনতাইয়ের আশঙ্কা এবং উদ্বেগ জনমানসে অন্য মাত্রা নিয়েছে। যেখানে শুধু ছিনতাই নয়, বরং সেই বিমানকে ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ব্যবহার করে জঙ্গিরা ধূলিসাৎ করে দেয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। ওই ঘটনা সারা বিশ্বে বিমান অপহরণের আতঙ্ক অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে।
চলতি মাসেই ভারতে আসছেন বারাক ওবামা। ইতিমধ্যেই তাঁর সফরকালে বড় মাপের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে ভারতীয় এবং মার্কিন গোয়েন্দারা। তার মধ্যেই গত কাল বিমান অপহরণের উড়ো ফোনে স্বাভাবিক ভাবেই আশঙ্কার পারদ চড়েছে। সম্প্রতি গুজরাত উপকূল দিয়ে জঙ্গিদের ভারতে প্রবেশের চেষ্টার যে দাবি ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী করেছে, তাতে আশঙ্কা বাড়তি মাত্রা পেয়েছে। ফলে, উড়ো ফোনের খবর পাওয়া মাত্রই দেশের সমস্ত ছোট-বড় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। দিল্লি, কলকাতা বা মুম্বইয়ের পাশাপাশি কড়া নজরদারির নির্দেশ পৌঁছেছে পটনা, রাঁচি, রায়পুরেও।
জঙ্গিদের যাত্রী সেজে বিমানে ওঠার সতর্কতার কথা মাথায় রেখে বেড়েছে যাত্রীদের তল্লাশিও। নিয়মমাফিক তল্লাশির পর বিমানে ওঠার সময়ও এক প্রস্ত তল্লাশির নির্দেশ দিয়েছে বিমান মন্ত্রক। যাত্রীদের ‘স্ক্রিনিং’ করা ব্যাগ বিমানে ওঠানোর আগে আর এক প্রস্ত তল্লাশি করতে বলা হয়েছে বিমানকর্মীদের। প্রয়োজনে মার্শালের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কোনও যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক হলে তা পাইলটকে জানাতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে তল্লাশির আওতায় আনা হয়েছে বিমানবন্দরে কর্মরতদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy